| |

লাল পাসপোর্টে নীল বেদনা।
সন্দেহ বসত স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ। (পর্ব -৩)
স্ত্রী ঘর থাকলে ও অসহায় স্বামীর কি হবে?


মো: রেজাউল করিম মৃধা ।

লাল পাসপোর্টে নাল কস্টের এ পর্বে যার কথা বলছি তিনি আমার অতি প্রিয় বন্ধু। শুধুই প্রিয় তা নয় তিনি বিশ্বস্থ, অমায়িক, ভদ্র ,স্বচ্ছ,সৎ এবং একজন পরিশ্রমি একজন মানুষ।সৎ এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে যথেস্ট সম্পদ করেছেন।ইতালী থেকে দেশে গিয়েছেন। বিয়ে করেছেন। স্ত্রী স্ন্তানদের ইতালী নিয়ে এসেছেন। এমন কি উচ্চ শিক্ষা এবং সন্তানদের ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে লন্ডনে এসে সেটেল্ট হয়েছেন।

সব কিছুই স্বাভাবিক আরো ১০ জনের মত চলছিলো তাদের জীবন জীবিকা।সুখে শান্তিতে কিন্তু কোন এক অশ্বনি সংকেত এসে একটি ঝড়ে সব কিছুকে তছনছ করে দিয়েছে। এতো দিনের সাঁজানো সুখের সংসার নিমিষেই এক দোযখ থানায় পরিনত হয়েছে । সেটা হলো সন্দেহ এই সন্দেহের কারনে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসারে অশান্তি বিরাজ করছে। স্ত্রী সন্তান ছেড়ে থাকতে হচ্ছে এক অসহায় মানুষ হিসেবে।

“আজ জীবনের ষোল আনাই মিছে”।

প্রবাস জীবনে আমার যে কয়জন ঘনিষ্ট বন্ধু আছে তার মধ্য অন্যতম হলো এই বন্ধু । যার সাথে ইতালীর রাজধানী রোম শহরে মেসে কাঁটিয়েছি বহু দিন বহু রাত মাস এবং বছরের পর বছর।কমপক্ষে ৮থেকে ১০ বছর হবে আমরা প্রবাস জীবনের কাঁটিয়েটি একই ছাদের নীচে।কত গল্প কত আড্ডা । রয়েছে সুখ দুখের হাজারো স্মৃতি। এক জনের আনন্দে হতাম আনন্দিত উল্লাসিত। দু:খের সময় সান্তনা দিয়েছি পাশে থেকেছি কিন্তু শেষ দূর্ঘটনার সময় কোন সহযোগিতা করতে পারলামনা এজন্য নিজেকে ভীষন অপরাধী মনে হচ্ছে।

১৯৯০ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকেই ইতালীর রাজধানী রোমে আসি এবং রোমা টেরমিনি এবং ভিক্টরিয় পার্ক ও মার্কেটের মাঝের ভিয়া ফলিপ্পো টুরাতি রোডে আব্দুল মোতালেব মোল্লার বাসায় আমি থাকি কয়েক মাস পরে আমার এই বন্ধুটি ও এই বাসায় আসেন সেই থেকে আজ পর্যন্ত বন্ধুত্ব হয় ,সেই বন্ধুত্ব আছে, থাকবে এবং থাকবে চিরকাল।

অনেক স্মৃতি যা বলে শেষ করার মত নয়। কাজের ফাঁকে বা ছুটির দিন কিম্বা অবসরে ঘুরেছি বহু স্থানে। আবার বাসায় শখের বসে তাস খেলতে গেলে সহজে হার মানতে চাইতো না। এমন কি লুডু বা দাবা খেললেতো কথাই নেই। দাবা খেলায় আমাদের রুমমেট দের মধ্যে সবার সেবা। শুধুই সেরা নয় আসলেই ভালো দাবা খেলে। দাবা খেলা ভালো চাল দিলেও আজ জীবনের চালে নিজে হেরে গেছেন।

ব্যাসেলার বা প্রথম প্রবাস জীবনের বন্ধুরাই আসল প্রকৃত বন্ধু বিপদে আপদে একে অন্যের পাশে। জীবনের প্রয়োজনে সময়ের সাথে ব্যাসেলার থেকে সংসার জীবন এর যার যার সংসার বা পরিবার নিয়ে সবাই ব্যাস্ত । তখন দূর থেকে টেলিফোনে বা দেখা হলে শুধু হায় হ্যালো এবং কেমন আছিস এতটুকুই কিন্তু এই সংসার জীবনের পিছনে কত দু:খ কত কস্ট লুকিয়ে আছে আমরা কি কারও কাছে শেয়ার করতে পারি ? পারি না সেই না পারা এবং ধর্য্যের বাঁধ যখন ভেংগে যায়। দূর্ঘটনা ঘটার পর আমরা শুধুই আফসোস করি বা ধিক্কার জানাই তাই নয় কি?

