ব্রেক্সিটে-ব্রিটেনের তরুন প্রজন্মের চাকরির অনিশ্চয়তা।
এবং বাংলাদেশী স্টুডেন্টরা পরতে পারেন মহা বিপদে।

মো: রেজাউল করিম মৃধা।
ব্রেক্সিট নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। বিশেষজ্ঞরা একের পর এক তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের গবেষনা থেমে নেই। কি হবে ব্রিটেনের ভবিষ্যত ? এ নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েই চলছে। তরুন প্রজন্মের ভবিষ্যত নিয়েই বেশী ভয়ে আছেন গবেষকরা।
যদিও একটি গবেষনায় উঠে এসেছে ব্রিটিশ পাসপোর্ট হচ্ছে বিশ্বর সবচেয়ে শক্তিশালী কিন্তু সেই শক্তিশালী পাসপোর্ট রক্ষা করতে হলে অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হতে হবে। অর্থনৈতিক চাঁকা স্বচল রাখতে নতুন এবং তরুন প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হবে। গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী তরুন প্রজন্মকে কাজে লাগাতে ব্যার্থ হতে পারে ব্রিটেন।
রেক্সিট ব্রিটেনের ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্মকে চাকরির বাজারে সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে বোঝাই যাচ্ছে। একটা উদাহরণ দিই তাহলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানিতে ৩০ লাখ দক্ষ শ্রমিক ও কর্মীর ঘাটতি হবে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক বা কর্মচারী খাটতি হবে। এবং ব্রিটেনের নতুন প্রজন্ম ব্রিটেনে তাদের যোগ্যতা বা চাহিদা অনুযায়ী কাজ না পাওয়াতে হতাশার সৃস্টি হবে কেননা এই প্রজন্মের লোকেরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে উচ্চ পদে কাজ করতেন। এখন নিজের দেশে নিম্ন বেতনে কাজ করতে বাধ্য হবেন।
ব্রেক্সিটের পর এই কাজগুলো আর ব্রিটেনের ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্মের কাছে এতটা সহজলভ্য হবে না। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের তরুণ প্রজন্ম আগে ইচ্ছা করলেই ইউরোপের যে কোন দেশে সহজেই চাকরি নিয়ে তাদের বেকারত্ব দূর করতে পারত।
এছাড়া ব্রিটিশ কর্মীদের একটা ভাল চাহিদা সারা ইউরোপ জুড়েই ছিল। ব্রেক্সিট হয়ে যাওয়ার কারণে সেই সুযোগ আর থাকছে না।
লন্ডনকে আমরা কসমোপলিটন শহর হিসেবেই জানি।পৃথিবীর মোটামুটি সব বড় বড় কোম্পানিগুলোর একটা করে অফিস লন্ডন থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে।কিন্তু ব্রেক্সিট ইতোমধ্যে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক কেন্দ্র নামে পরিচিত লন্ডন শহরের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে লন্ডনের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ১১ শতাংশের মতো কমিয়ে ফেলেছে।
একটা সময় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো লন্ডনকে ইইউ অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করত। গোল্ডম্যান স্যাক্স, জেপি মর্গান এবং মর্গান স্ট্যানলি ইতোমধ্যে তাদের ১০ শতাংশ ক্লায়েন্টের পরিবর্তন করেছে।
ব্যাংক অফ আমেরিকা ১০০ জন ব্যাংকারকে তাদের ডাবলিন অফিসে এবং ৪০০ জন কর্মকর্তাকে প্যারিসে স্থানান্তর করেছে। এটা তো কেবল শুরু, এটা নিশ্চিত করেই বলা যাচ্ছে অন্যান্য কোম্পানিগুলোও কিছুদিন পরে এই একই পথে হাঁটা শুরু করবে।
লন্ডন থেকে পরিচালিত অধিকাংশ কোম্পানির প্রধান বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সুতরাং তারা তাদের ব্যবসা এমন কোন শহরে স্থানান্তরিত করবে যেখান থেকে সহজেই ইউরোপের বাজারে ব্যবসা করা যায়। লন্ডন কেন্দ্রীক ব্যাবসা ছড়িয়ে পরবে সারা ইউরোপ জুড়ে।
ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটা সম্ভাবনাময় ক্ষতি ও হুমকির দিকেই এগুচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
ব্রেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তা চলছে সেই ২০১৫ সাল থেকে। যার ফলে ইউকে অফিস ফর ন্যাশন্যাল স্ট্যাটিস্টিক্স এর ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশে এ নেমে এসেছে।
বৃটিশ সরকার আরও অনুমান করেছে যে ব্রেক্সিটের ফলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।
