| |

রানীগঞ্জ গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে লন্ডন থেকে ভার্চয়াল মিটিং ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।


মো: রেজাউল করিম মৃধা।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১: রানীগঞ্জ গণহত্যায় নিহত সকল শহীদ ও যুদ্ধাহত গাজীদের স্মরণে শহীদ-গাজী ফাউন্ডেশন, ইউকে‘র উদ্যোগে “আমরা তোমাদের ভুলিনি“ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি, শহীদ সন্তান সাংবাদিক আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় ইউকের বিভিন্ন শহর ও বাংলাদেশ থেকে শহীদ ও যুদ্ধাহত পরিবারের সদস্য ও শুভাকাংখীরা অংশগ্রহণ করেন। সভায় ১৯৭১ সালের ১লা সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার লোমহর্ষক ঘটনাবলী এবং নিজেদের পরিবারের শহীদ ও গাজীদের স্মৃতিচারণ করে শহীদ পরিবারের সন্তানরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা শহীদ-গাজী রানীগঞ্জের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, বর্তমান প্রজন্মের কাছে গণহত্যার ঘটনা এবং সকল শহীদের পরিচিতি তুলে ধরা, রানীগঞ্জ সেতুর সাথে ‘শহীদ-গাজী‘ শব্দ যুক্ত করে সেতুর নামকরণের দাবী জানান এবং গণহত্যায় নিহত সকল শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে শহীদ-গাজী মনুমেন্ট তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সাথে গণহত্যায় শহীদ, যুদ্ধাহতদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের পরিবারকে প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাহায্য সহযোগিতারও দাবী জানানো হয়।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাটি অঞ্চলের অন্যতম নৌবন্দর রানীগঞ্জ বাজারে সংঘটিত হয় ইতিহাসের এক নিষ্ঠূরতম গণহত্যা। পাকহানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে শতাধিক নিরপরাধ মানুষ এবং জ্বালিয়ে দেয় বাজারের অনেক দোকানপাট। সেদিনের হত্যাকান্ডের শিকার হন রানীগঞ্জ বাজার কমিটির তৎকালীন সভাপতি শহীদ আকলু মিয়া, আব্দুল মজিদ ((দূর্ভাগ্যবশতঃ যার লাশ পাওয়া যায়নি), আনোয়ার হোসেন ও আকিল হোসেন (সহোদর), আলতা মিয়া, মিছির আলী, আব্দাল মিয়া, তছর উদ্দিন, সোনাহর আলী, ও তাজু মিয়া সহ আরো অনেকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে পরলোক গমন করেন আকল মিয়া ও মজমিল মিয়া । এছাড়াও আহত হন বিনোদ রায়, ক্বারী এখলাছুর রহমান, তফজ্জুল হোসেন ও ওয়াহিদ আলী প্রমূখ (তাদের কেউই এখন আর বেঁচে নেই)।

ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন ও আলোচনা করেন পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক মেয়র, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা গোলাম মর্তুজা, লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নতুন দিন সম্পাদক মহিব চৌধুরী, শহীদ সন্তান আমেরিকা প্রবাসী আতাউর রহমান (পিতা শহীদ আব্দাল মিয়া), শহীদ সন্তান এনাম আলী (পিতা শহীদ মিছির আলী), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দবির উদ্দিন (ডারহাম), গুলিবিদ্ধ তোফাজ্জল হোসেনের ভাই রফু মিয়া, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী জহুর আলী মাষ্টার (নিউক্যাসল), শহীদ ও গাজী পরিবারের সদস্যা রোজিনা বেগম, শিউলী বেগম ও শামীমা সুলতানা সুমি, শহীদ আব্দুল মজিদের নাতি ও লন্ডনে এমবিএ অধ্যয়নরত সাইফুল ইসলাম বিপ্লব প্রমূখ। শহীদ-গাজী ফাউন্ডেশনের নানা তৎপরতা এবং গণহত্যার তথ্য ও তালিকা নিয়ে আলোচনা রাখেন রানীগঞ্জ দর্পন সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আবুল কাশেম আকমল। আকবর হোসেন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ১লা সেপ্টেম্বরের নিষ্ঠুর গণহত্যার বিবরণ দেন।

এতে সর্বসম্মতিক্রমে শহীদ-গাজী স্মরণে একটি স্মরণিকা প্রকাশ, ওয়েবসাইট ও ডকুমেন্টারী তৈরি এবং আগামীতে বড় পরিসরে দেশে একটি স্মরণ সভা আয়োজনের পাশাপাশি রানীগঞ্জ গণহত্যার বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর লিফলেট প্রকাশ করে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিতরণ ও শহীদ-গাজী পরিবারগুলোকে মূল্যায়নের জন্য নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা শহীদ-গাজী ফাউন্ডেশনের সকল উদ্যোগ-আয়োজনকে ধন্যবাদ জানান।

সাবেক মেয়র গোলাম মর্তুজা তাদের সময়ে রানীগঞ্জ গণহত্যা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা থাকলেও শহীদ-গাজী ফাউন্ডেশনের মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং সকল শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাসহ একটি মনুমেন্ট তৈরির আহবান জানান। শহীদ সন্তান আতাউর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদের শহীদদের নিয়ে তেমন কিছু করা হয়নি। তাদের জন্য কিছু করতে পারলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। শহীদ সন্তান এনাম আলী সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার বক্তব্যে শহীদ-গাজীর স্মৃতি রক্ষার্থে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। জহুর আলী মাষ্টার শহীদ-গাজীর স্মৃতি বিজড়িত রানীগঞ্জে নির্মিত সেতুর নামকরণের সাথে শহীদ-গাজী শব্দ যোগ করার দাবী জানান। সাইফূল ইসলাম তার বক্তব্যে নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদ-গাজীদের পরিচিতি তুলে ধরা এবং শহীদ পরিবারের মূল্যায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

রানীগঞ্জ সেতুর সাথে ‘শহীদ-গাজী‘ শব্দ যুক্ত করে নামকরণের দাবী

গণহত্যায় নিহত সকল শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার প্রতি জোর দাবী জানানো হয়।

শহীদ-গাজী মনুমেন্ট তৈরির উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।

সবশেষে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোআ করা হয়।


Similar Posts