ফেলে আসা ইতালী,স্মৃতির পাতায়, রংগীন দিন । (পর্ব-২১)

Italy

১৯৯৮ সালের নির্বাচন যেমন ছিলো। জাঁকজমকপূর্ণ তেমন ছিলো অর্থবহ। সেই সাথে কার্যকরি পরিষদের সবার ছিলো দায়বদ্ধতা, কাজ করার অদম্য আগ্রহ।

অভিষেক অনুষ্ঠানের পর প্রথমেইঅফিস পরিবর্তন । পর্তামাজ্জোরের কাছে মাটির নিচ থেকে পিছাচ্ছা ভিক্টরিয়ার কাছে ১৪ নং পিয়াচ্ছা দান্তে অফিস। এ অফিসে আলোচনার মাধ্যমে নেওয়া হয় বেশ কিছু গুরুত্ব পূর্ন কার্যকর্ম।এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য

১/ নতুন দের স্বাগতম জানানো। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের লস রিপোর্ট ছাড়াই সমিতির কার্ড দিয়ে এম্বাসি থেকে পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাবস্থা করা। কস্তুরা ও প্রেফেত্তুরার সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে ছিলো। তৎকালীন রাস্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির এ ব্যাপারে যথেস্ট সহযোগিতা করেছেন।

২/ ইতালীতে কোন বাংলাদেশী মারা গেলে বিনা পয়সায় মৃত্যু লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা। সেই প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক দেনদরবার হয় তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আবেদন পৌঁছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাস্ট্রদূত পরিবর্তন হয়ে আসেন মো: জিয়া উদ্দিন । বাংলাদেশে বিনা পয়সায় লাশ পাঠানোর জন্য রাষ্ট্রদূত মো: জিয়া উদ্দিন অনেক সহযোগিতা করেন।

৩/ বাংলাদেশী শিশুদের বাংলা শিক্ষার ব্যাবস্থা করা। এখানে মজার ব্যাপার হলো কমুনে দি রোমায় প্রস্তাব দিলে অফিস থেকে বলা হয় যদি ৮০ জন ছাত্র/ ছাত্রী হয় তবে কমুনে থেকে জায়গা দেওয়া থেকে শিক্ষকদের বেতন সহ সব ব্যাবস্থা করবে। কিন্তু আমরা যখন বিজ্ঞপ্তি দিলাম তখন ৮০ জন ছাত্র/ছাত্রী হলে বাংলা স্কুল প্রতিস্ঠা করা যেতো। কিন্তু ৮০ জন তো তো দূরের কথা পাওয়া যাবে মাত্র ৯ জন তাও আবার আনা নেওয়ার সহ কত শর্ত । তবে শিক্ষকের জন্য আবেদন করে ছিলেন ৬৩ জন। ভিয়া কন্তে ভেরদে স্কুলের সাথে সমন্বয় করে বাংলা স্কুল করার পরিকল্পনা ছিলো।শত চেস্টা করেও বাংলা স্কুল প্রতিস্ঠা করা সম্ভব হয় নাই।

৪/ লেগো পত্রিকার মাধ্যমে বিনা পয়সায় বেশ কিছু বাংলাদেশী লোকের কাগজ করে দেওয়া হয়। লেগে পত্রিকার মাধ্যমে বিনা পয়সায় ৫৩৪ টি কাগজ বা প্রেমেচ্চো দি সৌজর্ন হয় এর মধ্যে মজার ব্যাপার হলো৫১৩ কাগজের ঠিক কানা ছিলো সমিতির অফিসের ঠিকানাস ।।

৫/ ইতালীয়ান বাংলাদেশীদেক দ্বৈত নাগরিক করার প্রস্তাবনা করা হয় এ্যাম্বাসীর মাধ্যমে স্বংয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ প্রস্তাব পৌঁছে দেওয়া হয়।

৬/ বাংলাদেশের জাতীয় দিন গুলি , একুশে ফেব্রুয়ারি , ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা।

৭/ বর্ষ বরণ ও বৈশাখী মেলা, ঈদ পরবর্তীতে ঈদ পূনর্মিলন এবং সংগঠনের বর্ষপূর্তি পালন করা।