যে বন্ধুটির কথা বলছি আমার প্রিয় বন্ধু। সৎ এবং পরিশ্রমি বন্ধু। তিল তিল করে বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন বহু সম্পদ। ব্যাক্তিগত ভাবে আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশী । আমি যতটা সামাজিক কার্যকর্মের সাথে জড়িত ছিলাম। ও কিন্তু তেমনটা ছিলো না কাজ আর বাসা পয়সা ইন্কাম করা এবং দেশে সম্পদ করা ওর প্রধান কাজ ছিলো। অনেক সম্পদ ও আছে কিন্তু সন্দেহ বসে সেই সম্পদ কত টুকু কাজে আসবে জানিনা।তার স্ত্রীর সাথে আজ ছাড়া ছাড়ি হয়েছে। এই ঘটনা শুনতেই আমার ভীষন খারাপ লাগছে। দু:ক্ষে কস্টে বুক ছিড়ে যাচ্ছে ।

আমাদের প্রবাস জীবন কিন্তু একে বারেই সহজ ও মসলিন নয় আজকের এই অবস্থানে আসতে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু দূর্গম পথ।কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে কঠিন কঠোর পরিশ্রম। নতুন দেশ নতুন পরিবেশ ।ভাষা না বুঝায় মালিক বা বসদের তিরস্কার । নতুন দেশে একটি কাজ পাওয়ার জন্য সেই হন্নে হয়ে ছুটে বেড়ানো। কাজ না পেয়ে রাস্তায় হকারি করা। ফটপাতে দাড়িয়ে ব্যাবসা করা কিম্বা সমুদ্রে পারে ফেরিওয়ালার সেই ব্যাবসা। সেই ঘটনা এক একটি ইতিহাস।

আমাদের প্রবাস জীবনের প্রথম বন্ধুরা বেশীর ভাগ ইতালী ছেড়ে স্বপরিবার ব্রিটেনে এসেছেন। ২/৪ জন হয়তো রয়ে গেছেন। যারা এসেছেন বেশীর ভাগ বির্টেনের বিভিন্ন শহরে আছেন। আমি খবর নেওয়ার চেস্টা করি তার আগেই দেখা যায় ফোন করে তারা আমার খবর নিচ্ছেন। আমাকে সেই সব পুরানো বন্ধুরা অনেক ভালো বাসেন।

আমি সামার হলি ডে তে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে এমন কি স্কটল্যান, ওয়েলসে ও পরিবার নিয়ে যাই সেই সব পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা করি , দাওয়াৎ খাই , আড্ডা দেই বন্ধুরা সবাই পরিবার নিয়ে নিজের সংসার নিয়ে ব্যাস্ত কিন্তু ভালো আছে দেখলে মনটা জুডিয়ে যায়।

যে বন্ধুর কথাটি বলছি। আমি রোমে থেকে ফ্লোরেন্সে আসি। সেখানে প্রায় ১০ বছর ছিলাম। এর পর ২০১১ সালের মাঝামাঝি লন্ডনে আসি তখন মাঝে মধ্যে সবার সাথে কথা হতো। এইতো মাত্র ২ বছর আগে আমার বাসায় প্রিয় বন্ধুটি স্বপরিবারে আমার বাসায় দাওয়াৎ খেলো এবং করোনাভাইরসের মাত্র কিছু দিন আগে আমি আমার পরিবার সহ বন্ধুটির বাসায় দাওয়াৎ খেলাম। সেই খানে আরো ২/৩ টি পুরানো বন্ধুর পরিবারও ছিলো। তা হলে বুঝতে পারছেন আমাদের বন্ধুত্ব কত গভীর কত ভালো বাসার।

কভিড-১৯ বা করোনাভাইরস মহামারি শুধু মানুষকে আক্রান্ত করে মৃত্যুই করে না। জীবন্ত মানুষদের সংসারকেও তছনছ করে দিচ্ছে। আর একটি হচ্ছে মিনিক্যাব টেক্সী যদিও আমার অনেক বন্ধুরা রাগ হতে পারে। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি পেশা কে কিছু বলতে চাচ্ছি না। বলতে চাচ্ছি পেশা যখন লোভে পরিনত হয় তখন সংসার ভেংগে যায় সেই কথাটি বলতে চাচ্ছি।

দিনরাত পয়সার পিছনে ছুঁটতে যেয়ে হয়তো পয়সা হয়েছে কিন্তু হারিয়ে গেছে সুখের সংসার।বড় ছেলে বেশ বড় হয়তো কলেজ ছাডিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পরছে মেয়ে স্কুল পাড়ি দিয়ে কলেজে যাচ্ছে। ছোট্ট ছেলেটি খুবই ছোট্ট স্কুলে যাবার এখনও সময় হয়নি । এই ছেলে বাবা মার এবং ভাই বোনের সবার অতি প্রিয়। এতো চন্চল বাবা ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারে না । আর বাবাও এই ছোট্ট ছেলেটিকে আদর না করে ঘুমাতে পারেনা। সেই ছোট অবুঝ শিশুটি কি হবে কোথায় পাবে বাবা আদর। এবং বাবার বুকে হা হা কার কিভাবে নিভবে?

