ব্রিটেনে অন লাইন টিভির জয়জয়কার
কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস মহামারি কালীন সময়ে ঘরে বসে থেকে সময় নস্ট না করে ডিজিটাল যুগকে কাজে লাগিয়ে অন লাইন টেলিভিশনের প্রতি সবার আগ্রহ বেড়ে যায়। একের পর এক অন লাইন টেলিভিশন খুলতে থাকে সবাই । এখন পুরো ব্রিটেন অন লাইন টেলিভিশনের জয়জয়কার বা স্বর্ন যুগ।
যে যার মত করে নাম দিয়ে টেলিভিশন খুলে যার যেমন ইচ্ছা অনুস্ঠান চালাতে থাকেন।মনে হয় সমগ্র ব্রিটেন জুড়ে শুধু বাংলাদেশীদের মাঝেই শ’ খানিক অন লাইন টিভি আছে । তবে এর পথ প্রদর্শক লন্ডন বাংলা বা এলবি ২৪.কম। শাহ ইউসুফ ২০০৯ সাল থেকে অন লাইন টিভির মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন।মধ্যখানে কিছুটা নিরব হয়ে গেলেও বর্তমানে আবার সরব হয়েছেন।
রানার টিভি ২০১৩ সালে আ স ম মাসুম ও মিজবাহ মাহফুজ শুরু করেন। কিছুদিন পর বন্ধ হলেও কভিড-১৯ এ আবার চালু হয়েছে। চ্যানেল ইউরোপের রেজা আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী সোয়েব চ্যানেল আই এর সেই স্ট্রেট ডায়লগ মাঝে মধ্যে করে থাকেন । ডালিয়া লাকুরিয়ার ডিএল টিভি একটি রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হিসেবে প্রথম দিকে বেশ জোড়ে সরে অনুস্ঠান করলেও বর্তমানে তেমন দেখা যায় না। রিলাক্স রেডিওর ফেইসবুক লাইভ দিতে দিতে এখন অন লাইন টিভি হয়ে গেছে । অনেকে আবার ওয়ানবাংলা নিউজ প্রোটালের মত নিউজ এর সাথে সাথে অন লাইন টিভি করেছেন।যদিও ওয়ানবাংলা টিভি অনেক আগ থেকে থাকলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্প্রতি শুরু করেছে। মাসিক দর্পন পত্রিকা এখন দর্পন টিভি, ৫২ বাংলা নিউজ প্রোটাল থেকে টিভি, এভাবে করোনা ভাইরাস মহামারির সময় অনেকেই অন লাইন টিভি করেছেন।গ্রেটার ম্যানচেস্টার থেকে প্রবাস বাংলা টিভি বা পিবি টিভি লক ডাউনের প্রথম দিকে তোড়জোড় থাকলেও এখন অনেকটা কমদেখা যায় । মুক্তি টিভি শেখ মজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী নিয়ে নিয়মিত প্রগ্রাম করে যাচ্ছেন।এমএএইচ লন্ডন টিভি অল্প দিনেই নিজের প্রগ্রাম দিয়ে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির মাঝে জন্ম নিয়েছে শ খানেক অন লাইন টিভি ( স্কটল্যান্ড থেকে ওয়েলস,নর্দান আইল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ড) । ইংল্যান্ডের প্রতিটি শহরে এক এক করে অন লাইন টিভি হতে থাকে।কেউ কেউ তাদের রাজনৈতিক আদর্শ , উদ্দেশ্য এবং নিজের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্যও টেলিভিশন খুলছেন। আবার কেউ কেউ নিজের মেধা কে কাজে লাগানো, সমাজ বা দেশকে কিছু দেবার জন্য করেছেন। কেউ কেউ অবশ্য নিজেকে জাহির করার জন্য ও করেছেন।
বিশেষ করে লন্ডনে সব চেয়ে বেশী অন লাইন টিভি। যে যার মত করে নিজে ফেইসবুকে কিম্বা নতুন করে পেইজ খুলে অন লাইন টিভি শুরু করেন। এমন কি বাদ পরেনি বেতার বা রেডিও। প্রতিটি রেডিও এখন অন লাইন টেলিভিশন হয়ে গেছে। অনেক পত্রপত্রিকা ও নিজেদের পেইজ থেকে অন লাইন টিভি করছেন।আবার যাদের অন লাইন পত্রিকা ছিলে তাদের জন্য অন লাইন টিভি সবচেয়ে সহজ সাধ্য হয়ে যায়।
আইন পেশার সাথে জড়িত অনেকেই নিজেদের প্রতিস্ঠানের নামে অথবা নতুন করে নাম দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত অনুস্ঠান করছেন।এতে তাদের প্রচার ও প্রসার নিজেদের খুশিমত করতে পারেন। অনেক আইনি প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে নিজেদের অন লাইনে প্রচার করছেন।
এত গুলি অন লাইন টেলিভিশন হওয়াতে যেমন সুবিধা আছে তেমন অসুবিধা ও আছে। দুটি বিষয়ে বিবেচনা বা বিচারের দায়িত্ব টুকু আপনাদের।কে কি ভাবে প্রগ্রাম করছেন। প্রগ্রামের মান নিয়ে প্রশ্ন হলে বিচারের দায়িত্ব টুকু দর্শকদের।
কেউ কেউ হয়তো দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে অন লাইন টিভি করেছেন। তাদের টা হয়তো বেশী দিন সার্ভাইব করবে আর যারা হুট করে এখন হাতে সময় আছে করে ফেলেছে তাদেরটা হয়তো কত দিন চলবে সেটা তাঁরাই ভালো জানেন।
