| |

সন্দেহ বসে স্বামীকে তালাক দিয়ে,
স্ত্রী এখন কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন ।
পাশে নেই কেউ!


মো: রেজাউল করিম মৃধা।

ছিল এক সুখের সংসার, স্বামী আর মাত্র দুটি মেয়ে।

কত আনন্দ আল্লাদে দিন কেঁটে যায় । দুটি মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় ইতালীর এতদিনের সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে আসেন লন্ডনে।

এখানে এসেও চলে যাচ্ছিল সুখে শান্তিতে।

মেয়ে দুটিকে লন্ডনে দুটি নামকরা স্কুলে ভর্তি করেন।

স্বামী ট্যাক্স করে আয় রোজগার ও ভালই হচ্ছে। সব মিলে এক সুখের সংসার। বড় মেয়ে সেন্ট পল্সওয়ে সেকেন্ডারি স্কুলে আর ছোট মেয়ে প্রাইমারি স্কুলে । স্বামী রাতে ট্যাক্স করে আসে তাই স্ত্রী মেয়ে স্কুলে দিয়ে আসে এবং নিয়ে যাওয়া আসার সুবাদেই পরিচয় হয় অন্য ভাবীদের সাথে।

ভাবীদের সাথে পরিচয় কথাবার্তা উঠে আসে সংসারের কথা ।সবার সংসারের সুখদুঃখের কথা শুনে নিজে হয়তো বা অসহায় মনে করেছে। অন্যদের সুখের কথায় নিজের সুখের কথা ভুলে যায়।

সুখের সংসারে স্বামীর প্রতি নেমে আসে স্বন্দেহ ।যা সুখের সংসারে নেমে আসে অসনি সংকেত। স্বামী রাতে বাসায় ফিরলেই শুরু হয় ঝগড়া। একদিন দুদিন চলে দিনের পর দিন। এর মাঝে উৎসাহ জোগায় ভাবীরা , ভাবীরা বলেন “আপনার স্বামী যদি আপনাকে আবার বকা ঝকা করে তবে সোজা সোসাল সার্ভিসে ফোন করবেন।এখানে সবাই সমান বরংচ আপনার পয়সায় আপনার সংসার চলে ।”

এ বুদ্ধি পেয়ে মহিলা তো এখন কাউকে কেয়ার করে না স্বামী সন্তান তো নয়ই এমন কি দেশে বাবা মাকে ও নয়। এরই মাঝে ঝগড়া হলে কাউন্সিলের সোসাল সার্ভিস এসে স্ত্রীকে সহযোগিতা আশ্বাস দেওয়াতে এর মাত্রা আরো বেড়ে যায়।ঝগড়া হলেই মুখের উপর বলে দিতো “তোমারটা কি আমি খাই । আমি সরকারের টা খাই।”

একবার ও চিন্তা করে নাই এখানে আসার আগে ইতালিতে কত কঠিন কঠোর পরিশ্রম করে নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।ইতালী পাসপোর্ট নেওয়া ও যে অতি সহজ নয় , সেটা সবার জানা। পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ।কমপক্ষে ১০ বছর থাকার পর শুধু থাকা নয় লিগেল ভাবে কাজ করে এর আবেদন এর পর ও লেগে যায় ২/৩ বছর । এত কস্টের পর যখন এলো লন্ডন । তখন ভাবীদের আড্ডায় হয়ে গেল সব লন্ডভন্ড ।

দেশের বাবা মা আত্বীয় স্বজন কাউকে তুয়াক্কা না করে নিজের সিদ্ধানের প্রতি অটল এবং ভাবীদের আশকারাতেই স্ত্রী হয়ে উঠে আরো সাহসী , স্বামীকে আর ভালো লাগেনা ,স্বামীর কোন কিছুকেই মেনে নিতে নারাজ এমন কি দুটি ফুটফুটে মেয়ের কথা ও তার মাথায় নেই । শুধুই সন্দেহ আর সন্দেহ ।

এদের ঝগড়ার কথা দেশের আত্বীয় স্বজন সবাই অবহিত। মিমাংসার চেস্টা করেও ব্যার্থ।

একদিন ঝগড়ার মাঝে স্বামী অসয্য হয়ে হাত তোলে

স্ত্রীর গায়ে। মেঘ না চাইতেই বৃস্টি । স্ত্রী মনে হয় এদিনটির অপেক্ষায়ই ছিলেন। সাথে সাথে সোসাল সার্ভিসে ফোন। কাজ হয়ে গেল স্ত্রীর। কপাল খুলে না কি পুড়ে গেল?

