“ফ্রিডোম ইন আওয়ার হ্যান্ড”
ইইউ থেকে চুরান্ত ভাবে বেড়িয়ে এলো ইউকে।
১লা জানুয়ারি থেকে ব্রেক্সিটের নতুন নিয়ম চালু।

মো: রেজাউল করিম মৃধা।
ব্রিশটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন,” ইউকে আজ থেকে ফ্রিডম ইন আওয়ার হ্যান্ড,”। স্বাধীন ভাবে আমরা আমাদের সরকারের সকল সিদ্ধান্ত নিতে পারবো এবং সবার চেয়ে আমরা ভালো থাকবো,”।নতুন বছর আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো কিছু নিয়ে আসবে’”।
ইউকে অফিসিয়াল ভাবে ২৭ দেশ থেকে পলিটিক্যাল এবং ইকোনোমিক ব্লক থেকে এলো যার রায় দিয়ে ব্রিটেনের জনগন ২০১৬ সালের জুন মাসে সেই রায়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো ২৪শে ডিসেম্বর ২০২০। এবং ব্রেক্সিট নিয়ম কার্যকর হলো ১লা জানুয়ারি ২০২১ থেকে।
১লা জানুয়ারি ইউকে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নাগরিক ও পণ্যের অবাধ চলাচল এবং সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এটি ইউকে বটেই সমগ্র ইউরোপের মানুষেরই জীবনযাপন, কাজ এবং ভ্রমণে ব্যাপক প্রভাব পরবে। বেশ কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
ইউরোপীয় ভ্রমণ আইনে পরিবর্তন:-
এখন থেকে ইউকের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া কেবল মাত্র শেনজেন এরিয়াভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে পারবে। এরমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশই রয়েছে। তবে প্রতি ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিনের জন্য এই ভিসাহীন ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যাবে। এছাড়া, আয়ারল্যান্ড ছাড়া এসব দেশ সফরে গেলে পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত ৬ মাস থাকতে হবে। ভ্রমণ ইন্স্যুরেন্স থাকতে হবে। সীমান্তে ইইউভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য যে লাইন থাকে এখন সেখানে আর দাড়াতে পারবে না বৃটিশ নাগরিকরা। তবে করোনাকালীন সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক গুরুত্বপূর্ন কাজ ছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোতে সফর করা যাবে না।
শুল্কমুক্ত কেনাকাটা বা শপিং চালু হবে:-
শীগগিরই উভয় পক্ষের মধ্যে চালু হচ্ছে শুল্কমুক্ত শপিং বা কেনাকাটা। ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো দেশ থেকে অনির্দিষ্ট পরিমাণ শপিং করতে পারবেন বৃটিশ নাগরিকরা এবং এতে কোনো শুল্ক প্রদান করতে হবে না। তবে তামাকজাত পণ্য ও এলকোহলজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বৃটিশ নাগরিকদের ইইউভুক্ত দেশে স্থায়ীভাবে থাকার
আইন পরিবর্তন:-
কোনো বৃটিশ নাগরিক যদি এরইমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন তাহলে সমঝোতা অনুযায়ী তিনি সুরক্ষা পাবেন। তবে তারপরেও তাকে বর্তমান রাষ্ট্রের বিশেষ নিয়মগুলো জেনে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, হয়ত কোনো দেশে নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র পুনরায় অনুমোদন করিয়ে নিতে হতে পারে। ফ্রান্সে বসবাসরত বৃটিশ নাগরিকদের নতুন করে পারমিট নিতে হবে।
সেই সাথে কোনো বৃটিশ নাগরিক যদি নতুন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাস করতে চায় তাহলে তিনি আর আগের মতো কোনো আবেদন ছাড়াই বাস, কাজ করা, পড়াশুনা কিংবা অবস্থান করতে পারবেন না। অন্য সব দেশের মতোই আগে ভিসা আবেদন করতে হবে। তবে ভ্রমণের জন্য হলে এই পদ্ধতির প্রয়োজন নেই।
যুক্তরাজ্যে থাকা ইইউ নাগরিকদের জন্য নতুন নিয়ম:-
গত বছরের শেষ দিন পর্যন্ত ইইউ কিংবা আইসল্যান্ড, লিচটেনস্টেইন, নরওয়ে বা সুইজারল্যান্ডের যেসব নাগরিক বৃটেনে ছিলেন তারা এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। তবে এরপরেও থাকতে হলে তা বৃটিশ কর্তৃপক্ষের থেকে নিশ্চিত করে নিতে হবে।
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন:-
এখন থেকে বিদেশি নাগরিকদের জন্য নতুন পয়েন্টভিত্তিক অভিবাসন চালু করেছে বৃটেন। এরফলে ইইউভুক্ত এবং অন্য যে কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকদের একইভাবে বিবেচনা করবে বৃটেন। শুধুমাত্র তাদেরকেই অভিবাসনে সুযোগ দেয়া হবে যারা বৃটেনের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। এছাড়া, শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও অন্যান্য পেশার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে ভিন্ন অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
বাণিজ্যে জটিলতা:-
যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমত হয়েছে যে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক থাকছে না। একইসঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি। তারপরেও ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের আলাদা করে কাস্টমস ডিকলারেশন লাগবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বানিজ্যের ক্ষেত্রে যে ধরণের নিয়মনীতি প্রয়োগ করা হয় এখানেও সেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ হবে। ফলে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য হলেও প্রচুর নথিপত্রের কাজ করতে হবে। যা সবমিলিয়ে বাণিজ্যকে জটিল করে তুলবে। এছাড়া, গাছের চারা, পশুপাখি এবং নির্দিষ্ট কিছু খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।
ইউকের সরকার প্রয়োজনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে আলাদা আলাদা বানিজ্য চুক্তি করবে। ইতিমধ্যে তুরোস্ক সাথে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিশেষ প্রয়োজনে অন্য যেকোন দেশের সাথে নতুন করে বানিজ্যক চুক্তি হতে পারে বলে অনেকে বিজ্ঞ জনেরাই মনে করছেন।