ফেলে আসা ইতালী,স্মৃতির পাতায়, রংগীন দিন। (পর্ব-২০)

বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে পাশ করেও যেন পরে গেলাম মহা বিপাকে। দুটি প্যানেলে নির্বাচন অনুস্ঠিত হয়েছিল আর স্বতন্ত্র ছিলেন তিনজন প্রার্থী। তবে আমার পদে ছিলো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী কিবরিয়া প্যানেল আব্দল মান্নান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার পরও ভোটারদের রায়ে আমি নির্বাচিত হলাম। আমাদের প্যানেল থেকে মাত্র ৫জন নির্বাচিত হলাম।
সিনিয়র সহ সভাপতি হাসান ইকবাল,সাধারন সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দীকী বাচ্চু,
সংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক – আমি
সহ সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক- শেখ মজিবুর রহমান ও
সহ দপ্তর সম্পাদক- মো: দেলোয়ার হোসেন।
মজিবুর রহমান ভাই ও দেলোয়ার ভাই তেমন স্বরূপ উপস্থিতি ছিলো না । যে কোন কার্যকর্মের সাথে জরিত ছিলাম আমি বাচ্চু ভাই ও হাসান ইকবাল ভাই। এর মধ্যেও কয়েক মাস যেতে না যেতেই বাচ্চু ভাই সাধারন সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন।রয়ে গেলাম আমি আর হাসান ইকবাল ভাই।
জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েও প্রাণ খুলে হাসতে পারি নাই কারন আমাদের প্যানেলের সভাপতি লোকমান ভাই মাত্র কয়েক ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। এবং মাত্র ৫জন পাশ করেছিলাম। পাশ করার পর আমরা হেন্ডী ভাইর শপ রাজধানী আলিমেন্টারীতে মিটিং করি এখানে আমাদের প্যানেলের প্রায় সকল মুরুব্বী সহ সমর্থক রা উপস্থিত ছিলেন। আমরা পাশ করেও হতাশ ছিলাম মিটিং এ অনেকেই বললেন, পদত্যাগ করার জন্য। তাদের ধারনা কিবরিয়া ভাই কাউকে কাজ করার সুযোগ দেন না। এছাড়া অল্প সংখ্যক পদ এটা কোন কাজেই আসবে না। আমি সবাইকে সম্মানের সাথেই বললাম। আমি পদত্যাগ করবো ঠি ক আছে কিন্তু প্রথম আমাকে কাজ করার চেস্টা করতে হবে। যদি না পারি তবে অবশ্যই পদত্যাগ করবো। হেন্ডী দি কস্তা ভাই ছিলেন তিন পরিষদের সাধারন সম্পাদক।বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর গঠন থেকে তৎকালীন পর্যন্ত তার ছিলো অনেক কর্ম দক্ষতা। তিনি লুৎফর রহমানের সময় সাধারন সম্পাদক, লোকমান হোসেন এর পরিষদেও সাধারন সম্পাদক এবং জি এম কিবরিয়া পরিষদেও সাধারন সম্পাদক বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর তার রয়েছে বর্নাঢ্য ইতিহাস। সিরাজ দেওয়ান , হাবীব চৌধুরী , আহমেদ ঢালী সহ সহ আরো কয়েক জন সম্মতি দিলেন। বললেন যান, যদি কাজ করতে পারেন ভালো না পারলে পদত্যাগ বাধ্যতামূলেক ।আমি সকলের দোওয়া এবং ভোটারদের সম্মান রক্ষা করা আমার দায়িত্ব । আমাদের প্যানেলর মিটিং শেষ করে ফিরছি সবাই জানে আমরা ২/৩ জন কিছুই করতে পারবোনা ।
তাদের ধারনা ছিলো হেন্ডী ভাই পূর্বের পরিষদের সাধারন সম্পাদক ছিলেন কিন্তু তিনি উল্লেখ্য যোগ্য কিছুই করতে পারেন নাই। আর আমি তো একজন সামান্য সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক। কোন পাত্তাই পাবোনা। নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুস্ঠান হবে। অভিষেক অনুস্ঠানের মিটিং এটাই নতুন কমিটির প্রথম মিটিং আমি কাজ করি একটি বাংকারে । শপ বন্ধ করে আসতে হয়। ঐদিন ছুটি নিতে পারতাম কিন্তু নির্বাচনে ছুটি নিয়ে ছিলাম আবার অতিরিক্ত তিনদিন লেগেছে ভোট গননায়। যাইহোক কিবরিয়া ভাইকে বলেছিলাম আসতে একটু দেড়ী হবে। আমি মিটিং এ এলাম মিটিং প্রায় শেষ। সবাই উঠে যাবেন। আমি প্রবেশ করাতেই কিবরিয়া ভাই মিটিং এর কি কি সিদ্ধান্ত হয়েছে বললেন। সব ঠি ক আছে শুধু যখন বললেন সাংস্কৃতিক অনুস্ঠান পরিচালনার জন্য অন্য উপস্থাপক আনা হবে। আমি তখন বললাম, আপনাদের সব মানি কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুস্ঠান আমি পরিচালনা করবো । সবাই বের হওয়ার প্রস্তুতি থেকে বসে পরলেন।