রমজান মাসে দান-সদকায় সওয়াব
অন্য মাসের চেয়ে সত্তর গুন বেশী।
মো: রেজাউল করিম মৃধা।
রমজান মাস মহা পবিত্র মাস। অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসে ইবাদতের সওয়াব যেমন বেশী, তেমনি দান খয়রাতের সওয়াব ও অনেক বেশী। কোন কোন হাদিসে আছে এ মাসে দান করলে অন্য মাসের চেয়ে ৭০ কিম্বা তারও অধিক গুন বেশী সওয়াব আল্লাহ দিবেন।
আল্লাহ পাক এই মাসে রোজা ফরজ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে একটি নেক কাজ করলো, সে যেন রমজান ছাড়া অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো। সে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করলো।’ সে হিসেবে নামাজ-রোজা যেমন একটি আমল। ঠিকক সেভাবে দান ও সদকা করা একটি আমল। রমজানে এ কাজ করলে আল্লাহ তায়ালা সত্তর গুণ সওয়াব বাড়িয়ে দেন।
দানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাকো, আমিও তোমাকে দান করব। (বোখারি ও মুসলিম)।
আমাদের দেশে রমজানে গরীব দুঃখীরা পথে ঘাটে মসজিদে পাড়ায় ভিড় জমিয়ে থাকেন। ধনীদের দিকে বুকভরা আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম।’ আর মাহে রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি। এ জন্য অন্য ১১ মাসের তুলনায় এ মাসে অধিক দান-সদকা করা উচিত।
রাসুলুল্লাহ সা. মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজানে যখন হযরত জিবরাইল (আ.) তার কাছে নিয়মিত আসতেন এবং কোরআন পড়ে শোনাতেন, তখন তার দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.)-এর চেয়ে বেশি দানশীল আমি আর কাউকে দেখিনি’ (মুসলিম)।
রাসুল (সা.) তার উম্মতদের শিক্ষা দিয়েছেন, রমজান মাসে দান ও বদান্যতার হাত সম্প্রসারিত করতে। হাদিসে রমজান মাসকে হামদর্দি বা ‘সহানুভূতির মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
রমজানের রোজা ফরজ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট অনুভব করা। যারা প্রাচুর্যের মাঝে জীবনযাপন করেন তারা সারাবছর ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা না বুঝলেও রমজানে কিছুটা বোঝেন। এই বুজা তখনই সার্থক হবে যখন তারা গরিব-অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।
রমজান মাসে মহান খোদাতায়ালা প্রতিটি নফল কাজের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন। সে হিসাবে রমজানে এক টাকা দান করে ৭০ টাকা দানের সওয়াব লাভ করা সম্ভব।
এ জন্য প্রত্যেক রোজাদারের উচিত নিজের সাধ্য অনুযাযী অনাথ, আর্ত, সহায়-সম্বলহীন ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দানের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করো, নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর তোমরা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন’ (আল কুরআন)।
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা মানব সন্তানকে লক্ষ করে বলেন, তুমি দান করো, তাহলে তোমার জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) দান করা হবে।’
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে।
দান খয়রাত দুই ভাবেই করা যেতে পারে
১)প্রকাশ্যে
২) গোপনে
নবী করিম( স:) বলেছেন হাদীস নং ১৩৪০।
আল্লাহ সাত শ্রেনীর মানুষকে রোজ কিয়ামতের দিন তার আরশের নীচে আশ্রয় দিবেন তার মধ্যে “ ঐ ব্যক্তি যে কিছু দান করলো এবং তা এরুপ গোপন ভাবে করলো যেন তার বাম হাত ও জানতে পারলো না”।গোপনে দানশীল ব্যাক্তি।
আবার প্রকাশ্যে ও দিতে পারেন। আপনাকে দেখে অন্যান্যরা উৎসাহিত হবেন। তবে সাবধান সেটা যেনো লোক দেখানো না হয়। যদি লোক দেখানো হয়। এবং দানের পর যেন তাদের কে খোঁটা না দেওয়া হয়।তবে লাভের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে। আল্লাহ ভালো জানেন।আমাদের মন থেকে দান করতে হবে।
হাদিস নং ১৩৪৫
আল্লাহ পার বলেন” যারা নিজেদের ধন সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যায় করে । তাদের জন্য তাদের পালন কর্তার নিকট রয়েছে মহা পুরুস্কার”।
অন্য একটি হাদিসে আছে। “দান করলে কখনো সম্পদ কমে না বরং আল্লাহ তার রহমত দিয়ে বহু গুনে বাড়িয়ে দেন”। অসুন আমরা আমাদের সাধ্যমত গরীব, দু:খি, অনাথ, এতিম দের দান করি। আল্লাহ এই দানের উসিলায়, পাপ ও গুনাহ মাফ করে দিবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে দান করার তৌফিক দান করুন। আমিন।