| | |

ভিকিং বে সমুদ্র সৈকতে এক দিন


মো: রেজাউল করিম মৃধা।

ব্রিটেনের “ভিকিং বে” সী সাইড বা সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্য এবং প্রশাসনিক তত্তাবধানে সব চেয়ে এগিয়ে। সামার কিম্বা উন্টার সব ঋতুতেই সমান জনপ্রিয়। সারা বছর জুড়েই পর্যটকরা এখানে ভ্রমনের জন্য আসেন।নিরাপদ ,সুন্দর , গোছানো এবং রয়েছে দর্শনীয় স্থান।

নর্থ সী ১৯৪৯ সালে ভিকিং বে সী বিচ আবিস্কার করা হয়। বীচ কে মানুষের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়। নাম দেওয়া হয় বে ইন বোর্ডশেয়ার। বর্তমানে নামাকরন করা হয়েছে ভিকিং বে সী সাইড।

ভিকিং বে সামার টাইমে সমুদ্রে গোসল করার জন্য যেমন উপযোগী ও সন্দর্য তেমনি পাশেই রয়েছে বিশাল সমুদ্র বন্দর ।

যাতায়াতের জন্য রয়েছে সুব্যাবস্থা ট্রেন, কোচ, বাস এবং নিজেদের গাড়ি। আর জাহাজ তো রয়েছেই। লন্ডন থেকে ট্রেনে আসলে লাগবে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট, বাসে লাগবে ৩ ঘন্টা এবং নিজেদের গাড়ি করে আসলে লাগবে ২ ঘন্টা।

ভিকিং বে সমুদ্র সৈকত প্রশাসনিক ভাবে খুবই যত্নশীল , ওয়াস রুমের ব্যাবস্থা খুবই সুন্দর যা অন্যান্য সমুদ্র সৈকতে নেই বললেই চলে। পরিস্কার পরিছন্ন এবং সিকিউরিটি ব্যাবস্থা পর্যটকদের আস্থা অর্জন করেছে।

শুধু সমুদ্রে নেমে গোসল করাই নয় এখানে রয়েছে ডিকনেক হাউজ , ক্রসপট টাওয়ার মিউজিয়াম, লেইপট মিনি গল্ফ , সিনেমা হল, সুন্দর সুন্দর পার্ক এবং শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন খেলাধূলার ব্যাবস্থা। যা আপনাকে আকৃষ্ট করে রাখবে সারাক্ষন।

গত ১৭ই জুলাই সকাল ১০টায় স্বপরিবারে রওয়ানা দিলাম ভিকিং বে সী বিচ এর উদ্দেশে।যেতে যেতে সময় বেজে গেল প্রায় ১.০০টা রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম। আপনি যদি সকাল ৮.০০ রওয়ানা দিতে পারেন তবে ট্রাফিক জ্যাম এভোয়েট করতে পারেন তা না হলে রাস্তায় অনেকটা সময় পার করতে হবে।

যাইহোক বোর্ডশেয়ার শহরে প্রবেশ করতেই পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ করার মতো। এবার গাড়ী পার্কিং এর পালা। সী বিচ এর কাছাকাছি পার্কিং পাওয়া আসলেই দূরহ। দুই তিন চক্কর দিলাম বেশীর ভাগ স্থানেই এক ঘন্টা ফ্রি পার্কিং ডিসপ্লে স্থানে পুরো প্যাক্ট। যাইহোক ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হয়। তিন চক্করের পর একটি ফ্রি পার্কিং পেলাম একটু দূরে।

