| | |

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের বিজয় দিবস উৎযাপন।


লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপন :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব
প্রশ্নে আপোসহীন থাকার অঙ্গীকার

লন্ডন, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪: আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি ও বিজয়ের গানের মধ্য দিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব উদযাপন করলো বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস । অনুষ্ঠানে একটি কথা দৃঢ়তার সাথে উচ্চারিত হয়: ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয় দিবস, এ বিজয় বাঙালি জাতির অহংকার । বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে দেশে-বিদেশে সর্বস্তরের বাংলাদেশী আপোসহীন। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে দলমতের উর্দ্ধে ওঠে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে।

১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ক্লাব কার্যালয়ে “বিজয়-ভাবনা : প্রেক্ষাপট বর্তমান বাংলাদেশ”- শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন । লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব‍্য রাখেন চ্যানেল এস-এর সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার ডা: জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন এবং কবি ও সাংবাদিক সাওয়ার-ই-আলম। প্রেস ক্লাবের ইভেন্টস এন্ড ফ্যাসিলিটিজ সেক্রেটারি রুপি আমিন ও নির্বাহী সদস্য পলি রহমানের নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয় । অনুষ্ঠানের শেষ দিকে অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী।

আলোচনাপর্বে ডা: জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন, সেপারেশন অব পাওয়ার্স অর্থাৎ আইন, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ প্রত্যেকটির জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তিনি আরো বলেন, অন্তর্বতী সরকারের একটি গণভোটের আয়োজন করা উচিত যাতে দু’টো প্রশ্ন থাকবে। প্রথম প্রশ্ন হবে (১) জনগণ কি সর্বময় ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কুক্ষিগত থাকুক এটি চায়- নাকি সরকারের জবাবদিহিতা থাকুক এটি চায়। (২) জণগন কি রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্র চায় (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে পার্টির মধ্যে নির্বাচন হয়, যেটিকে প্রাইমারী বলা হয়)?
এই গণভোটের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু করার প্রয়োজন নেই। এই গণভোটের উদ্দেশ্য হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে জণগনের আকাঙ্খাটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এই কড়া বার্তা দিয়ে সতর্ক করা যে, রাজনৈতিক দলগুলো ও ভবিষ্যৎ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জণগনের আকাঙ্খার রায় পাওয়ার পরও যদি এর বিপরীতে যায় তাহলে তাঁরা জণগনের দ্বারা প্রত্যাখাত হবেন।
শামসুল আলম লিটন বলেন, ভারত শুধু এই বছরই নয়, গত ৫৩ বছরই ১৬ই ডিসেম্বরকে তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের বিজয় দিবস পালন করেছে । ৫ই আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা বাংলাদেশের মানুষকে ঘুম থেকে জাগিয়েছে। ৭১’এ পাকিস্তানকে বিদায় দেয়া হয়েছে আর এবার দিল্লির কবল থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হলো । দেয়ালের ভাষা বুঝতে অসুবিধা হলে বাংলাদেশের রাজনীতিকরা আগামীতে অনেক চড়ামুল্য দেবেন । তবে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে কখনো ভুল করবে না।
সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে দৃষ্টান্ত ২৪ এর শহীদরা প্রতিষ্ঠিত করেছে, তার ফলে আগামী দিনে যেকোনো স্বৈরশাসনের উত্থানকে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেবে। এবারের এই অর্জন শুধু হাসিনার ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেনি, বাংলাদেশে আগামী শত বছরের জন্য জনগণের ক্ষমতায়নকে নিশ্চিত করেছে। দেয়ালের লিখন সকলকে ভালো করে পড়ে জাতীয় ঐক্যের সূচনা করা এবারের বিজয় দিবসের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

সারওয়ার-ই-আলম বলেন, গত তেপ্পান্ন বছরে বাঙালির সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো আমরা এমন একজন সৎ, নির্লোভ, আদর্শবান ও খাঁটি দেশপ্রেমিক শাসক পাইনি যার কাছে সর্বৈবভাবে বাংলাদেশ নিরাপদ । যার কাছে গণতন্ত্র নিরাপদ। যার কাছে আমাদের সংবিধান নিরাপদ। যার কাছে মানবাধিকার নিরাপদ। যার কাছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো নিরাপদ। যার কাছে আমাদের অর্থনীতি নিরাপদ। যার কাছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো নিরাপদ। যার কাছে জাতীয় সংসদ নিরাপদ। যার কাছে রাষ্ট্র ক্ষমতা হতে পারে জনগণ কর্তৃক অর্পিত মহাপবিত্র আমানতের নাম । যার দেশপ্রেমে সুগভীর আস্থা রেখে পরম নিশ্চয়তায় আশ্রয় নিতে পারে আঠারো কোটি ভাগ্যবিড়ম্বিত বঞ্চিত মানুষ।
তাইসির মাহমুদ অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসকে ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক বিজয় হিসেবে দাবী’ করে প্রচারণা চালানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর একটি বড় আঘাত। প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সর্বোতভাবে সাহায্য করেছে, এ জন্য আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ । কিন্তু এ জন্য বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়কে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের বিজয় হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা বাংলাদেশের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য চরম অবমাননাকর।

আলোচনা সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ, সাংবাদিক রহমত আল‍ী, সাংবাদিক মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক নাজমুল হোসাইন, সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল, সাংবাদিক সাহিদুর রহমান সোহেল, সাংবাদিক এনাম চৌধুরী, কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট ইমরুল হোসাইন, সাংবাদিক তৌহিদুল করিম মোজাহিদ, সাংবাদিক আব্দুল হান্নান, সাংবাদিক কয়েস আহমদ রুহেল, সাংবাদিক খালেদ মাসুদ রনি ও ক্লাবের আজীবন সদস্য অহিদ আহমদ।

সংস্কৃতিকপর্বে সমবেত কণ্ঠে বিজয়ের গান পরিবেশন করেন রুপি আমিন, পলি রহমান, উর্মি মাযহার, নুরুন্নাহার বেবি, হিমিকা ইমাম, মোস্তফা কামাল মিলন, মিছবাহ জামাল, জিয়াউর রহমান সাকলাইন, আব্দুল হামিদ টিপু, আলাউর খান শাহীন, শামসুল তালুকদার প্রমুখ।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যখানে সিলেট প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ও দৈনিক জালালাবাদের ডাইরেক্টর বৃটিশ-বাংলাদেশী কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব শাহ মোহাম্মদ শেরওয়ান কামালীকে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়। তিনি প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চেক হস্তান্তর করেন।


Similar Posts