দুই বার মৃত্যু ঘোষনার পরও , বেঁচে আছেন।
সিলেটের ৬০ বছর বয়সী, মনির হোসেন।
মো: রেজাউল করিম মৃধা ।
করোনাভাইরস মহামারিতে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে যতই নিউজ করছি। ততই অবাগ হচ্ছি, হতবাগ হচ্ছি, বিস্মিত হচ্ছি, আপ্লুত হচ্ছি। একটি ঘটনার চেয়ে অন্যটি আরো বড় ঘটনা, আরো লোম শিহরিত ঘটনা। মনে হয় এ কি করে সম্ভব। মনে হয় এটাই বুঝি কঠিন কিন্তু না এর পরের টা আরো আশ্চর্য জনক। আরো ভয়াবহ।
১০ মিনিট হার্ড স্পন্দন বন্ধ ছিল। পরিবারের সবার মাঝে কান্নার রোল পরে গেছে। কিন্তু না নার্স এবং ডাক্তার তার শরীরে বার বার চাপ দেওয়ার ফলে আল্লাহর রহমতে হঠাৎ করে স্পন্দন ফরে আসে। সে যাত্রায় তিনি বেঁচে উঠলেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬০ বৎসর বয়সী সিলেটের মনির হেসেন। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্রেন্টের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন। দুই সপ্তাহ স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা হয় কিন্তু অবস্থা অবনতি হওয়াতে তাকে লন্ডনের চ্যারংক্রাস হাসপাতালে নেওয়া হয় । সেই খানেই পাঁচ সপ্তাহ কেঁটে যায় ভেন্টিলেটারের মাঝে।
স্ত্রী, কন্যা এবং দুই ছেলে নিয়ে সুখের সংসারে নেমে আসে দু:শ্চিন্তা আর বেদনার ছায়া।মনির হোসেনের ভাই বোন আত্বীয় স্বজন সবার মাঝে। সবই ধরে নিয়েছে মনির হোসেন আর বেঁচে নেই।তার সুস্থ্যতায় ডাক্তাররাও আশ্চর্য । বলেন “তুমি অনেক ভাগ্যবান “। ডাক্তার আরো বলেছেন , এ রোগ থেকে সুস্থ্য হলেও অনেকেই প্যালাইড অথবা হার্ড বা কিড্নী কোন সমস্ত থেকে যায়। কিন্তু তুমি এতটাই ভাগ্যবান যে তোমার কোন সমস্যাই নাই,”। এখনো সপ্তাহে দুইদিন বাসায় এনএইচএস লোক এসে চেক অপ করেন । থেরাপিস্ট এসে সেবা দিয়ে যান। ডাক্তার সব সময় ফোনের মাধ্যমে পারামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য তার সবচেয়ে ভালো নিউজ তিনি কখনো ধূমপান করেন নাই।
মাত্র ৯ বৎসর বয়সে বাবা মা এর সাথে লন্ডনে আসেন মনির হোসেন। বললেন,”আমার ভাই-বোন , চাচা খালু মামা আত্বীয় স্বজন সবাই ইংল্যান্ডে।আমার করোনাভাইরসের কথা শুনে সবাই দোওয়া করেছেন। সবার দোওয়ায় ও আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি বেঁচে আছি,”। তিনি আরো বলেন , “ অনেক কস্ট , আল্লাহ যেন কাউকে এই রোগ না দেন,”।
মনির হোসেন পাঁচ সপ্তাহ ছিলেন শুধু আই সি ইউ তে ভেন্ট্লেটারে। বুকে হাওয়া ঢুকে ছিলো । পাইপ দিয়ে ছিদ্র অপেরাশন করে। তখন ও ছিলো বড় ধরনের ঝুঁকি ।ভেন্টিলেটরের জন্য গলার শ্বাসনালী অপেরশনের সময় আরেক ঝুঁকি । এতকিছুর পর ও আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছেন মনির হোসেন।
কলেজের লেকচারার স্ত্রী এ্যানির হোসেন বলেন, “আই
সি ইউ তে থাকার সময়ের বেদনাময় দিনের কথা। হাসপাতালে যাওয়া নিশেধ ছিলো তাই ভিডিও কল করা হতো। তার মূমূর্ষ অবস্থা দেখে আরো হতাশায় দিন কাটতো। স্ত্রী এবং মেয়ে কোরআন শরীফ এ পাশ থেকে পড়তেন নার্সরা ফোনটি তার কানের কাছে রেখে দিতেন,”। এই ভাবেই কেটে যায় অনেক গুলি দিন। নিরাশা দিন যাচ্ছিলো পরিবারের সবার।
