| | |

১৪ই ডিসেম্বর এক কলংক অধ্যায়,
মেধা শূন্য বাঙালি জাতি।


মো: রেজাউল করিম মৃধা।

হতভাগা বাঙালী জাতি।১৪ই ডিসেম্বর বাঙালী জাতির জন্য এক কলংকময় অধ্যায়।এই দিনে হত্যাকার হয় বাংলাদেশের শ্রেস্ঠ সন্তানদের, শ্রেস্ঠ বুদ্ধিদীপ্ত মেধাবী মানুষদের। যারা অস্র হাতে না নিলেও তাদের সুদূর প্রসারি চিন্তা শক্তি দেশকে নিয়ে যেতো বহুদূর।তাদের মনন এবং চিন্তাশক্তি ছিলো সুদূর প্রসারি।

সেই মেধাবী মানুষ গুলিকে একে একে হত্যা করেছিলো।বাঙালী জাতিকে মেধাহীন করে রাখার সুপরিকল্পনা ছিলো পাকিস্তানী শাসক গোস্ঠীদের অনেক আগে থেকেই।যখন দেখলেন। যুদ্ধে বাঙালিদের কাছে নিশ্চিত হেরে যাচ্ছে। তখন তাদের পরিকল্পনা ছিলো সুদূর প্রসারি। পাকিস্তানীরা জানতেন জাতিকে মেধা শূন্য করে দিতে পারলে সে জাতি আর যাইহোক মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য তাদেরই কিছু অনুসারি তাদের ধূসরদের দিয়ে বাংগালী জাতির মেধা বা বুদ্ধিদীপ্তদের ধরে ধরে হত্যা শুরু করে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগী আলবদর-আলশামস নামের মিলিশিয়া বাহিনীর লোকেরা ঢাকা এবং দেশের অন্যত্র স্থানের বাঙালি অধ্যাপক, শিল্পী, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, ও সাংবাদিকদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগ মুহূর্ত দিন গুলি হয়ে উঠে বুদ্ধিজীবিদের হত্যার মহাউৎসব। তালিকা করে করে বুদ্ধিজীবিদের ধরে এনে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে বা বধ্য ভূমিতে তাদের হত্যা করা হয়। সেই থেকে আমরা মেধা শূন্য।

১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে ঘটে এক মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ। তারা বেছে বেছে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে।

পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে।

নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকবাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদেরই ছত্রচ্ছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী।

১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বুদ্ধিজীবীদের

ক/ ৯৯১ জন ছিলেন শিক্ষাবিদ,

খ/ ৪৯ জন চিকিৎসক,

গ/ ৪২ জন আইনজীবী এবং

ঘ/ ১৬ জন সাহিত্যিক, শিল্পী ও প্রকৌশলী।

এরা কেউ নিজেদের বুদ্ধিজীবী দাবি করেননি, কিন্তু সত্যিকার বুদ্ধিজীবীর কাজগুলো করেছেন। তাঁরা আমাদের সংস্কৃতির সংগ্রামে, সংস্কৃতির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, তাঁরা সংগ্রাম-রাজনীতির বার্তাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন।

১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসরদের সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। এই পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। বন্দী অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ

পাকিস্তানীরা জানতেন জাতিকে মেধা শূন্য করে দিতে পারলে সে জাতি কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। সেই পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন ও করেছেন। তালিকা অনুযায়ী তারা দেশের বুদ্ধিজীবিদের রাতে অন্ধকারে চোখ বেঁধে নিয়ে নির্জন স্থানে অথবা বধ্য ভূমিতে গুলি করে অথবা গ্রানেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। সেই নির্দয় লোমহর্স কাহিনী প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর এলে চোখের সামনে ভেঁসে উঠে।

বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকায় ছিলেন।

১/ঢাকা বিভাগে ২০২ জন শিক্ষক ও ১০ জন আইনজীবী।

২/ চট্টগ্রাম বিভাগে ২২৪ জন শিক্ষক ও ১০ জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়।