আপাতত স্ত্রী তো মহা খুসি। স্ত্রী পাশে সবাই স্বামী বেচারা এক অসহায়। পাশে নেই কেউ। শুধুই অন্ধকার। বন্ধু বান্ধব আত্বীয় স্বজনের কাছে তিনি আজ তিরোস্কারের পাত্র।

সোসাল সার্ভেসের লোকের সহযোগিতায় গড়ায় কোর্ট পর্যন্ত । কোর্ট রায় দেয় স্ত্রীর পক্ষে । মেয়েদের জিগ্গাসা করে মতামত নেওয়া হয় মেয়েরা মায়ের সংগে থাকার কথা অনুমতি পায়।মা মেয়েরা মহা খুসি।

কিন্তু স্বামী বেচারা অসহায় । কেউ নেই তার পাশে। কোর্ট এর রায় স্বামীকে একাকিত্ব করেতোলে। অসহায় স্বামী দিশেহারা যে দিকে চায় । শুধু ধূ ধূ বালুকনা। বাসাটি ছেড়ে দিতে হয়। স্ত্রীকে সোসাল থেকে দু বেডরুমের বাসা দেয় কেন্টের এক নির্জন এলাকায়।

আহারে বেঁচারা স্বামী কোথাও থাকার জায়গা নেই ।

গাড়ীতে কেটে যায় কত রাত! কি অসহনীয় জীবন । দুদিন আগেও সুখের সংসার আর আজ সহায় সম্বল হীন এক অভাগা মানুষ।

কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে?

এক বন্ধুর সহযোগিতায় এক মেসে উঠে। অসহয়ত্ব ভুলে কাজে মনোযোগ দেয়। আস্তে আস্তে ফিরে ফিরে আসতে থাকে স্বাভাবিক জীবনে।দেশে বাবা মা আত্বীয় স্বজনদের সাথে কথা বলেন । ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন আরো স্বাভাবিক । এদেশের কোর্ট এর নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন দেখা করার সুযোগ হয় মেয়েদের সাথ।সেই একটি দিনের জন্য স্বামীর আগ্রহের শেষ নেই। কখন দেখা হবে আদরের মেয়েদের সাথে।

এবার স্ত্রী বেচারি স্বামীর সাথে কতইনা সুখে ছিল।

সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। কথাটা পুরাতন হলে ও বাস্তব সত্য।স্বামী কে তালাক দিয়ে কোর্ট থেকে দুই কন্যা সহ থাকবে। কতইনা আনন্দ কিন্ত সে আসার গুঁড়ে বালি। মহা আনন্দে বিজয়ের হাঁসি হেঁসে কোর্ট থেকে বের হলেন তখন সবাই তার সাথে। কিন্তু বিপদের সময় কে আছে পাশে?

সোসাল থেকে বাসা দেওয়া হলো কেন্টের এক অজপাড়ায়। অজপাড়া বলছি এই জন্য যে সাধারন পাবলিক সার্ভিস নেই। এলাকাটা শুধুই ধনীদের । যারা নিজস্ব গাড়ীতে চলাফেরা করেন।এতদিন হলে কথা ছিলো না স্বামীর গাড়ী ছিল। এখন তো মহা বিপদ বাসে করে যেতে হয় ঘন্টায় ঘন্টায় বাস একটা মিস করছেন তো কেল্লা খতম।

দুই কন্যা নিয়ে উঠলেন সোসাল সার্ভিস বা কাউন্সিলের বাসায়। হাটবাজার এবার নিজ হাতে রান্নাবান্নাতো আছেই। সংসারের সব কাজ নিজ হাতে। আহারে ভাগ্য। দুদিন আগেও ছিলেন রাজরানী আর আজ নিজ দোষে হলেন অভাগীনি।

এখানে শেষ নয় কেবল শুরু।

দুই মেয়ে দুই স্কুলে। বড় মেয়ে জিসিএসি দিবে। পড়াশুনার অনেক চাপ তারপর কেন্ট থেকে টাওয়ার হ্যামলেটস এর পপলারে আসা যাওয়া । বুঝতেই পারছেন মায়ের ভুলের কারনে মেয়েদের লেখাপড়ার কি করুন অবস্থা। বাবা কোর্টের সিধান্ত অনুযায়ী সপ্তাহে একবার ফোন অথবা দেখা করা।