মেয়ে এবং বড় ছেলে কথা বলতে না চাইলেও ছোট ছেলে ম্যাকানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এর ছাত্র তাহির হোসেন বর্তমানে রয়েল মেলে কাজ করছেন তিনি বলেন, “ বাবাকে ছাড়া কেমন অসহায় লাগছিলো, খেতে গেলে বাবা নেই , বাবার চেয়ার খালি ভাবতেই চোখে পানি এসে যেতো ।তবু আমার এবং আমাদের ভাগ্য ভালো বাবা সুস্থ্য হয়ে ফিরে এসেছেন। সেই সময়টি ছিলো লন্ডনের পিক টাইম । একই সময় বৃটেনের প্রাইমিনিস্টার বরিস জনসন ও একই সময় আক্রান্ত ছিলেন। আমরা খুবই দু:চিন্তায় ছিলাম,”।প্রতিদিন নতুন নতুন মৃত্যুর সংবাদ আমাদের ভাবিয়ে তুলতো। বাবা কাছে গিয়ে দেখতে পারতাম না। অনেক কস্ট”।
করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে ছোট ছেলে বলেন , “ হতে পারে আমার মাধ্যমে কেননা আমি রয়েল মেলে কাজ করার সময় জানুয়ারী মাসে চাইনিজদের সেইফটি পোস্টবক্স পেয়েছি কিন্তু বুঝতে পারিনি বিপদ আসবে ঘরে।
অথবা
বাবা প্রাইভেট হায়ারিং মিনিক্যাব করেন। তিনি নিজেই হয়তো কাস্টমারদের কাছ থেকে করোনাভাইরস আক্রান্ত হয়েছেন,”।
করোনাভাইরস পূর্ববর্তী লক্ষণগুলো তার মধ্যে দেখা দেয়।
ক) সর্দি খ) গলা ব্যথা। গ) কাশি
ঘ) মাথা ব্যাথা ঙ) জ্বর চ) হাঁচি
ছ) অবসাদ জ) শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
সেই কস্ট গুলি এত কস্টদায়ক ও যন্ত্রনময় যার না হয়েছে তাকে কুঝানো যাবেনা যখন বলছিলেন,তখন তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। সত্যি অসহ্য যন্ত্রনা এ কথা গুলি অন্যান্য করোনা রোগীদের কাছ।।হাসপাতালে শ্বাস কস্ট এতোটাই বেড়ে যায় তার পক্ষে দম নেওয়া সম্ভব হয় না তখন শ্বাস নালি অপারেশন করে রাখা হয় আই সি ইউ নিবির পর্যোবেক্ষনে।তার আর জ্ঞান ফিরে আসেনা।হাসপাতাল থেকে অনেকটা মৃত্যু ঘোষনার মত পরিবারকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। তখন পরিবার এবং আত্বীয় স্বজন বুঝে নিয়েছে তিনি আর ফিরে আসবে না। পরিবারের মধ্যে কান্নার রোল পরে যায়। সেই থেকে দীর্ঘ দিন হাসপাতালের কোমাতে ছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহ।
এখন পরিবারের সবাই অত্যান্ত খুসি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন মনির হোসেন, তিনি সবার কাছে দোওয়া চান, বলেন আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি,”। হাসপাতাল যখন তার জ্ঞান ফিরেছে তখন তিনি ঘুমের ঘরে স্বপ্ন দেখতেন। আর পুরাতন স্মৃতি গুলি চোখের সামনে ভেসে আসতো। বাসায় এসে ও এক রাতে হঠাৎ স্ত্রীকে বলছেন, “দেখোতো পাসপোর্টে এন্টি সিল্ড দিছে কিনা? । স্ত্রী বলেন “কি বলছো এ সব “। তখন ঘুম ভেজ্ঞে বলেন “আমি তো দুবাই থেকে ঘুরে এলাম”।
অনেক স্মৃতিই মাথায় ঘুরপাক খায়। এখনই টেলিভিশনে নিউজ দেখতে পারেন না। করোনার কথা শুনলেই মনের মধ্যে কস্ট অনুভুত হয়। তিনি একটি কথাই বার বার বলেন, “এমন রোগ যেন আল্লাহ কাউকে না দেন,”।