২০শে যত বিষ, যত সর্বনাশ ।
মৃত্যুর কাফেলায় বিদায় ২০২০।
মো: রেজাউল করিম মৃধা । লন্ডন ।
কভিড-১৯ বা করোনাভাইরস মহামারিতে এক আতংক, হতাশা, দূর্বিসহ যন্ত্রনা এবং অনবরত মৃত্যুর ভয় নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকা। এর মাঝে চলে গেছেন নিজের আপন ছোট বোন, নিকটি আত্বীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সহ বহু জন। ফেইসবুক সহ যে কোন গনমাধ্যম খুললে মৃত্যুর সংবাদ। আর কত মৃত্যুর সংবাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে? আর কত?
এ বিশ্বে যত মহামারি, যত দূর্যোগ এসেছে তার সব গুলোই ২০শে। ১৩২০ সাল থেকে ২০২০ সাল । প্রতি ১০০ বছর পর পর এই মহামারির সৃস্টি ।এক এক সময় এক এক নামে পরিচিত। তবে প্রতিটি ২০ শে বিশ্বে ঘটেছে বিশ্বয়কর ঘটনা। বিশ এবং বিষ । সংখ্যা এবং পয়যন , সালের সাথে মিশে মহামারিতে রুপান্তরিত হয় বহু কাল থেকে।
২০২০ সালেই একমাত্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে একটি ভাইরাস কতটা শক্তিশালী ।
যার কাছে যে কোন শক্তিশালী দেশও পরাভূত । সব কিছু বন্ধকরে দিয়ে ঘরে বন্ধি থেকে রেহায় পাচ্ছেন না কেউ। যদি একবার স্বাক্ষাত মিলে করোনার সাথে তাহলে করুণা মিলে না।
কি ধনী, কি গরীব, সাদা কি কালো, হিন্দু কি মুসলিম বা অন্য ধর্মের । সাগরে ভাসমান কিম্বা আকাশে উড্ডয়মান, স্থলে কিম্বা পাহাড় জন্গলে । কি ঠান্ডা কি গরমে সব খানেই সর্রব উপস্থিতি করোনাভাইরসের।করোনার কাছে সবাই সমান।
অন্যান্য সময় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট এলাকায় বা
একটি দেশে বা মহাদে মহামারি দেখা দিত। কিন্তু ২০২০সালে কভিন১৯ করোনাভাইরস সারাপৃথিবীতে মহামারি দিয়েছে। কেউ বলছেন এটা মানুষের সৃস্টি আবার কেউ বলছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব বা বালা মসিবত ।
২০১৯ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি প্রথমে চীনের উহান থেকে উৎপত্তি হলেও পরে ছড়িয়ে পরে সারা বিশ্বে। লক ডাউনের মাধ্যমে এক এক করে বিছিন্ন হয়ে পরে প্রতিটি দেশ।উহানের সেই করোনা কিছুটা সামাল দিতে না দিতেই ব্রিটেন থেকে আরো ৭০ গুন বেশী শংক্রামন শক্তি নিয়ে নতুন করে করোনার আতংক সৃস্টি হয়েছে। ব্রিটেনের সাথে আজ পুরো বিশ্ব প্রায় বিছিন্ন।
তবে যাইহোক :
আসুন এক নজরে দেখে নেই কোন সালে কি কি ঘটেছিল বিশ্বময়:
১৩২০ সালঃ ‘ দ্য ব্লাক ডেথ অব বুবনিক’- উৎপত্তিস্থল- ইউরোপ,মৃত ২০০ মিলিয়ন মানুষ।বাহক- কালো ইঁদুর ও মাছি।
——-
১৪২০ সালঃ ‘দ্য এওইডেমিক অফ ব্লাক ডেথ প্লেগ’- উৎপত্তিস্থল- রোম, বাহক -কালো ছুঁচো ও কাঠবেড়ালি।
মৃত- ১ লক্ষ।
———-
১৫২০ সালঃ ‘স্মল পক্স’- উৎপত্তিস্থল- ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ,বাহক স্পানিক বণিকদের দল। মৃত- ৩৫ হাজার।
——-
১৬২০ সালঃ ‘মে ফ্লাওয়ার’- উৎপত্তিস্থল- লন্ডন, বাহক- কালো মাছি। মৃত- ২.৫ লক্ষ।
———
১৭২০ সালঃ ‘ দ্য গ্রেট প্লেগ অফ মার্সেই’- উৎপত্তিস্থল- ফ্রান্সের মার্সেই শহর, বাহক- গোঁফওয়ালা ইঁদুর। মৃত- ১০ লক্ষ। গণকবর দেওয়া হয়।
——-
১৮২০ সালঃ ‘কলেরা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইয়েলো ফিবার’-
কলেরার উৎপত্তিস্থল- কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলে দাগেস্তান (রাশিয়া।) বাহক- ভিব্রিও কলেরী ব্যাকটেরিয়া। সারা বিশ্বে কলেরায় মৃত প্রায় ৩.৫ কোটি।
——-
১৯২০ সাল ‘দ্য স্পানিস ফ্লু’- উৎপত্তিস্থল- স্পেনের মাদ্রিদ শহর। বাহক- মশা, মৃত প্রায় ৮.৫ কোটি।
——-
তথ্য সাহায্য :WHO.
২০২০ সালঃ ‘ কোভিড ১৯’ উৎপত্তিস্থল- চিনের উহান প্রদেশ। মৃত্যু সংখ্যায় প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন মৃত্যুর মিছিল। হয়তোবা সব রেকর্ড ভেজ্ঞে গড়ছে নতুন রেকর্ড ।
আগামীতে কি দিন অপেক্ষা করছে আমরা জানিনা। তবে এটুকু জোর গলায় বলতে পারা যায় এই মহামারী মানুষের গৃহবন্দী অবস্থার প্রতিরোধে প্রতিহত হবেই হবে।
আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। রোগের উপসর্গ লুকিয়ে রাখবেন না। চিকিৎসার সব ব্যবস্থা আজ হাতের মুঠোয়। প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে বাঁচিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করুন। এতে দেশ ও জাতি উভয়েই বাঁচবে।
এপর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।৮২.৭ মিলিয়ন মানুষ এবং মৃত্যু বরন করেছেন ১.৮ মিলিয়নের ও বেশী মানুষ।
ব্রিটেনে করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় (বুধবার) রেকর্ড সংখ্যক ৯৮১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৫০,০২৩ জন।
ইংল্যান্ডের তিন চতুর্থাংশ টিয়ার-৪ কোভিড বিধিনিষেধের সবচেয়ে কঠোর স্তরে।
মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) থেকে ইংল্যান্ডের আরও ২০ মিলিয়ন মানুষ কোভিড বিধিনিষেধের সবচেয়ে কঠোর স্তরে যোগ দেবে।
মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে।
ঘরে থাকুন , সুস্থ্য থাকুন, অপরকে সুস্থ্য থাকতে সহযোগিতা করুন। সরকারী বিধিনিষেধ মেনে চলুন।
বারবার হাত পরিস্কার করুন,মুখে মাক্স ব্যাবহার করুন,
সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখুন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করবে।আমিন।
মৃত্যুর কাফেলায় বিদায় ২০২০ সাল।