সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই সঠিক ইতিহাস।
মোঃ রেজাউল করিম মৃধা।
বিজয় দিবস ২০২৪ শুভেচ্ছা।গর্বে আমাদের বুকটা ভরে যায়।৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের লাল সবুজের পতাকা এবং আমাদের নিজস্ব মানচিত্র এক খন্ড বাংলাদেশ।
৫ই আগস্ট ২০২৪ আর একটি নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে।তরুণ টগবগে যুবকদের তাজা রক্তের বিনিময় ও ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যান শেখ হাসিনা ।যাদের রক্তের বিনিময় অর্জিত ৫ই আগস্ট
সেই সকল বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। আর এ অর্জন একদিনে সম্ভব হয়নি। এর জন্য বাঙালি জাতির ছিল সুদীর্ঘ তপস্যা ,সাধনা,চেস্টা ,ঐক্যবন্ধ সংগ্রাম এবং মুক্তিযাদ্ধ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর আমরা পাকিস্তানীদেরকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করি।
সেই অর্জন জন্য যার যে অবস্থান তাকে সেই ভাবেই মূল্যায়ন করা আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার হওয়া উচিৎ। কিন্তু আমরা দেখি রাজনৈতিক পটভূমিতে পরিবর্তন হওয়ার সাথে লাথে ইতিহাস পাল্টে যায়।যে যারমত করে ইতিহাস লিখেন তখনই নেমে আসে অন্ধকার। সঠিক ইতিহাস জানতে ,জানাতে এবং লিখতে হবে।সঠিক ইতিহাস ছাড়া দেশ স্বম্বৃদ্ধি অর্জন হব কি করে?
এরপরও আশা নিরাশার মাঝে প্রতাশা এবং প্রাপ্তি অনেক। অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়েছে অনেক দূর। যেখানে বাংলাদেশকে বলা হতো “তলা বিহীন ঝুড়িঁ” আজ সেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ। অর্থনীতিতে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে।
গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি এক সাফল্যের স্বারক, প্রবাসীরা হচ্ছে অর্থনীতি চাকা স্বচল রাখার অন্যতম শক্তি। ডিজিটাল পাওয়ার আমাদের এগিয়ে নিয়েছে অনেক খানি পথ। ৬শত হাজার আইটি ফ্রি ল্যান্স বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এক অনন্য সাফল্য।রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নতি এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমল পরিবর্তন বাংলাদেশ আজ মহান উচ্চতায় উঠেছে। স্বাধীনতা পর আমাদের দেশ অনেক দুর এগিয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা তারমধ্যে অন্যতম।বাংলাদেশ মূলত গ্রামভিত্তিক দেশ। এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও তাই উন্নত দেশের মতো হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য সাফল্যের সঙ্গে বর্তমান সরকার আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। কী গ্রাম, কী শহর, দেশের সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখি, আমাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। বিশেষ করে, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপনে যে কী কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে তা সবার জানা।
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেক সফলতা এনেছে।তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে নেই। শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দেশে তথ্যপ্রযুক্তিগত নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে, তাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্বের। এক সময় বাংলাদেশ নামটির সঙ্গে যেভাবে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, দুর্নীতি ইত্যাদি যুক্ত হয়ে পড়েছিল, তা বর্তমানে আর নেই বললেই চলে।
তবে এখনো রয়েছে অনেক ব্যার্থতা।রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ আমাদের ভবিষ্যত কে এক চ্যালেন্জের মুখে ঠেঁলে দিচ্ছে। বিচার বিভাগ থেকে জনগনের আস্থা ও বিশ্বাস উঠে গেছে । ঘুষ দূর্নীতি এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে।মানবাধিকার নেই বললেই চলে।মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বারংবার।
তারপরও সকল বাঁধা পেরিয়ে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যতটা উন্নত হয়েছে তারচেয়েও আরো উন্নত হতে পারতো। সরকার থেকে শুরু করে আমাদের সবাইকে এক সাথে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
বারবার ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে আমাদের ইতিহাস। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং যে দল যখন ক্ষমতায় এসেছে তাদের সুবিধা মত ইতিহাস রচনা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। সঠিক ইতিহাস যদি লেখা না হয় তবে ইতিহাস ই তাদের শিক্ষা দিবে। আজ না হোক কাল, কাল না পরশু ঘুরে ফিরে ইতিহাস সঠিক হবে । মনে রাখবেন ইতিহাস কাওকে কখনো ক্ষমা করে না।
গত ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের আর এক অধ্যায় সৃস্টি হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গনউদ্ভুদ্খানের মাঝে শেখ হাসিনার সরকার পদতাগ করে পালিয়ে গেছেন ভারতে।গঠিত হয়েছে অন্তরবর্তীকালীন সরকার এই আন্দোলনে ও দেশ স্বাধীন করার জন্য যে। সব বীর মুক্তিযাদ্ধারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। তাদের রক্তের ঋন আমরা কি শোধ করতে পেরেছি?