অনেক আবার বেশ কয়েক জন মিলে করেছেন। তাদেরটা ভালো করছেন। হয়তো ভালো করতো কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বেশী দিন এক সাথে থাকতে পারেন না। তাই কিছু দিন যেতে না যেতে ই দেখা যায় ভাগ হয়ে নিজ নিজ নামে একটি করে টিভি খুলছেন। এখনও প্রতিদিন ই নতুন নতুন অন লাইন টিভি দেখছি।
অনলাইন টিভি হওয়াতে অনেক নতুন নতুন প্রতিভা বের হয়ে আসছেন। অনেক নতুন নতুন উপস্থাপক বা প্রেজেন্টার বের হয়ে আসছেন। এটা সত্যিই ভালো খবর। আবার অনেকে জোড় করেই প্রেজেন্টার হতে চাচ্ছেন। যার কোন যোগ্যতাই নাই তখন হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না। অনুস্ঠান উপস্থাপনার জন্য নিজেকে কিছুটা হলেও যত্নশীল দরকার।
ব্রিটেনে সরকারী হিসেব অনুযায়ী ৪৮০টি টিভি আছে।আর অন লাইন হবে প্রায় কয়েক হাজার এর হিসেব রাখা সত্যিই কঠিন। কেননা যে কেউই তার নিজের নামে নিজের ফেইসবুক পেইজে অথবা নিজের নামে পেইজ খুলেই শুরু করেন অন লাইন টিভি।
ফেইসবুকের কল্যানে এখন অতি সহজ হলেও এক সময় টিভি খোলার চিন্তা তো দূরের কথা টিভি দেখার মত অবস্থা আমাদের অনেকেরই ছিলোনা। অনেকের ঘরে টেলিভিশন ছিলোনা বিশেষ করে আমার মত যারা বাংলাদেশের অজপাড়া গাঁয়ে জন্ম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আজ ব্রিটেনে এসে একটি প্রতিস্ঠিত টিভি চ্যানেল । চ্যানেল এস এ নিউজে কাজ করছি। এবং অন লাইন টিভি র মধ্যে সবচেয়ে দর্শক নন্দিত টিভি এমএএইচ টিভিতে নিয়মিত ভাবে “মৃধা শো”
করছি।
অথচ ব্রিটেনে ১৯৬০ সালে মাত্র টেলিভিশন চালু হয়।শুধু মাত্র ২টি টেলিভিশন চ্যানেল দিয়ে শুরু একটি BBC অপরটি 11V . দীর্ঘ দীন পর এখন ৪৮০ টি টিভি চ্যানেল । ব্রিটেনে বাংলাদেশী চ্যানেল গুলির মধ্যে রয়েছে।
চ্যানেল এস, এনটিভি, এটিএন বাংলা, টিভি ওয়ান, আই এন টিভি এবং ইকরা বাংলা। এছাড়া ও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি ব্রিটেনে আছেন।
অন লাইন টিভ আসলে গুনে গুনে বলা মুসকিল।তবে এর মাঝে -লন্ডন বাংলা,এমএএইচ লন্ডন টিভি, রানার টিভি, জালালাবাদ টিভি, ৫২ বাংলা , ৫২ বাংলা টিভি, এনএলটিভি, ডিএল টিভি ,জিবি নিউজ, ৩ জি বাংলা , , হাওয়া টিভি , প্রবাস বাংলা টিভি, কিংডম চ্যানেল, চ্যানেল ইউরোপ ,সিলেটের টিভি, ক্লিক টিভি,রিলাক্স টিভি , স্পাকট্রাম বাংলা রেডিও এ্যান্ড টিভি, দর্পন টিভি ,রুপালী টিভি ,মুক্তি টিভি , ইউকে বাংলা টিভি , ফোকাস টিভি,বিটিভি ইউকে , প্রবাস দর্পন টিভি,ইউকে বিডি টিভি ,দি গ্লোবাল টিভি সহ অন্যান্য নতুন নতুন অন লাইন টিভি চ্যানেল গুলিতে প্রতিদিনই কোন না কোন প্রগ্রাম দেখছি।
প্রবাসে বাংলাদেশীদের ৬টি স্যাটেলাইট টিভি সহ অসংখ্য অন লাইন টিভি বাংলাদেশের রাজনৈতিক , সামাজিক , সাংস্কৃতিক , সম সাময়িক ঘটনা নিয়ে অনুস্ঠান সর্বপুরি বাংলাদেশকেই প্রবাসে তুলে ধরা হচ্ছে।সেই সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অন লাইন টিভি র সাথেও ব্রিটেনের বাংলাদেশী সাংবাদিক, লেখক , কবি সাহিত্যি এবং প্রজেন্টাররা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।
এটা সত্যিই আমাদের জন্য গৌরবের।
তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। কাজ করে যদি দিন শেষে অর্থ না আসে তবে শখ বেশী দিন স্থায়ী হয় না। শখ কে ধরে রাখতে এবং কাজের প্রতি আরো মনোযোগী হতে অবশ্যই অর্থের প্রয়োজন । যারা অর্থনীতি ভাবে স্বচ্ছল এবং সুপরিকল্পিত ভাবে করতে পারবেন তারাই এগিয়ে যাবেন।আনুশাংগিক অনেক কিছুই লাগে । শুধু সময় আছে করে ফেললাম তা নয়। সেই সাথে আপনার বিষয় বস্তুকে পরিস্কার রাখতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে।আপনার চেয়ে সম্মানীত দর্শকরা অনেক বুঝেন।যারাই করছেন এবং করবেন সুপরিকল্পিত ভাবে করুন। সকলের প্রতি শুভ কামনা রইল।
লেখক: মো: রেজাউল করিম মৃধা, ইভেন্ট এন্ড ফেসিলিটি সেক্রেটারি, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব।