| |

করোনার মাঝে-ঘরে বসে,
ভিন্ন রুপে,উৎসব বিহীন,
ইংরেজী নববর্ষ ২০২১।


মো: রেজাউল করিম মৃধা।

নতুন বছরকে বরণ করতে থাকে নানা আয়োজন পৃথিবীর প্রতিটি দেশে,দেশে।বিশেষ করে উন্নত দেশ গুলিতে থাকে ভিন্ন আয়োজন। আতোষ বাজি ফুটিয়ে বর্নিল আয়োজনে নতুন বছরের শুরু। কিন্তু এবছর ২০২১ সালের বরণটা হলো ভিন্নতার মধ্য দিয়ে যা এই পৃথিবীতে কখনই হয় নাই। এবং হবে ও না। কোহাহল মুক্তি শানশান নিরবতা।তারপরও সবাইকে নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ইতালী এবং ব্রিটেনের ইংরেজী নববর্ষ উদযাপনের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা। কিন্তু কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয় নাই।সব বর্ষবরণ উৎসব ছিলো উৎসব মূখর আনন্দময়।

বাংলাদেশে গ্রামে ছাত্রজীবনে ইংরেজী নববর্ষ ঘটাকরে পালন না করলেও মনে আছে স্কুলের কিছু বন্ধু মিলে নতুন নামে ডাকো একটি দেওয়ালিকা বের করতাম।সবাইকে তার ব্যাবহার , কার্যকলাপ , লেখাপড়ার রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে নাম দেওয়া হতো এতে অনেক মজা করতাম। কারে নাম , কঁচি ডাব, ডাব্বা,টিয়া পাখি ইত্যাদি।খুব মনে আছে আনোয়ার হোসেন কে শীতের কাঁথা নাম দেওয়াতে ওর আসল নাম ঢাকা পরেছিল সবাই ওকে শীতের কাঁথা বলে ডাকতো। সেই সুন্দর দিন গুলি মনে হলে আনন্দে বুক ভরে যায়।

১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস এলাম। কয়েকদিন পরই এলো সবচেয়ে আনন্দের দিন ইংরেজী নববর্ষ। সেই নববর্ষ আনন্দ কোনদিনই মনের মাঝে মিশে আছে।প্যারিসের বন্ধুদের মুখে এই দিনটির গল্প শুনতে শুনতে দিনটির দেখার আগ্রহ বেড়ে যেতে লাগলো। সময় যেন আর কাঁটেনা। নতুন এসেছি আমার মেঝ ভাবী দুই ভাই অর্থাত মেঝভাইর দুই সালা লিটন বিয়াই ও কিরন বিয়াই বহু দিন ধরে প্যারিসে থাকেন। আমি নতুন এসেছি দুই বিয়াই আমাকে বেশ দেখভাল করেন।

কখন আসবে সেই মহেন্দ্রক্ষন? সময় যেনো আর কাটেনা।

অবশেষে এলো ৩১শে ডিসেম্বর ১৯৮৯। এর পর নতুন সূর্য আর একটি নতুন বছরের সূচনা। প্যারিসের সন্জলি গেইট নববর্ষের মূল কেন্দ্র এই স্থানের এক পাশে বিশাল মন্চে চলে স্বনাম ধন্য শিল্পীদের কন্সার্ট আর আশেপাশের সকল রাস্তা ঘাট গাড়ী চলাচল বন্ধ শুধু মানুষ আর মানুষ।

আপনারা জানেন ফ্রান্স হচ্ছে অপেন সেক্সের দেশ। এখানে প্রকাশ্যে মেয়েকে জড়িয়ে ধরা চুমু খাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার তবে আমাদের জন্য অস্বাভাবিক এবং ইতস্ততের ব্যাপার । থার্টিফাস্ট মানে যে যাকে পারে জড়িয়ে ধরবে চুমু খাবে। একে দোষের কিছু নেই। সবাই এটা আনন্দের সাথে গ্রহন করে। এটাই যেন মহাআনন্দ ।রাত ১২.০০ বাজার সাথে সাথে শ্যাম্পাইন বোতলের মুখ খোলা টুংটাং শব্দ এবং আতশবাজির শব্দ এবং বর্নীল আলোয়।এক অভুতপূর্ব সুন্দর পরিবেশ। যা নিজ চোখে না দেখলে বলে বুঝানো সম্ভব নয়।