কিন্তু বড় মেয়ে মায়ের সাথে থেকে লেখাপড়া নস্ট করতে চাচ্ছেনা। বাবাকে বারবার অনুরোধ করে বাসা নিয়ে বড় মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু বাবা কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। কোর্ট কি বলে পরে আবার সমস্যা হয় কিনা? তো কোন কূল কিনারা করতে পারছেন না তার সেই ধারনাও নাই । অবশেষে দেশের আত্বীয় স্বজন এখান কার বন্ধুরা পরামর্শ দেন বলেন,”যা হবার হয়েছে অন্তত বড় মেয়ের মুখের দিকেচেয়ে পপলারে দু বেডের বাসা নিয়ে বাবা মেয়ে থাকতে শুরু করো”।

যে কথা সেই কাজ সে অনেকটা স্বাভাবিক হতে লাগলো।পপলারে বাসা নিয়ে বড় মেয়েকে নিয়ে এলো।এবার ছোট মেয়ের পালা । ছোট মেয়ে প্রাইমারি থেকে সেকেন্ডারি তে যাবে।আপনারা জানেন সেকেন্ডারি স্কুল চয়েজ করার জন্য বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করতে হয় গার্জিয়ানের স্বাক্ষর লাগে সিংগল মাদার খুবই সমস্যা ।শুধুমাত্র ভুক্তভুগিরাই জানেন।

এক স্কুল থেকে অন্য স্কুল কখনো হেঁটে কখনো বাসে মেয়েটা যেন অনেক ক্লান্ত হয়ে পরে। ছোট মেয়ে এ চায় বাবার সাথে থাকতে। বাবার ভালোবাসা আদর পেতে সবসময় ছটফট করে। বাবা মায়ের ঝগড়ার সময় ও নিশ্চুপ থেকেছে কিন্তু মনটা তখনো ছটফট করতো। মাকে বলেও কোন লাভ নেই। মানুষের কথায় যে নিজের স্বামীকে স্বন্দেহ করে তালাক পর্যন্ত যেতে পারে।সে মহিলা কিভাবে শুনবে অবুঝ শিশুদ্বয়ের আর্তনাদ ।

সামনে আরো মহা বিপদ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে লম্বা লেটার আপনাকে কমপক্ষে ১৬ থেকে ২৪ ঘন্টা কাজ করতে হবে।না হলে বেনিফিট বন্ধ হয়ে যাবে। এখন কান্না ছাড়া কিছুই করার নেই। যেসব ভাবীরা বুদ্ধি দিয়েছিলেন, যারা সহযোগিতা করে ছিলেন। তাদের স্বামীদের কড়া নির্দেশ ঐ মহিলার সাথে কোন রকম যোগাযোগ না করা । এমনকি দেশে নিজের বাবা মা ভাই বোনেরাও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।

অপর দিকে স্বামী দেশে গেলে স্বামীর বাবা মা এবং আগের শশুড় শাশুড়ী মিলে তাকে আবার তাকে বিয়ে করিয়ে দিয়েছেন। কেননা তাদের বিয়ে দু পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়ে ছিল।কেননা তারা চিনেন এবং জানেন জামাই মানুষ হিসেবে খারাপ হতে পাপে তবে এতটা খারাপ নয়।যতটা তার মেয়ে জামাইর সাথে করেছে। তাই নাতনিদের কথা চিন্তা করে এবং জামাইর ভবিষ্যত চিন্তা করে সবাই মিলে জামাইকে নতুন বিয়ে দিয়েছে। জামাই অল্পদিনের মধ্যেই নতুন বউকে লন্ডনে নিয়ে এসেছে।

বন্ধুরা তাই বলেন “ স্বামীর এখন নতুন বউ আছে। আত্বীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব সব আছে কিন্তু স্ত্রীর পাশে কেউ নেই।”

সন্দেহ এক মারাত্বক ব্যাধি,সত্যের জয় হবে নিশ্চয়।

(সংগত কারনে নাম পরিচয় দিতে পারছিনা।)


Similar Posts