৮/ ইতালীর সংস্কৃতির সাথে বাংলাদেশী সংস্কৃতি পরিচয় করিয়ে দেওয়া।

৯/ ইতালীর টেলিভিশন রাই তে অনুস্ঠানে অংশ গ্রহন করা।পরতাপর্তিদ টেলিভিশন সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশীদের ইতিবাচক জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরা হয়।

১০/ ইনডোর গেইমস, কেরাম ও দাবা খেলা প্রতিযোগিতা আয়োজন ছিলো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ । সবাইকে একত্রিত করা।

১১/ ইমিগ্রেশন আন্দোলনে অন্যান্য দেশের সাথে সম্ময় করে আন্দোলনকে আরো বেগবান এবং দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। রোমে অন্যন্য দেশের সংগঠন ও নেত্রীবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে লাখ লাখ লোক একত্রিত করে বিশাল বিশাল ইমিগ্রেশন আন্দোলন করা হতো এর মূল নেতৃত্ব দিতেন বাংলাদেশ সমিতি রোম ইতালী।

১২/ বাংলাদেশ সমিতি রোম ইতালী হয়ে উঠলো সকলের প্রাণের সংগঠন। বাংলাদেশী দের সার্থে সব ধরনের দায়িত্ব পালন সহ বিপদে সবার আগে বাংলাদেশ সমিতির কর্মকর্তারা।

১৩/ বাংলাদেশ সমিতির হিসাব স্বচ্ছ ও সকলের নিকট গ্রহনের জন্য ৭ সদস্যের একটি অডিড কমিটি গঠন করা হয়েছিলো।

১৪/ বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর তৎকালীন কার্যকরি পরিষদের কোন কর্মকর্তা অর্থ কে প্রাধান্য না দিয়ে দায়িত্ব বা কাজ কে বেশী প্রাধান্য দিতেন।নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে দায়িত্ব পালন করতেন।সংগঠনের বাজেট না থাকলে আমরা স্পন্সর সংগ্রহ করে অনেক অনুস্ঠান করেছি। জনগনের সব ধরনের দায়িত্ব পালনে সবাই ছিলো তৎপর এ কারনেই সংগঠনটি হয়ে উঠেছিলো সবার প্রাণের সংগঠন।

১৫/ বাংলা বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা , জাতীয় দিন সহ সব গুলি অনুস্ঠান ছিলো সবার সরুপ উপস্থিতি ছিলো প্রানবন্ত। ১৯৯৯ সাল বাংলা ভাষার জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করে।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ।বাংলাদেশ সমিতি রোম, ইতালীর এক ঐতিহাসিক সন। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো থেকে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেই খুশি ও অর্জনের সাথে বাংলাদেশ সমিতি এক ঐতিহাসিক ২১শে ফেব্রুয়ারী ৯৯ আয়োজন করে। এ অনুস্ঠানের প্রধান অতিথি আমার ভাইয়ের রক্তে রাংগানো একুশে ফেব্রয়ারীর গানের লেখক , কলামিস্ট, সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। সেই অনুষ্ঠানটি হয়েছিলো ভিয়া প্রেনেস্তিনার হলে এবং আগের দিন রাতে আমি এবং কয়েক বন্ধু মিলে কাঠ এবং সাদা কাপড় দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মান করেছিলাম। শহীদ মিনার ছিলো সবার জন্য উন্মুক্ত। সকাল থেকে সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং আন্চলিক দল গুলি সারি বদ্ধ ভাবে সুশৃংখল ভাবে একে একে এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। ইতালীর ইতিহাসে এত সুন্দর সুশৃংখল এবং সর্বজনীন ভাবে আর কোন অনুস্ঠান আমার জানা মতে হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হওয়ার কোন সম্ভবনা আছে বলে মনে হয় না। সেই দিন সকালে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরী, সকল সংগঠন এবং ব্যাক্তিদের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকেলে আমন্ত্রিত অতিথিদের আলোচনা সভা।একুশে ফেব্রুয়ারীর কিংবদন্তি লেখকের উপস্থিতি।হাজার হাজার লোকের সমাগমে ভিয়া প্রনেস্তিনা হয়ে উঠেছিলো এক খন্ড বাংলাদেশ ।


Similar Posts