রমজানের মাঝের ১০ দিন বরকতের।
আল্লাহ আমাদের জীবনকে বরকতময় করে দাও।

মো: রেজাউল করিম মৃধা।
নবীজী (স) বলেছেন যে, হে মানুষ! তোমাদের কাছে এসেছে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও বরকতপূর্ণ একটি মাস। এ মাসের নফল ইবাদত ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের। আর একটি ফরজ ইবাদত ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের।তাই আত্মশুদ্ধি এবং দেহের শুদ্ধি দুই দিক দিয়েই আমরা যেন এই রমজানকে চমৎকারভাবে অতিবাহিত করতে পারি পরম করুণাময়ের কাছে এই প্রার্থনা আমরা করব আজ ইফতারের বরকতময় সময়ের আগে।
আল্লাহ পবিত্র রমজান মাসে তোমার দয়ায় , তোমার রহমতে আমাদের জীবন কে পরিপূর্ণ করে দাও।মানুষের ন্যূনতম চাওয়া হচ্ছে শান্তি। আসলে শান্তি শুধু এই রমজানে যে চাই তা নয়, সবসময়ের জন্যেই আমরা শান্তি চাই। আর শান্তিকে আকৃষ্ট করার জন্যে একটি বাক্য যদি উচ্চারণ করতে সেটি হলো আসসালামু আলাইকুম। এর উত্তরে আরও আন্তরিকভাবে বলা-ওয়া আলাইকুমুস সালাম। পরস্পর পরস্পরের জন্যে শান্তি কামনা করা। এবারের রমজান থেকে আমাদের প্রত্যয়ন হোক-সবাইকে আগে নিজে সালাম দেবো। অন্যের শান্তিকামনার মধ্য দিয়ে নিজের শান্তিকে আকৃষ্ট করব।
প্রিয় নবীজীর (স) একটি হাদীস বলেছেন” তোমরা রোজা রাখো যাতে সুস্থ থাকতে পারো। দৈহিকভাবে যেমন সুস্থতা আনে রোজা, তেমনি আত্মিকভাবেও”।আমাদের মনে রাখা উচিত, প্রকৃতপক্ষে রমজান হলো, আখেরাতের তেজারতের মৌসুম। এ মাসের সময়গুলো খুব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা উচিত। অন্তত ফরজ রোজা এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা তারাবির সঙ্গে সেহরির সময় তাহাজ্জুদ, কিছু পরিমাণে হলেও জিকির ও তেলাওয়াত প্রত্যেকেরই করা উচিত।
আল্লাহতায়ালা যেমন রমজানকে খায়ের ও বরকত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের মৌসুম বানিয়েছেন, তেমনি গোটা বছরের ঈমানি শক্তি সঞ্চয়ের কেন্দ্র বানিয়েছেন। এরই সঙ্গে আরও অনুগ্রহ করেছেন যে, এ মাসে সৃষ্টিজগতে এমন অনেক অবস্থা ও পরিবর্তনের সূচনা করেন, যা গোটা পরিবেশকেই খায়ের ও বরকত দ্বারা ভরপুর করে দেয়।
পুরো রমজানজুড়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা এবং মুক্তির জন্য দোয়া করব। আরেকটি হচ্ছে নফল অর্থাৎ সাধারণ যে আমলগুলো আছে সেগুলো আমরা বাড়িয়ে দেবো।
দুটি বিষয় হলো :
১/গোনাহ পরিত্যাগ করা ও
২/তাকওয়া অর্জন করা।
পবিত্র কুরআন শরিফে বলা হয়েছে, সিয়াম আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। তাকওয়াবান তাকেই বলে যে সব সময় চিন্তা করে যে আমি যা কিছু করছি আল্লাহ দেখতে পাচ্ছেন
সত্য কথা বলা এবং মিথ্যা বর্জন করা। মিথ্যা কথা বললাম, রোজাও রাখলাম এ রোজা কোনো কাজে আসবে না। সমস্ত ধরনের পাপাচার থেকে জবানকে হেফাজত করা,নিজেকে হেফাজত রাখা।ঝগড়া বিবাদ থেকে বেঁচে থাকব। আরেকজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা।
যদিও এবছর করোনাভাইরসের কারোনে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।তবে এক জন রোজাদারকে ইফতার করাইলে সমপরিমাণ সওয়াব আল্লাহ আপনাকেও দান করবেন।
এটা হল ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্য অবলম্বনের প্রতিদান হচ্ছে বেহেশতে। এটা পরোপকার ও সহানুভূতির মাস এবং এটা এমন একটি মাস যাতে ঈমানদারগণের রুজি বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।’
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোযাদারের জন্য দুইটি আনন্দ। ১/ একটি ইফতারকালে এবং
২/ অপরটি আল্লাহর সাথে দিদারকালে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশ্ক হতেও অধিক সুগন্ধময়। তিনি বলেন, (রোযাদারগণের পক্ষে) রোযা হচ্ছে
রাসূল (সা:) আরো বলেছেন,যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। অনুরূপ যে তারাবি আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
সংযত-সুন্দর জীবনযাপনে বিশ্ব মুসলিমকে শিক্ষা দেয় পবিত্র এই মাস। প্রত্যেক মুসলমানের কাছে রমজান মাস শুধু কাঙ্ক্ষিত নয়, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠী শ্রদ্ধা ও নির্মল ভালোবাসায় বরণ করে নেয় এ মাসকে। পবিত্র এ মাসের মধ্যে নিহিত রয়েছে ইহকাল ও পরকালের অশেষ কল্যাণ।
তবে দোওয়া কবুলের জন্য আপনাকে কিছু শর্ত বা নিয়ম মেনেই আল্লাহর কাছে দোওয়া করতে হবে। হাদিসে থেকে বর্নীত। সুরা মুমিনুন : আয়াত (৫১) ইবাদাতকারীদেরকে হালাল খাদ্য গ্রহণ করে শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা তাঁরই (আল্লাহর) বন্দেগি কর তবে তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে জীবিকা হিসেবে দান করেছি এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। (সুরা বাকারা : আয়াত (১৭২) হাদিসের নির্দেশ অনযায়ী বুঝা যায় যে, দোয়া কবুলের জন্য বৈধ জীবিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হালাল জীবিকা গ্রহণের জন্য প্রথমেই হালাল উপার্জন আবশ্যক। হালাল উপার্জিত অর্থ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার দুনিয়া ও পরকালের কামিয়াবি দান করবেন। যার নির্দেশনা তিনি কুরআনে পাকে এবং হাদিসের মাধ্যমে বান্দাকে জানিয়ে দিয়েছেন।
রমজানের দ্বিতিয় ১০ দিন। বরকতের। এই ১০ দিনে আমাদের সবাইকে বরকতের জন্য বেশী বেশী দোওয়া করতে হবে।ইন্সা আল্লাহ একাগ্রতার সাথে দোওয়া করলে অবশ্যই আমাদের জীবন বরকতময় করে দিবেন।
দোয়া কবুলের জন্য আমরা হালাল খাদ্য গ্রহণ করি।সত্য কথা বলি এবং সৎ পথে চলি। তাহলেই এই পবিত্র বরকতময় দিনে আল্লাহ আমাদের বরকত অবশ্যই দান করবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের বিধান মেনে রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।