বাংলাদেশের পান,ব্রিটেন আসার অনুমতি।
কিন্তু কাটেনি সংশয়।

মো: রেজাউল করিম মৃধা।
গত বুধবার (২৬ মে ২০২১) সকালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকার শ্যামপুরে কেন্দ্রিয় প্যাকিং হাউজে ‘ইউরোপে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পান রফতানি’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
প্রথম চালানে রফতানি হচ্ছে এক মেট্রিক টন পান।এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, আমাদের নিরলস উদ্যোগের ফলে ইউরোপে পান রপ্তানী আবার শুরু হয়েছে। এটি খুবই আশার কথা। তবে ভবিষ্যতে পান রপ্তানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে।
ব্রিটেনের বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীরা মনে করেন পান আসার অনুমতি পেলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সমন্নয়হীনতার কারনে আবারো রপ্তানী বন্ধ হতে পারে। কেননা পান এবং শাকসব্জি ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রনালয় তারা মনে করেন সব গুলি মন্ত্রনালয় কে এক সাথে সম্বন্নয় করে কাজ করা এবং মনিটর করার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে সরকারকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশের পানে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে সাময়িকভাবে পান রফতানির উপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যা ধাপে ধাপে ২০২০ পর্যন্ত বর্ধিত করে।কিন্তু তারপরও গোপনে পান রপ্তানী করছিলেন কিছু অসৎ ব্যবসায়ীরা ।
নিষেধাজ্ঞার পরও শাকসবজির মধ্যে পান ঢুকিয়ে গোপনে ইউরোপে পান রপ্তানি করছিলেন কিছু ব্যবসায়ী৷ সেটিও ধরা পড়ার কারণে এখন ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এর ফলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের সুযোগ নষ্ট হতে পারে। ইইউ পান রপ্তানীতে কতিপয় শর্ত আরোপ করে।
যেমন:-
১/ পান সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হতে হবে,
২/ উৎপাদন হতে শিপমেন্ট পর্যন্ত উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ), ৩/ গুড হাইজিন প্র্যাকটিসেস (জিএইপপি),
৪/ গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (জিএমপি) অনুসরণ করতে হবে,
৫/ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব হতে সালমোন্যালা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত সার্টিফিকেট প্রভৃতি প্রদান করতে হবে।
ইইউ আরোপিত শর্তপূরণে বাংলাদেশ অনেকগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে।
১/ পান আবাদের এলাকা নির্বাচন,
২/কন্ট্রাক্ট ফার্মিং,
৩/ উত্তম কৃষি চর্চার আলোকে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, ৪/ মনিটরিং, ট্রেসিবিলিটি বা শনাক্তকরণ,
৫/ পানের স্যাম্পল টেস্ট,
৬/ কৃষক নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ,
৭/ রফতানিকারকদের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ,
৮/ নিয়মিতভাবে পানের জমির মাটি ও পানি পরীক্ষা,
৯/ রপ্তানি বাজারের জন্য নিরাপদ ও
১০/ বালাইমুক্ত পান উৎপাদন নির্দেশিকা প্রভৃতি।
এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ইইউ’র আরোপিত শর্ত পূরণ করতে পারায় গত ১৫ এপ্রিল ২০২১ সালে পান রপ্তানীর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। যার ফলে বুধবার থেকে পান রফতানি আবার শুরু হলো।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ২০১২-১৩ সালে ১৮ হাজার ৭৮০ টন ও ২০১৩-১৪ সালে ১৩ হাজার ২৫০ টন পান রপ্তানি হয়। যার মূল্য যথাক্রমে ৩৮ মিলিয়ন ও ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
ব্রিটেনের বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীরা মনে করেন পান আসার অনুমতি পেলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সমন্নয়হীনতার কারনে আবারো রপ্তানী বন্ধ হতে পারে। সরকার এমন পরিকল্পনা গ্রহন করা দরকার যাতে সবাই লাভোবান হতে পারে। ঢাকার শ্যামপুরে কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউজে পান ওয়াসিং এর জন্য ওয়াটার প্লান্ট অতি জরুরী ভাবে স্থাপন করা দরকার। সেই সাথে পরীক্ষা নির্ধার পর উন্নত প্যাকেজিং এর পর সঠিক মনিটরের মাধ্যমেই বিশ্বস্থতার সাথে পান ও সব্জি বিদেশে রপ্তানী করতে হবে।তা না হলে আবারো বন্ধ হতে পারে পান রপ্তানী ।সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বৈদেশিক মুদ্রা এবং সুমান অক্ষুন্ন হবে নিজ দেশের । সেই আশংকা রয়েই যাচ্ছে।