ফেলে আসা ইতালী,স্মৃতির পাতায় , রংগীন দিন।(পর্ব-১১)
মোল্লা ভাইর বাসা প্রায় সব বাংলাদেশীদের আসা যাওয়া। ছোট খাটো মিটিং, পরামর্শ , আলোচনা, সমালোচনা এবং নতুন নতুন আইডিয়া। নতুন সংগঠন করার পরিকল্পনা। শাখাওয়াত হোসেন ভাই, মোল্লা ভাইর দোকানে কাজ করেন। পিয়াচ্ছা ভিক্টোরিয়া যেখানে প্রায় সব মানুষের আনাগোনা। বাসায় অনেকেই আসেন এর মধ্যে একদিন এলেন ফয়েজ জহির ভাই , রুমি ভাই এবং কাশেম ভাই শাখাওয়াত হোসেন ভাইর সাথে আলাপ করছেন নাটক করার জন্য। আমিও সে সময় বাসায় ছিলাম। আমি তেমন গুরুত্ব দিচ্ছিলাম না কারন নতুন কাজ। কাজ আমার কাছে প্রাধান্য। কে এলো কে গেল তেমন কোন আগ্রহ নেই। শাখাওয়াত হোসেন ভাই ডাকলেন। কাশেম ভাই জহির ভাইর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন নাটক করবো। কি নাটক হবে? কিভাবে হবে? কোন সংগঠনের মাধ্যমে হবে। এ নিয়ে শুরু হলো আলোচনা।
“ডিম আগে না মুরগী আগে”। তেমন শুরু হলো তর্কবিতর্ক এরই মধ্যে মোল্লা ভাই এসে হাজির । বাবু ভাই এলেন । কুদ্দুস ভাই এলেন। কুদ্দুস ভাই সব সময় লেট আজীবনই লেট। এলেন আরো দু একজন এলেন।“নাটক আগে নাকি সংঠন আগে”। এ তর্কের যেন শেষ নেই। কেউ বলছেন আগে সংগঠন এবার কেউ বলছেন আগে নাটক। অবশেষে দুটি একই সাথে সিদ্ধান্ত হলো ।
সংগঠন হবে এবং সংগঠনের ব্যানারে নাটক হবে। এবার সংগঠনের নাম কি হবে? সবাইকে প্রস্তাব দেওয়া হলো। আমার দায়িত্ব দেওয়া হলো লেখার। শাখাওয়াত ভাই একটি খাতা এনে দিলেন। সংগঠের নাম প্রস্তাব হতে লাগলো। আর নাটকের নাম নির্ধারনের জন্য জহির ভাইকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেল চুরান্ত সিদ্ধান্তে হলো না তবে একটি সিদ্ধান্তে সবাই একমত নাটক হবে এবং সেটা এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই মন্চায়িত হবে।দুই/তিনটি নাটকের প্রস্তাব গৃহিত হলো এবং সংগঠনের নাম প্রস্তাব ২/৩ টি থাকলো পরবর্তী মিটিংএ চুরান্ত করা হবে। লিখিত হলো মিটিং শেষ। তবে একটি চুরান্ত সিদ্ধান্ত নাটক হবে। মনের মধ্যে শুরু হলো আর এক চেতনা। পরের নির্ধারিত দিনে মিটিং সেদিন প্রথম মিটিং এর লোক ছাড়া ও নাটক প্রেমী আরো দু একজন এলেন, বাদল, আমীর । আমীর ভাই অবশ্য মোল্লা ভাইর বাসায় থাকতেন যোগ হলো ভাতিজা জাহান্গীর। সকলের সম্মতিতেই সংগঠনের নাম দেওয়া হলো “প্রবাস নাট্য দল”।
নাটকের নাম সিলেকশন হলো “ওরা কদম আলী”।সংগঠনের নাম প্রবাস নাট্য দল, সংগঠন পরিচালনার জন্য শাখাওয়াত হোসেন কে আহব্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হলো সেখানে যুগ্ন আহব্বায়ক হিসাবে আজহারুল আলিম কাশেম ভাই আমি সহ ২১ সদস্য একটি কমিটি গঠন করা হলো। পরবর্তীতে তিন মাস পর কার্যকরি কমিটি গঠন করা হলো সেখানে কাসেম ভাই সভাপতি, শাখাওয়াত ভাই সাধারন সম্পাদক এবং আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হলো সেই থেকে যত বার কমিটি করা হয়েছে । কখনো বাবু ভাই সভাপতি, সেলিম ভাই সেক্রেটারী, সিদ্দীক ভাই সভাপতি , মনির ভাই সেক্রেটারী কিন্তু আমি যত দিন রোমে ছিলাম এবং প্রবাস নাট্য দলের সাথে ছিলাম সবসময় আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। সংগঠনের জন্য কাজ করেছি। এখন যদিও দূরে তবু দোওয়া করি প্রবাস নাট্য দল। নাট্য চর্চায় কাজ করে যাবে।
১৯৯০ ডিসেম্বরে মন্চায়িত হলো নাটক। বিশাল হল রোমে এর আগে এত বড় হলে কেউ নাটক করেনি। যদিও লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে মান্নান ভাইয়ের পরিচালনায় বাংলাদেশ থিয়েটার গঠন করে কিন্তু প্রবাস নাট্য দলের কাছে তেমন গ্রহন যোগ্যতা পায় নাই। রোম শহরে প্রবাস নাট্য দল একটি সুসংগঠিত নাট্য দল। ফয়েজ জহির, রেজাউল হোসেন রুমীর , সুজাত কবীর, রিনা খানের মত বাংলাদেশের প্রতিস্ঠিত নাট্য অভিনেতা ও পরিচালকরা ছিলেন। আর আমরা কিছু বলিষ্ঠ সংগঠক ও অভিনেতা ছিলাম। “ওরা কদম আলি” নাটকে কাশেম ভাই কদম আলির বোবা চরিত্রে অভিনয় করেন। আর আমি মেইন নায়েব আলীর চরিত্রে অভনয় করে দর্শকদের মন জয় করা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার ছিলো।এছাড়া সবাই প্রাণবন্ত অভিনয় করেছিলেন। নাটক শেষে প্রতিটি দর্শক আমাদের অভিনন্দন জানিয়ে ছিলেন।
এখানে অনেক ইতালীয়ান এসেছিলেন তারাও ডাইলোগ না বুঝলেও অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে ছিলেন। ইতালীতে প্রবাস নাট্য দল বেশ কিছু নাটক মন্চস্থ করেছে।
১৯৯০ সালে মামুনুর রশীদ এর রচনা ও ফয়েজ জহিরের পরিচালনায় “ওরা কদম আলি”।
১৯৯২ সালে ইমপ্রোভাজ , রেজাউল হোসেন রুমীর পরিচালনায় “ছোবল”১৯৯১ সালে সেলিম আল দীনের রচনায় ও রেজাউল হোসেন রুমির পরিচালনায়,”বাসন”।
১৯৯২ সালে আব্দুল হালিম আজিজের রচনা ও আবুল কাশেম এর পরিচালনায় ,”লড়াই”।
১৯৯৩ সালে মামুনুর রশীদের রচনায় ও ফয়েজ জহিরের পরিচালনায়,”ইবলিশ”যে নাটকে অভিনয় করার জন্য বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন, ডলি জহুর, ফজলুর রহমান বাবু, আবুল কালাম আজাদ সহ আরো নাট্য শিল্পীরা।
১৯৯৪ সালে মনির চৌধুরীর লেখা ও সুজাত কবিরের পরিচালনায়, “কবর”।
১৯৯৪ সালে মান্নান হীরা লেখা পরিচালনা করেছেন নাট্য নির্দেশনা পরিষদ নাটক,”আদাব”।
১৯৯৫ সালে আবুল মনসুর সিদ্দিকী মনিরের লেখা এবং বাবু আলম এর পরিচালনায়,”কলা বেচা”।
১৯৯৬ সালে নিজাম উদ্দিন খান সিদ্দিকের লেখা ও পরিচালনায় ,”তোমার জন্য”১৯৯৭ সালে মনির চৌধুরীর লেখা ও রেজাউল করিম মৃধা আমার পরিচালনায়” কবর”।
১৯৯৭ সালে নিজাম উদ্দিন খান সিদ্দিকের পরিচালনায় “ জ্ঞান আলীদের বিদেশ ভ্রমন”।সকলের প্রশংসা কুরিয়েছে। এ ছাড়া ও প্রতিবছরই নতুন নতুন নাটক মন্চস্থ করে যাচ্ছে প্রবাস নাট্য দল।