| |

নিজ মালামালের জাকাত , ফিতরা দিন।
সম্পদ ও রোজাকে হালাল ও শুদ্ধি করুন।


মো: রেজাউল করিম মৃধা।

জাকাত ইসলামের অন্যতম আর একটি স্তম্ভ।

ইসলাম ধর্মের ৫ টি স্তম্ভ । ইমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব এবং জাকাত। ইসলাম ধর্মের এই কাজ বা দায়িত্ব গুলি আপনাকে পালন করতেই হবে। এথেকে পিছপা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এক একটি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা। আজ শুধু জাকাত ও ফিতরা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করবো।

জাকাত সম্পদ পবিত্র করে, বিত্তশালীদের পরিশুদ্ধ করে, দারিদ্র্য মোচন করে, উৎপাদন বৃদ্ধি করে, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে এবং সমাজে শান্তি আনে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অনযতম হচ্ছে জাকাত।প্রাচীনকাল থেকেই সব নবী-রাসুলের উম্মতের ওপর নামাজ ও জাকাত ফরজ হিসেবে পালনীয় ছিল। তবে মুসলমানদের ওপর ধনীদের সম্পদ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব করে প্রতিবছর জাকাত আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আপনি সম্পদশালী হলে আপনাকে তার উদ্ধৃত্ত থেকে গরীব মিসকিন দের কে দান করতে হবে। এটা দয়া নয়। এটা আপনার দায়িত্ব আর এ দায়িত্ব থেকে আপনি গাফিলতি করলে বা দায়িত্ব পালন না করলে অবশ্যই শেষ বিচারের দিন আপনাকে জবাব দিহি করতে হবে। আপনার সম্পদের উদ্ধৃত্ত থেকে শত করা আড়াই পারসেন। আপনার বা আপনার পরিবারের স্বর্ন ও রৌপ্য হিসাব করেও জাকাত দিতে হবে। যদি সঠিক হিসাব করে না দেন তবে হাদিস মোতাবেক ঐ স্বর্ন এবং রৌপ্য সাপ হয়ে আপনার মৃত্যুর পর কবরে ধ্বংসন করতে থাকবে। হাদিস ১৩১৮ ।যারা স্বর্ন ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং আল্লাহ রাস্তায় খরচ করে না । তাদের কে স্বর্ন ও রৌপ্য দোযখের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের কপালে দাগ দেওয়া হবে।তাই সাবধান আমরা যেন আমাদের মালামালের সঠিক হিসাব করে জাকাত আদায় করি।

আর ফিতরা খুবই সামান্য জন প্রতি বৃটেনে মাত্র £৫.০০পাউন্ড অন্যান্য দেশে। সেই দেশের অর্থনীতির উপর নির্ভর করে কম বেশী হতে পারে। আপনার পরিবারে যে কয়জন সদস্য আছেন তাদের প্রত্যেকের £৫.০০ করে দিতে হবে। সে যদি ঈদের আগ মূহুর্তে জন্ম গ্রহন করেন। তার জন্য দিতে হবে।এখানে ও কোন রকম গাফিলতি বা অবহেলা করা সুযোগ নাই।এটা আপনাকে করতেই হবে। এটা ইসলামের নিয়ম বা বিধান। ফিতরাহ রোজার মধ্য ভূল গুলিকে শুদ্ধ করে।

এখন আসি কে কে জাকাত বা ফিতরা দিবেন এবং কে কে গ্রহন করবেন।

এক কথায় যার অর্থ বা সম্পদ আছে অর্থাৎ যিনি ধনি তিনি দিবেন এবং যার অর্থ নেই অর্থাৎ গরীব নিবেন।

আল্লাহ্‌র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হযরত মুয়াযকে (রা.) ইয়ামেন পাঠানোর সময় জাকাত সম্পর্কে হেদায়েত দিয়েছিলেন যে জাকাতের অর্থ শুধু মুসলিম ধনী থেকে নেওয়া হবে ও মুসলিম দরিদ্রকে দেওয়া হবে। তাই জাকাতের অর্থ শুধু মুসলমান ফকির-মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। জাকাত ছাড়া অন্যান্য ছদকা খয়রাত এমনকি সদকায়ে ফিতরও অমুসলিমদের দেওয়া জায়েজ। (হেদায়া)

মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, জাকাত হলো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থ, জাকাত আদায়কারী (সদকা ভাণ্ডার পরিচালনাকারী) ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ (যাদের হৃদয় সদ্য সত্য গ্রহণ করেছে) প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস মুক্তির জন্য, ঋণ গ্রস্থদের জন্য, আল্লাহ্‌র পথে জেহাদকারীদের জন্য ও মুসাফিরদের জন্য, এই হলো আল্লাহ্‌র নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। সূরা তওবা, আয়াত-৬০।

হাদিস নং ১৩১৩।আল্লাহ দৈনন্দিন আমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তেমনি আমাদের উপর আমাদের ধনদৌলত ছদকাহ ফরজ করেছেন। তা ধনীদের নিকট হতে সংগৃহীত করে গরীবদের মধ্যে প্রদান করতে হবে।

জাকাত স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এমন মুসলিম নর-নারী আদায় করবে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। তবে এর জন্য শর্ত হলো—

যেমন:-

১/ সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।

২/সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে।

৩/ নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।

৪/ সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধু জাকাত ফরজ হবে।

৫/ জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত।

৬/ কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে।

জাকাত শুধু মুসলমানদের দেয়া যাবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না। জাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হলো কোনো ধরনের বিনিময় ছাড়া নিঃস্বার্থভাবে উপযুক্ত ব্যক্তিকে জাকাতের পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেয়া। (রদ্দুল মুহতার)

যাদের কে জাকাত দেওয়ার বিধান রয়েছে।

যেমন:-

১.দ্বীনি এলেম পড়নে ওয়ালা এবং পড়ানে ওয়ালা যদি জাকাতের হকদার হয়, তাহলে এরূপ লোককে জাকাত দেওয়া সবচেয়ে উত্তম।

২. তারপর জাকাত পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য নিজের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য তারা।

৩.তারপর বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য তারা।

৪,যাদের উপর ঋণের বোঝা চেপেছে।

৫. যারা আল্লাহর রাস্তায় শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত।

৬. মুসাফির ব্যক্তি ( বাড়ীতে সম্পদশালী হলেও) সফরে রিক্তহস্ত হয়ে পরলে।

৭.জাকাত দাতার ভাই-বোন, ভাতিজা- ভাতিজী, ভগ্নিপতি, ভাগ্না- ভাগ্নী, চাচা-চাচী, খালা-খালু, ফুফা-ফুফী, মামা-মামী, স্বাশুড়ী, জামাই, সৎ বাপ ও সৎ মা ইত্যাদি (যদি এরা গরীব হয়)।

৮. নিজের গরিব চাকর-নওকর বা কর্মচারীকে দেওয়া যায়।

জাকাত দেয়ার পদ্ধতি হচ্ছে জাকাত নির্দিষ্ট করে তা তার প্রাপকদের কাছে নিজে সরাসরি অথবা নিজের লোক দিয়ে পৌঁছে দিতে হবে। আর শাড়ি লুঙ্গি জাকাত দেওয়ার কোনো বিধান ইসলামে নেই। যদি ও আমাদের দেশে বেশীর ভাগই শাড়ী , লুন্জ্ঞি জাকাত গায়ে থাকেন।জাকাত দেয়ার নিয়ম হলো এমনভাবে জাকাত দিতে হবে যে, সারা বছরে বছরের জন্য তার যেন দারিদ্র্য দূর হয়ে যায়।

যাকাত একটি ফরয বিধান। সুতরাং যাকাত ফরয জেনেও যদি কোন ব্যক্তি তা অস্বীকার করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যে যাকাত প্রদানে কৃপণতা করবে বা পরিমাণের চেয়ে কম দিবে, সে লাঞ্চনা ও কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে।

ফিতরাহ রোজার মধ্য ভূল গুলিকে শুদ্ধি করে দেয়। আর জাকাত রোজার ভূল গুলিকে শুদ্ধি করে দেয়। আল-হাদিস।

আল্লাহ আমাদের সবাই কে ইসলামের বিধান অনুযায়ী । হাদিস মোতাবেক জাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন আমিন।


Similar Posts