বোর্ড অফ গভনর্স অফ দ্য ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, এই ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের দিন ব্রিটিশ পাউন্ড ১ দশমিক ৪৮ ডলার থেকে পরের দিন ১ দশমিক ৬ ডলারে নেমে আসে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপপ্রবাহ এবং খরার প্রবণতার কারণে গত দুই দশক ধরে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন কমে গিয়েছে। এছাড়া ব্রেক্সিটের আগে ব্রিটেনের কৃষি সেক্টরে কাজ করার জন্য রোমানিয়া ও অন্য ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ শ্রমিক কাজ করতে আসতো এবং ব্রেক্সিট চুক্তির আগে ইউকে ইইউ-এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারত।
ইইউ পরিবেশ সুরক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং শক্তিতে তাদের সদস্যদের এই প্রযুক্তিগুলো সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু ব্রেক্সিট হয়ে যাওয়ার কারণে ইউকে এখন থেকে এই সুবিধাগুলো আর পাবে না। যার ফলে কৃষি সেক্টরে কর্মী সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ব্রিটেনের নতুন প্রজন্ম কৃষি কাজে অপারগ বা কাজ করতে চাচ্ছেন না নতুন প্রজন্ম যদি কৃষি কাজ সহ অন্যান্য হার্ড ওয়ার্ক না করেন তবে ব্রিটেনের অর্থনীতি আরো বিপর্যস্থ্য হবে এটার কোন সন্দেহ নেই।
ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে ইউকেতে যারা পড়তে আসবেন তাদের নিয়ে কিছু কথা বলা ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ব্রিটিশ সরকারের বিশাল পরিমাণ ইনভেস্টমেন্ট এর দরকার হবে।
উদার অর্থনীতির এই যুগে ব্রিটিশ সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা পণ্যে রূপান্তরিত করেছে। এই শিক্ষা সেক্টর থেকে ব্রিটিশ সরকার প্রচুর রাজস্ব আদায় করে। শিক্ষা সেক্টর পৃথিবীর সবার শীর্ষে ব্রিটেন এই শিক্ষা সেক্টরের সবার জন্য উন্মুক্ত করবে ব্রিটেন।এই শিক্ষা সেক্টর দিয়ে স্টুডেন্ট আনার মধ্য দিয়ে আবার ঘরে দাঁড়াবে ব্রিটেন।
ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ব্রিটিশ সরকার উদার হস্তে খুলে দেবে দ্বার।অনেক ভূঁইফোড় কলেজ এখানে নতুন করে স্থাপিত হবে। বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে পড়তে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা হুমকি খেয়ে পরবে।যে কোন ভাবেই পাড়ি জমাতে চাইবে ব্রিটেনে।
স্টুডেন্ট হিসেবে ব্রিটেনে আসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে একটু খেয়াল রাখা।
১/ কোন কলেজ বা ইউনিভার্সিটি যাচ্ছেন তার খোঁজ খবর নেওয়া।
২/ কাজ করতে পারবেন কি পারবেন না ? টিউশন ফি কত এবং বিভাবে দিবেন?
৩/ কলেজ বা ইউনিভার্সিটি গুলির পূর্বের ইতিহাসটা ভালো করে দেখে নিবেন।
৪/ শুধু মাত্র এজেন্সি বা দালালদের কথায়ই চোখ বন্ধ করে আসবেন না।
৫/ বাংলাদেশে অনেক এজিন্সি আছে যারা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্বপ্ন দেখায়। তারা বলে পার্টটাইম কাজ করে টিউশন ফি দিয়ে খুব সহজেই এখানে মানিয়ে নেয়া যায়।
৬/ বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এটা পৃথিবীর বড় মিথ্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্টুডেন্টদের ভিসা ব্যাবসা।
৭/ আপনি নিজেই ওয়েব সাইডে গিয়ে সকল তথ্য খুব সহজে পেতে পারে। তাই শুধু এজেন্সীর কথায় পাগল হবেন না । বুঝেঁ জেনে শুনে আসবেন।
৮/ যে জিনিস আপনার লাগবে।
ক) শিক্ষাগত সার্টিফিকেট ।
খ) ইংরেজী কথা বলার পারদর্শিতার সার্টিফিকেট ।
গ) যে কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে আসবেন তার থেকে সার্টিফিকেট বা আমন্ত্রণ পত্র ।
ঘ) ব্যাংক হিসাব পত্র। বা ব্যাংকে টাকা জমা দেখানো।
ঙ) শারীরিক ভাবে স্বক্ষমতা ।
চ) পাসপোর্ট সহ আনুসাংগিক কাগজ পত্র।
এই গুলি আপনার লাগবেই। এগুলি সম্পর্ন করার পর ওয়েব সাইডে দিয়ে সবকিছু ভালো ভাবে দেখুন এবং পরে সরকার অনুমোদিত কোন এজেন্সীর সাথে কাজ করুন।
মাত্র কয়েক বছর আগেও স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে এসে প্রতারিত হয়েছিলেন হাজার হাজার মেধাবী স্টুডেন্টরা । তাদের জীবনের করুন কাহিনী আমাদের সকলের জানা।
ব্রেক্সিটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ থেকে আসা কঠিন হচ্ছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ বা কমনওয়েলথ দেশ থেকে ব্রিটেনে আসা সহজ হচ্ছে। ব্রিটেনে স্টুডেন আসা সব সময় স্বচল থাকলেও এখন সেটি আরো সহজ হবে। সেই সুযোগে অনেক এজেন্সী গুলি প্রতারনার সুযোগ নিবে। প্রতারনা থেকে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। তা না হলে স্টুডেন্ট হিসেবে ব্রিটেনে এসে পরতে পারেন মহা বিপদে।