শেষবার যখন দাওয়াৎ খেতে গিয়েছিলাম তখন কিছুটা আভাস দিয়েছিলো আমার স্ত্রীর কাছে। আমার বন্ধুর স্ত্রী দু:খ করে বলেছে। আমার বন্ধু কার স্ত্রীর কথায় কোন পাত্তা দেয় না। আমি অবশ্য কথাটার গুরুত্ব দেই নাই। বলছি সংসারে এমন কিছু হয়েই থাকে।আর তাছাড়া আমার বন্ধু নিজের সিন্ধান্তটাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে আমরা সবাই জানি। এত বছরের সংসার করে তার স্ত্রীর ও জানার কথা। এত দিন এত বছর যেই মানুষটিরে নিয়ে সংসার করে এলো আজ হঠাৎ করে তাকে মেনে নিতে পারছে না কেন?

এর জন্য কে দায়ী?

ব্রিটেনের সমাজ ব্যাবস্থা?

ব্রিটেনের আইন ?

নাকি সমান অধিকার ?

আমাদের পূর্ন অধিকার সম্পর্ক জেনে গেছি ?

নাকি আমরা এখানে এসে বেশী বুঝে ফেলেছি?

আমাদের আমাদের এত দিনের ভালোবাসা কি সবই মিছে?

আমার বন্ধুর তো অর্থনৈতিক সমস্যা নেই।

তা হলে কি শারীরিক সমস্যা?

তা হলে তে আরো আগেই ধরা পরতে পারতো।

আমার মনে হয় শুধুই মনে ভূল ধারনা ।

অতৃপ্ত এক মানুষ গুলি আমরা।

আমার ঐ বন্ধু বা তার স্ত্রীর সামান্য সন্দেহ । এই সন্দেহ অন্য কেউ সমাধান করতে পারবে না নিজেকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। একটু দেড়েকে বাডী ফিরলেই অপরাধী হয়ে গেল? কারে সাথে ফোনে কথা বললেই অবৈধ প্রেম হয়ে গেল?

আবার দেড়ীতে বাসায় ফিরে ও নিজের বাহাদুরি দেখা হবে এমন নয়।

আসলে শয়তান যখন ঘাড়ে চাপে তখন হয়তো কিছুই করার থাকেনা।

শয়তান বা ইবলিশ সব চেয়ে বেশী খুশি হয় সংসার ভেজ্ঞে দিতে পারলে তেমনই হয়েছে। সন্দেহের দানা একের পর বাড়তে থাকা এবং নিজের রাগ দু:ক্ষ নিয়ন্ত্রনে না রাখতে পেরে আজ কার সংসার ভেঙেছে।

যে কথা বলছিলাম। তাদের দুই জনের মাঝে মধ্যেই ঝগড়া হতো । চিল্লা চিল্লি হতো ।এর মাঝে অন্য বন্ধুরা এসে বুঝানোর চেস্টা করেছেন। কাজ হয় নাই। সোসাল সার্ভিস এসেছে। এর মাঝে দুই একবার পুলিশ এসেও শতর্ক করে দিয়েছে কিন্তু কাজ হয় নাই। শেষ রক্ষা হয় নাই। শেষ দিন দ্ই জনের মধ্যে ঝগড়া , কথা কাঁটাকাটি এবং গায়ে হাত তোলা। এদেশে আর যাই হোক গায়ে হাত তুললে বিশেষ করে মহিলার গায়ে হাত তুললে রক্ষা নেই।

পুলিশ এসে হাতে নাতে ধরেছে। স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে। সোসাল সার্ভিস এসেছে তবে এখনে একটু ব্যাতিক্রম কেননা সোসাল সার্ভিসে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে নাই। বড় ছেলে ১৮ উপরে বয়স তিনি সুন্দর ভাবে পুলিশকে বুঝাতে পেরেছে।

পুলিশ সব কিছু শুনে স্ত্রী তিন সন্তান দের বাসায় থাকতে বলেন। স্বামীকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যায়। স্ত্রী তার সন্তানদের নিয়ে বাসায় থাকার অনুমতি পেলেও স্বামীর আপাতত জায়গা পুলিশ কাস্টরিতে । পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেলেও স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে দেখা করা নিষেধ এবং তাদের কোন রকম বিরক্ত করলে আইনের কঠিন শাস্তির সতর্কতা দিয়েছে পুলিশ। সেই সাথে এই পরিবারের কোন খয় ক্ষতি হলে তার দায় নিতে হবে স্বামাকেই।

স্বামীকে আইনের ভয় তাড়িত করে প্রতি মূহুর্ত ।


Similar Posts