এবার গাডী থেকে দুপুরের খাবার সহ গোসলের পোষাক সহ জুতা রেখে সেন্ডল পায়ে হাঁটা শুরু কয়েক মিনিট পরেই বিশাল সমুদ্র দেখে সমস্ত ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে গেল। সমুদ্রের পানির কাছাকাছি যাওয়ার জন্য সুউচ্চ পাহাড় থেকে ঘুরে ঘুরে নিচের দিকে সিঁড়ির ব্যাবস্থা করা হয়েছে এবং পানি থেকে কয়েক ফুট উঁচু করে শক্ত এবং মজবুত ওয়াল দিয়ে ফুটপাত বাঁধানো আছে এর ই পাশে জায়গায় জায়গায় ছোট ছোট টং ঘর সেগুলি টুরিস্টদের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। এর পর বালু আর বালু মিশে গেছে সমুদ্রের পানির সাথে। এই বালুতেই যে যার মত করে চাদর বিছিয়ে অথবা ছাতা টানিয়ে নিজের স্থান করে নেয়। এরপর যে যার মত করে পানিতে নেমে কেউ সাঁতার কাটে কেউ বল খেলে আবার ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা নিজের মত করে বালু দিয়ে ঘর বানায়।

সাগরে ভাটা এলে বালুচর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়। আবার জোয়ার এলে বালুচর ছোট হয়ে আসে এবং সাগর যেন তার যৌবন ফিরে পেয়ে উত্তাল হয়ে উঠে। বাতাসের গতি বেড়ে গিয়ে দানবে পরিনত হয়। নিরব সাগর হয়ে উঠে ভয়ংকরি আর এসময় সিকিউরিটিতে থাকা দায়িত্ব রত অফিসাররা সবাইকে পানি থেকে উপরে উঠে আসার বাঁশি হূইচাল দিতে থাকে এবং টহল রত ছোট্ট শীপ গুলি সাগরে নেমে যায় যেন কোন পর্যটকের বিপদ না ঘটে।

আমি ব্রিটেনে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত ব্রিটেনের অনেক গুলি সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আবার নিজের পরিবার নিয়ে নিয়েছি। প্রতি বছরই যাচ্ছি কিন্তু ভিকিং বে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা আমাকে বেশী অনুপ্রানিত করেছে।

যথারীতি আমরাও সমুদ্রে একেবারে পাড় ঘেঁষেই আমাদের চাদর বিছিয়ে বসে পরলাম। নিজের নেওয়া দুপুরের খাবার খেয়ে (বাপ বেটা) আমার ছেলে কে নিয়ে নেমে গেলাম ফুটবল নিয়ে কিছুক্ষন ফুটবল খেলা আবার পানিতে ঝাঁপিয়ে পরা সমুদ্রের বড় বড় ধেঁয়ে আসা ঢেউ এর সাথে মিশে গিয়ে লুনা পানিতে ডুবে যাওয়ার সে আনন্দ এবং অনুভুতি সত্যি আলাদা।

কখন দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়েছে বুঝাই মুসকিল এক এক করে সবাই চলে যেতে শুরু করলো আমাদের বিদায় নিতে হলো। সমুদ্রের বালুর মাঠ পেরিয়ে ধাপে ধাপে সিঁডি বেয়ে উপরে উঠেই সারিবদ্ধ ভাবে অনেক দোকান এখানে সামান্য কেনা কাটা শেষে এবার আইসক্রীম খাবার পালা ।

হাঁটতে হাঁটতে গাড়ীতে আসা মাঝে মধ্যই সুন্দর সুন্দর পার্ক এখানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিলেও সময় শেষ হবে না কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য এবার লন্ডনের দিকে । গাড়িতে উঠে লন্ডনের উদ্দ্যশে গাড়ীর চললো হাওয়ার বেগে । এম ২ থেকে এ টু হয়ে ল্ন্ডনে আসতে হলেও মাঝখানে কয়েকটি ছোট ছোট শহর পারি দিতে হয়। এখানে এসে খুবই প্রসিদ্ধ মাস্টার কাবাব এর সামনে বিরতি এবং মাস্টার কাবাব অর্ডার দিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা বেশ ভীর এই শপে। অপেক্ষার পর খাবার হাতে পেয়ে আমরা সবাই আনন্দিত।অপেক্ষার পর খাবারের স্বাদ একটু বেশী।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো বেলা গেল ঐ আমরাও সমদ্র বিলাস শেষে নিজ গৃহে এসে শান্তির নিশ্বাস। এই গরমে ছুটির দিন কাটলো আনন্দ এবং উল্লাসে।


Similar Posts