৩/ খুলনা বিভাগে ২৮০ জন শিক্ষক ও ছয়জন আইনজীবী,

৪/ রাজশাহী বিভাগে ২৬২ জন শিক্ষক ও ১৫ জন আইনজীবীকে হত্যা করা হয়।

২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবী পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ হারান। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

(তালিকাটি ইউকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত )

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

1. ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র)

2. ড. মুনীর চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)

3. ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)

4. ড. আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য)

5. ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস)

6. ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য)

7. ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা)

8. ড. এ এন এম ফাইজুল মাহী (শিক্ষা)

9. হুমায়ূন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য)

10. রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য)

11. সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা)

12. ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান)

13. এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান)

14. এ মুকতাদির (ভূ-বিদ্যা)

15. শরাফত আলী (গণিত)

16. এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা)

17. অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা)

18. এম এ সাদেক (শিক্ষা)

19. এম সাদত আলী (শিক্ষা)

20. সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস)

21. গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস)

22. রাশীদুল হাসান (ইংরেজি)

23. এম মর্তুজা (চিকিৎসক)

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

1. ড. হবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ)

2. ড. শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত)

3. মীর আবদুল কাইউম (মনোবিজ্ঞান)

চিকিৎসক

1. অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)

2. অধ্যাপক ডা. আব্দুল আলিম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)

3. অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দীন আহমেদ

4. ডা. হুমায়ুন কবীর

5. ডা. আজহারুল হক

6. ডা. সোলায়মান খান

7. ডা. আয়েশা বদেরা চৌধুরী

8. ডা. কসির উদ্দিন তালুকদার

9. ডা. মনসুর আলী

10. ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা

11. ডা. মফিজউদ্দীন খান

12. ডা. জাহাঙ্গীর

13. ডা. নুরুল ইমাম

14. ডা. এস কে লালা

15. ডা. হেমচন্দ্র বসাক

16. ডা. ওবায়দুল হক

17. ডা. আসাদুল হক

18. ডা. মোসাব্বের আহমেদ

19. ডা. আজহারুল হক (সহকারী সার্জন)

20. ডা. মোহাম্মদ শফী (দন্ত চিকিৎসক)

অন্যান্য

1. শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক)

2. নিজামুদ্দীন আহমেদ (সাংবাদিক)

3. সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক)

4. সিরাজুদ্দীন হোসেন (সাংবাদিক)

5. আ ন ম গোলাম মুস্তফা (সাংবাদিক)

6. আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার)

7. ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ)

8. রণদাপ্রসাদ সাহা (সমাজসেবক এবং দানবীর)

9. যোগেশ চন্দ্র ঘোষ (শিক্ষাবিদ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক)

10. জহির রায়হান (লেখক, চলচ্চিত্রকার)

11. মেহেরুন্নেসা (কবি)

12. ড. আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ)

13. নজমুল হক সরকার (আইনজীবী)

14. নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক, আয়ুর্বেদিক চিকিৎস)।

১৪ই ডিসেম্বর প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশের সব স্থানে পালিত হয়। সেই সাথে বিশ্বের যেখানে বসবাস করছেন বাংলাদেশীরা সেখানেও দিন টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।

বাংলাদেশের রাজধানীর মিরপুরে বুদ্ধিজীবি শহীদ মানার এবং রায়ের বাজার বদ্ধ ভুমিতে নির্মিত শহীদ মিনার, মেহের পুর বুদ্ধিজীবি শহীদ মিনার সহ বিভিন্ন স্থানে ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এই সকল বুদ্ধিজীবিরা বেঁচে থাকলে তাদের মেধা, বুদ্ধি এবং শ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ সত্যিকারের সোনার বাংলা। আজ আমরা মেধাহীন বুদ্ধি জীবিহীন । তবুও এগিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেস্টা।সকল বুদ্ধিজীবিদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

(তালিকা সংগ্রীহিত)


Similar Posts