ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধকরনে,
কার লাভ ? কার ক্ষতি ???
মো: রেজাউল করিম মৃধা।
ব্রিটেনে যারা বৈধভাবে এসে আইনি জটিলতায়, সময়মত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দিতে পারায়, স্টুডেন হিসেবে এসে ঠিকমত লেখাপড়া না করা সহ বিভিন্ন কারনে আর বৈধকরন হতে পারেন নাই।দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিটেনে অসহায় ভাবে জীবনযাপন করছেন। অথচ তারা সবাই বৈধভাবে এসেছিলেন।আইনের প্যাচে ফেলে বৈধ করা হচ্ছে না।কিন্তু তাদের বৈধকরন করলে কার লাভ? এবং কার ক্ষতি?
এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন তথ্য উপাধ্য থেকে বুঝা যায় বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধকরন করলে সরকারই বেশী লাভবান হবে।
ব্রিটেনে দীর্ঘদিন বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা অবস্থান করছেন।কভিড-১৯ বা করোনাভাইরস মহামারির দুর্যোগের মুহুর্তে অপেক্ষার প্রহর গুনছে তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ বা পরিকল্পনার। এটাই সঠিক সময় তাদের বৈধকরনের। এই মহামারির সময় মানবিক কারন এদের বৈধকরন করা হলে এরা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরন করলে সরকারের কি লাভ হবে এবং তাদের বৈধতাকরন না করার কারনে সরকারের কি ক্ষতি হতে পারে নিম্নে তার বিবরন দেয়া হলো।
দীর্ঘদিনের বৈধ কাগজপত্র হীন অভিবাসীদের বৈধতা দিলে সরকারের লাভ সমূহ :-
১/ বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতাকরনের আওতার নিয়ে আসলে প্রথমেই হোম অফিস ফী বাবদ বিপুল অর্থ আয় করতে পারবে ।
২/ NHS সার্চ চার্জ হিসেবে বিপুল অর্থ সরকারী স্বাস্থ খাত আয় করবে ।
৩/ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে সরকারি রাজস্ব খাত এই খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন বাড়বে ।
৪/ এই অভিবাসীরা দীর্ঘদিন ব্রিটেন থাকার কারনে তারা প্রায় সবাই বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ তাই সুযোগ পেলে তারা তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটেনে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন।
৫/ দীর্ঘদিন ব্রিটেনে অবস্থানের ফলে ব্রিটেনের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সেই সাথে কালচার এবং ওয়েদারের সাথে অভ্যস্ত হয়েছেন। বিভিন্ন কাজে হয়েছেন অভিজ্ঞ। অভিজ্ঞতারে কাজে লাগাতে পারলে সরকার বেশী লাভবান হবে।
বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতা না দেয়ায় সরকারের ক্ষতি সমূহ :-
১/ বৈধ কাগজপত্রহীনদের পিছনে ইম্মিগ্রেশন রেইড বা তাদের ধরার জন্য যে বাহিনী রয়েছে তাদের জন্য সরকারকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে যা দেশের জনগনকে ট্যাক্সের অর্থ থেকে পরিশোধ করতে হচ্ছে ।
২/ এই সমস্ত অভিবাসীদের রাখার জন্য বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টার রয়েছে যার ব্যয় বাবদ সরকার কে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে । বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতা দেয়া হলে সরকারের এই বিপুল পরিমান অর্থ সাশ্রয় হবে ।
তাই উপরোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনা করে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রিটেনে বসবাসকারী বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী যাদের কোন খারাপ রেকর্ড বা ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই তাদের অতি দ্রুত বৈধতা দেয়া এখন সময়ের দাবী।
“Help the helpless” নামক একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতাকরনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।এই সংগঠনটি ২০০৮ সালে প্রথমে দীর্ঘদিনের বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতা দেয়ার দাবীটি করেছিলো।