সবার যুক্তি অনুস্ঠান সুন্দরের জন্য ভালো উপস্থাপক দরকার। এ জন্য অন্য উপস্থাপক অনুস্ঠান পরিচালনা করবেন।তখন ও আমি বললাম সমিতির প্রতিটি সদস্য এবং ভোটাররা আমাকে রায় দিয়েছে এই অনুস্ঠান গুলি পরিচালনা ও উপস্থাপনা করার জন্য।এসময় বাচ্চু ভাই ও আমার বিরোধীতা করে মিটিং এর সিদ্ধান্তের পক্ষে ছ্লেন।হাসান ইকবাল ভাই নিরুপায় হয়ে নিরব ছিলেন।সবাই চায় অনুস্ঠান সুন্দর হোক , আর আমি চাই আমার দায়িত্ব। কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিটিং শেষ। নির্দিষ্ট দিনে ভিয়া কাসিলিনা ভেক্ষিয়া হলে অভিষেক অনুস্ঠান। সবাইকে আমরা আমাদের মতো করে দাওয়াৎ দিয়েছি। আমাদের প্যানেলের সব মুরুব্বীদের ও দাওয়াৎ দিয়েছি। শিল্পীদের ও বলা হয়েছে। আমার সাথে আমাদের বাসার সবাই এসেছেন। হলের এক পাশে দাড়িয়ে সবার সাথে কথা বলছি। শুভেচ্ছা বিনিময় করছি।লোকে লোকারন্য হল ।
আমার প্রিয় বন্ধু আমাদের সম্মানীত সদস্য এস এম সেলিম হে হে করে হেঁসে হেঁসে এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো দোস্ত যা মাইকে যা।আমি বললাম মানে কি ?তুই উপস্থাপনা করবি।তোরা না নামি দামী ভালো উপস্থাপক ভাড়া করছোস।সেলিম ভাইর তো ৩২ দাঁত বের করে হাসার অভ্যাস ।বললো বাদ দে তোআমি বললাম তুই পুরা অনুস্ঠান উপস্থাপনা করবি।সেলিম ভাইর কথায় পুরাপুরি আস্থা আনতে পারছিনা বন্ধু মানুষ। ঠাট্টা ও করতে পারে। হল তখন লোকে ভোরে যাচ্ছে । আমি সেলিম ভাইর সাথে হেটে হেটে সামনে গিয়ে দু একজন মুরুব্বীকে সামনের চেয়ারে সম্মানের সাথে বসাচ্ছি।এর মাঝে কিবরিয়া ভাই এসে বললেন।আপনি মাইকে যান । অনুস্ঠান পরিচালনা করতে হবে।সেই থেকে বাংলাদেশ সমিতির ইতালীর আমাদের পরিষদের যত অনুস্ঠান হয়েছে আমি পরিচালনা করেছি। সাথে কো আর্টিস্ট বা আর একজন উপস্থাপক অনেক সময় অনুষ্ঠানের সার্থেই মিটিং এ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হতো। সেই যে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু। আজ অবদি বহু অনুস্ঠান উপস্থাপনা করেছি এখনো করছি এমএএইচ টিভি তে “মৃধা শো” প্রতি শনিবার উপস্থাপনা করে যাচ্ছি।
প্রতি বছর ইতালী এবং ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে বহু অনুস্ঠান উপস্থাপনা করেছি। সামারে পিকনিকে বাসে এবং পিকনিক স্পটে বহু উপস্থাপনা করেছি নিজেদের সংগঠনে অনেক সময় অন্যদের সংগঠনে আমন্ত্রণে গিয়েছি। এখন ও বিভিন্ন অনুস্ঠান পরিচালনা করতে হয়। সেই অনুস্ঠানে আমাদের প্যানেল সহ সব মুরুব্বীদের সম্মান দেওয়া হয়েছিল। এর পর বহু নতুন নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়ে ছিলো। আমরা ভুলে গিয়েছিলাম কে কোন প্যানেলের । সবাই নির্বাচিত কার্যকরি পরিষদের সদস্য এবং আরো ৬ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছি কার্যকরি পরিষদের সদস্য এবং উপদেস্টা পরিষদ সবাই মিলেই বাংলাদেশ সমিতি ইতালী জন্য অনেক কাজ করেছি ।হাতে নেওয়া হয়েছিলো নতুন নতুন প্রজেক্ট।
