ফেলে আসা ইতালী, স্মৃতির পাতায়, রংগীন দিন। ( পর্ব ১৪)


গভীর রাত বাসার সবাই নাক ডেকে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ। বার বার কলিং বের বাজতে লাগলো। কেউ উঠতে চায় না সবাই উড়া মুড়ি খাচ্ছেন। আর বিরক্ত অনুভব করছেন। সবাই মনে মনে গালি দিচ্ছেন। কেউ হয়তো চাবি ভুলে রেখে গেছে অথবা নতুন কেউ । মোল্লা ভাইর বাসার ঠি কানা নিয়ে এসেছেন।

কলিং বেল বাজাচ্ছে তো বাজাচ্ছে। বাধ্য হয়ে মোল্লা ভাই উঠে চোখ মুছতে মুছতে রিছিপশন তুলতেই ওপার থেকে পুলিশের কন্ঠ। আপরিরে লা পরতা নোই সিয়ামো পুলিছিয়া। মূহুর্তের মধ্যে মোল্লা ভাইর চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেলো। মোল্লা ভাই বাসার সবাইকে ডাকার আগেই। ইয়া বড় বড় দুটি কুকুর সহ বেশ কয়েক জন পুলিশ। এক জন দরজার সামনে বাকি সবাই কুকুর সহ প্রথমেই বড় রুমে লাইট জালানোর সাথে সাথে সবাই উঠে বসলেন।

পুলিশ প্রথমে সবার ডকুমেন্ট চেক করলো। এর পর সবার ব্যাগ । কুকুর দুটি লম্বা চিহ্বাহ বের করে ব্যাগের কাছে যেয়ে হায়া হায়া শব্দ করতে লাগলো । এই বাসা নিয়ে পুলিশের কাছে অনেক কমপ্লেইন আছে। বেশী লোক থাকে । অনবরত লোক আসাযাওয়া করে। হকার্স ব্যাবসার মালপত্র নিয়ে উঠানামা করেন। পুলিশের সন্দেহ ছিল ড্রাগ । কিন্তু আল্লাহর রহমতে কেউই সেই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনাই। তবে এতো লোক দেখে পুলিশ হতভম্ব হয়ে গেলো। এতো লোক এক সাথে থাকতে পারে এটা স্বচক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবেন না। ফ্লোরে সারিবদ্ধ ভাবে ম্যাটেজ। এক এক জন ঘুমিয়ে আছেন আর নাগ ডাকা শান্তির ঘুম। মূহুর্তের মধ্যে উধাও।

দুই একজন নতুন লোক ছিলেন যাদের কাগজ ছিলো না তাদের কে ধরে নিতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু মোল্লা ভাই অনেক বুঝানোর পর ছেড়ে দিয়ে ছিলো।পুলিশের ইন্ফরমেশন ছিলো ড্রাগ কিন্তু ড্রাগ যেহেতু পায় নাই। তাই পুলিশ সহনশীল।তেমন ঝামেলা করতে রাজি নয় তবে মোল্লাভাইকে নির্দেশ দিয়ে গেলেন নিয়মের বাহিরের লোক যেন না রাখা হয়।

“ঠেলার নাম বাবাজি” পুলিশ চলে যাওয়ার পর সবাই আবার ঘুমিয়ে পরলেও মোল্লা ভাইর চোখে ঘুম নেই। চিন্তায় পরেগেলেন কাকে বাসায় রাখবেন? কাকে রাখবেন না। যথা রীতি পরের দিন আমি চলে গেলাম রাতে এসে দেখি তাজ্জ্বব ব্যাপার।বাসায় লোকের তেমন আনাগোনা নেই। ফ্লোরে কোন সিট নেই সবাই যারযার খাটে ঘুমাচ্ছেন।বাসায় এক সুন্দর পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তবে ঘটনা অন্য খানে। আমাদের শাখাওয়াত মোল্লা ভাই, পাম্পের সেল্ফ সার্ভিসে কাজ করে প্রতিদিন ই অনেক ভাংতি পয়সা নিয়ে আসেন এবং সপ্তাহে একদিন সেই ভাংতি পয়সা সুপার মার্কেট অথবা যে কোন কাউন্টার থেকে কাগজের নোট করেন অথবা পোস্ট অফিসে জমা রাখেন। দুই/তিন সপ্তাহ হয়েছে সাখাওয়াত ভাই ভাংতি পয়সা গুলি একটি ব্যাগে জমা রেখেছেন।

একজন পুলিশ পয়সা সহ ব্যাগটি পেয়ে তিনি যেন আকাশ থেকে পরলেন। কোন কিছু না বলেই ব্যাগটি নিয়ে যাচ্ছেন। শাখাওয়াত ভাইতো কান্না কান্না অবস্থা কিন্তু পুলিশকে কিছু বলতে পরছেন না। আমি পাশের রুমে পুলিশকে সাইট দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাত আমার কাছে এসে বললেন, ভাই পুলিশে আমার টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। আমি অন্য রুমে ।যার যার রুমে পুলিশ তাকে চেক করছেন। আমি অনেকটা পাশ কাঁটিয়ে পাশের রুমে এলাম এবং দেখলাম। পুলিশের হাতে শাখাওয়াত ভাইর ভাংতি পয়সার ব্যাগ। আমি বললাম, এসকুজি সিনরে, পেরকে পরতি লা বুস্তিনা? পুলিশ বললেন, সেই তুওআমি বললাম নো , নন এ মিও । পেরো গুয়েসতো মিও আমিকো।

পুলিশ বললেন, নন পারলো কন তে?আমি বললাম,বাবব্যােনে প্রেনদি বুস্কিনা ননসে প্রবলেমা।প্রিরো পরতারে দেবি কন্তারে , আনকে দেবি রিসিবুতানন দেবি রিসিবুতা । নন পসো পরতারে। আমাদের কথার মাঝে আর এক পুলিশ অফিসার এসে বললেন , আন্দিয়ামো, তারা চলে যাচ্ছেন আমি সামনে বললাম দাই রিলিবুতা।অন্য পুলিশ বললেন, কি কসা ছেই?

পুলিশ বললেন তান্তি মনেতা।অন্য পুলিশ বললেন । লাসা ভের দে। আন্দিয়ামে।ভাংতি পয়সার ব্যাগ রেখে কুকুর দুটি সহ এক এক করে বুটের শব্দে সবার বুক কাঁপিয়ে দিয়ে পুলিশরা চলে গেলেন। শাখাওয়াত ভাই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।ইয়া বড় বডি, ইয়া বড় পেট। বেশ স্বাস্হ্য । কিন্তু বুকে সাহস তেমন নেই পুলিশ দেখলেই চুপসে যান। ইয়া বড় দেহ নেতিয়ে পরে। সেই দিনের শাখাওয়াত ভাইর সেই হাঁসি এখনো মনের মাঝে ঝিঁলিক দিয়ে উঠে।


Similar Posts