যে সব মা বোন দের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা তাদের জন্য কি করতে পারছি? দেশের জন্য যারা অকাতরে আত্বহুতি দিয়েছেন।সেইসব মহান ব্যাক্তিদের চাওয়া একটি সুন্দর সম্বৃদ্ধ সুখী সুন্দর সজলা সুফলা স্বাধীন বাংলাদেশ।
রাজনৈতিক কারনে শুধু কাঁদা ছুঁড়াছুডি না করে সত্যকে স্বীকার করি। যার যেখানে অবস্থান, কাদের কাজের পূর্ন স্বীকৃতি দিয়ে দেশ সেবায় এগিয়ে আসি।অবশ্য রাজনৈতিক দলের বাইরে কিছু সামাজিক সংগঠন তাদের বক্তিতায় সাহস দুই নেতাকে স্বীকার করে বক্তিতা দেওয়ায় কিছুটা হলেও সত্য বেড়িয়ে আসছে।সত্য বলাতে শত্রুরা হয়তো তেরে আসবে তবে সত্যের কাছে অবশ্যই হেরে যাবে।
এখন পাঠ্যপুস্তকে নতুন করে ইতিহাস লেখা হচ্ছে। এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ে যোগ হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের গল্প। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ফিরছেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু পরিবারের যেসব অতিরঞ্জিত ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হয়েছিল, তা বাদ যাচ্ছে।
এমনকি তাকে নিয়ে রচিত কবিতাও বাদ যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে যে উপাধি দেওয়া হতো তা বাদ যাচ্ছে। তবে তিনি যখন থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধি পেয়েছিলেন তখন থেকে সেই উপাধি থেকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মওলানা ভাসানী ও জাতীয় চার নেতার অবদান পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে।
সেইখানে ইচ্ছেমত লেখা হচ্ছে।যারা এখন এই সব যুক্তি দিচ্ছে? তাদের সন্মানের সাথে শ্রদ্ধা রেখেই বলছি। সঠিক ইতিহাস লিখুন। ইতিহাস যুক্তি দিয়ে হয় না। সৃস্টি থেকেই ইতিহাস।পিতা পিতাই থাকেন। কে স্বীকার করলো কি করলো না। অতে পিতার কিছুই যায় আসে না।জাতীর পিতা বংগবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। আজ হোক কাল হোক আপনাকে স্বীকার করতে হবে। যেমনি ভাবে আজ স্বাধীনতা ঘোষকের নাম আসছে ঠিকে তেমনি একদিন জাতির পিতার নামও আসবে।তাই আমরা চাই সঠিক ইতিহাস যা কোন দিন পরিবর্তন হবে না।
আমরা চাই মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত যার যে অবস্থান তাকে সেই ভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।সঠিক মূল্যায়ন অবশ্যই করতে হবে। সঠিক ইতিহান না লেখার করনে অনেকেই ইতিহাসের আস্তাকূড়ে চলে গেছে। ইতিহাস শুধু স্বাক্ষী হয়ে আছে। ইতিহাস থেকেই আমাদের শিক্ষা গ্রহন করতে হবে।
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে । তাদেরকেও ইতিহাসের পাতায় স্থান দিতে হবে তবে এই নয় যে নতুন করে দ্বিতীয় স্বাধীন হয়েছে। আমরা বলতে পারি একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। তার ইতিহাস ও স্থান পাবে। যাতে পরবর্তীতে প্রজন্ম ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
মহান বিজয় দিবসে জাতির জনক বংবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এমএজি উসমানী, আবদুল হামিদ খান ভাষানী,স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, জাতীয় চার নেতা, হোসেন শহীদ সরোয়ারদী, একে ফজলুল হক সহ ত্রিশ লক্ষ মানুষের আত্মদান, অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়েছেন এবং ৫ই আগস্ট যারা জীবন দিয়েছেন সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।