আমরা কয়েক বন্ধু মিলে রাত বারটার অনেক আগেই মেট্রো দিয়ে সন্জলি গেইট এসে হাজির । হাজার হাজার লোক। ছেলে বুড়ো , যুবক যুবতি, নারী পুরুষ সবাই এক এখানে এসেছে নববর্ষকে বরণ করতে। আমরা এসেছি। একেবারে সন্জলি গেইট থেকে আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত এবং এর আঁশেপাশের সব রাস্তাঘাট শুধু মানুষ আর মানুষ। রাত বারটার আগে থেকেই আতশবাজির আওয়াজ এবং শ্যাম্পাইনের বোতল খুলে একে অন্য ভিজিয়ে দিচ্ছে আর কাউন্ট করে করে ঠিক বারটা বাজার সাথে সাথে মূল আতশবাজি টি বিশাল আলোয় ফুটে উঠে এবং সবাই বনানী বনানী বলে একে অপর কে জড়িয়ে ধরে নববর্ষের শুভেচ্ছা দিচ্ছে। জাতি ধর্ম সাদা কালো সবাই মিলে মহা আনন্দে নববর্ষ টি জীবনের প্রথম পালন সেই আনন্দ কখনো ভুলা যায় না।

এরপর ইতালী কেঁটে গেছে বহু বছর। পালন করেছি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ইংরেজী নববর্ষ । একটির কথা বেশ মনে আছে ইতালীর রোমের পিয়াচ্ছা নাভোনা ইংরেজী নববর্ষ উদযাপনের মূল কেন্দ্র প্রতিবছর এখানে বিশাল মন্চ তৈরী করে বিশ্বের সব দেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের দিয়ে কন্সার্ট সেখানেও হাজার হাজার মানুষ। আমরা বন্ধুদের নিয়ে বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে পিয়াচ্ছা নাভোনায় উপস্থিত এবং হেঁটে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কেননা ৩১শে ডিসেম্বর রাত থেকে ১ লা জানুয়ারী সব ধরনের বাস , মেট্রো, ট্রেন সহ সব কিছু বন্ধ থাকে।এবং নববর্ষ উৎযাপন শেষে রাতে হেঁটে বাসায় ফেরা । রাস্তায় বোতল আর বোতল এবং আতশবাজির খোসা । সেই আনন্দই অন্যরকম।

লন্ডন এসেও প্রথম বছর রাত বারটার আগেই উপস্থিত হই। টাওয়ার ব্রিজের উপর হাজার হাজার মানুষের সাথে দাঁডিয়ে দাঁড়িয়ে নববর্ষ উপভোগ করি। লন্ডনের সবচেয়ে আকর্শনীয় স্থান লন্ডন আই, লন্ডন ব্রিজ থেকে লন্ডন আই সুন্দর ভাবে দেখা যায় ।সেই নববর্ষের দৃশ্য অম্লান হয়ে থাকবে বহুকাল।

এর পরে থেকে বাংলা টিভি এবং চ্যানেল এস এ নিউজে কাজ করার সুবাদে প্রতিবছরই লন্ডন আই সামনে গিয়েছি। নিউজ করেছি। প্রতিবছর এই ৩১শে ডিসেম্বর কেঁটেছে মহা ব্যাস্ততায়। সরকারি ভাবে এই বৃহৎ নিউজ ছাড়া ও বহু সংগঠনের দাওয়াৎ থাকতো, কোন বছর হয়তো বন্ধু দের নিয়েও বিশাল ৩১শে ডিসেম্বর পার্টি হতো। এই রাতটি কোন না কোন ভাবে মহা আনন্দে উৎযাপন করা হতো।

কিন্তু এই বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বর ঘরে বসে টিভিতে ৩১শে ডিসেম্বর কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর ২০২১ কে বরণ করে নিলাম। এই নিরব রাত থেকে বিদায় হোক করোনাভাইরস মহামারি নামক ভাইরাস। নতুন ভাবে ফিরে আসুক করোনা মুক্ত সুন্দর পৃথিবী।

সরকারি বিধিনিষেধের কারনেই এই বছর ঘরে থেকেই পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হলো।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সচিব বলেছেন, লোকেরা “ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা” নেবে এবং এই নতুন বছরের প্রাক্কালে ঘরে বসে থাকলে কোভিড -১৯ ছড়িয়ে পড়তে পারে না”।

এনএইচএস ক্রমবর্ধমান চাপের সাথে, ম্যাট হ্যানকক বলেছেন “আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না”। জনস্বার্থেই এই বছর বৃহৎ গেদারিং বা বড় উৎসব বন্ধ করা হয়েছে”।

মধ্যরাতে ইংল্যান্ডের আরও প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ বিধিনিষেধের সবচেয়ে কঠোর স্তরে প্রবেশ করেছে ।

তারা ইতিমধ্যে টিয়ার-৪ নিয়মের অধীনে বাস করছেন, যার মধ্যে “বাড়িতে থাকুন” অর্ডার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং গৃহের অভ্যন্তরীণ মিশ্রণ নিষিদ্ধ বা একত্রিত হয়ে উৎসব করা ও নিষেধ।

উৎসবের চেয়ে জীবন বড় ।

বেঁচে থাকলে উৎসব করা যাবে।

প্রতিদিন যেভাবে করোনাভাইরসের আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে । মহামারি থেকে বেঁচে থাকার জন্য সরকারি নিয়ম গুলি মেনে চলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

শুভ ইংরেজী নববর্ষ ২০২১।


Similar Posts