এছাড়া ও বাংলাদেশী বিভিন্ন সংগঠন দাবী করে আসছে।আন ডকুমেন্ট দের ডকুমেন্ট দেওয়ার। সংগঠন গুলির শীর্ষ কর্মকর্তারা মনে করেন। বাহিরের দেশ থেকে নতুন করে দক্ষ শ্রমিক না এনে এদেশে যে সব লোকদের ডকুমেন্ট নেই তাদের ডকুমেন্ট দেওয়া হলে সরকার সরকার বেশী লাভবান হবে।
বিশেষ করে BCA বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধকরন করার দাবী জানিয়ে আসছে। তাদের দাবী বৈধ কাগজপত্রহীনদের অনেকেই রেস্টুরেন্ট সেক্টরে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তাদের বৈধকরন কারী ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
দীর্ঘদিন ব্রিটেনে থেকে অনেক আন ডকুমেন্ট শ্রমিক কাজে দক্ষতা অর্জন করেছেন। কিন্তু সময়মত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা প্রমাণপত্র না দিতে পারায় অথবা নিজের ভুলে আজ বৈধ কাগজ না থাকায় এবং বর্তমানে করোনাভাইরস মহামারিতে কাজ না থাকায় সরকারি সুবিধা থেকে বন্চিত সেই সাথে যেসব প্রতিস্ঠানে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করতো আজ সেই কাজও লক ডাউনের কারনে বন্ধ থাকায় এই সব আন ডকুমেন্ট শ্রমিকরা গুরুতর মানবিক জীবনযাপন করছেন।
বৈধ ভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করে যারা সময়মত বৈধ হতে পারেন নাই বিভিন্ন সময় তাদের কাজের স্থান থেকে অথবা থাকার স্থান থেকে সরকারে প্রশাসক বাহিনী বা পুলিশ রেড দিয়ে ধরে এনে ডিটেনশন সেন্টারে অন্য ক্রিমিনাল দের সাথে রেখে তাদের জীবনকে ধংস করে দিয়েছে এমন অনেক অভিযোগ আছে।সেল্টার সেন্টার বা ডিটেনশন সেন্টারে অমানবিক নির্যাতন, অবহেলা, স্বাস্থ্যকর খাবার না দেওয়া,অস্বাস্থ্যকর নোংরাপরিবেশ এবং বিনা চিকিৎসার কারনে অনেকেই মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এসব বিবেচনায় এদের বৈধকরন করার জন্য বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন গুলিও কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ২০০৮ সালে লন্ডন মেয়র নির্বাচনের আগে চ্যারিটি সংগঠন সিটিজেনের একটি অনুষ্ঠানে , ২০১৩ সালে এলবিসির অনুষ্ঠানে , ২০১৬ সালের ১৯শে জুন ব্রেক্সিটের ভোটাভুটির ঠিকআগে তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি ফলে ব্রেক্সিটের ভোটাভুটিতে গুরুত্বপূর্ণভূমিকা রেখেছে ।
প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি এই সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের কথা ভুলে যাননি তাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংসদে প্রথম দিনেই ২০১৯ সালের ২৫ শে জুলাই রুপা হক এমপির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দীর্ঘদিন কাগজপত্রবিহীন এইসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বৈধতা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে জানিয়েছেন।
বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধকরন করলে ব্রিটিশ সরকার শুধু মাত্র আইনি জটিলতা ছাড়া বাকী সবদিক দিয়েই লাভবান হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।
সরকার যদি বিশেষ বিবেচনায় ও মানবিক কারনে তাহলে বৈধ কাগজপত্রহীনরা বৈধকরন পেয়ে এদেশে থাকার অধিকার পাবে। জীবনে চলে আসবে স্বস্থি এবং শান্তি। পরবর্তী জীবন হবে সুখি ও আনন্দময়।
ব্রেক্সিট পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার দক্ষ শ্রমিক আনার পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। এই পরিকল্পনা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আসবে তবে ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধকরন করলে সরকার সহজে বেশী লাভবান হবে।