ফেলে আসা ইতালী, স্মৃতির পাতায়, রংগীন দিন। (পর্ব-১২)


ইতালীয়ান দের সাথেও অনেক সুসম্পর্ক হয়েছে। কাজের ফাঁকে অভিনয় শুধু প্রবাস নাট্য দলেই নয় ইতালীয়ানদের মাঝে ও অভিনয় করতে হয়েছে। ইতালীর টেলিভিশন রাই ওনু, দুয়ে এবং ত্রে তে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি।এর মধ্যে উল্লেখ্য

১৯৯৭ সালে “মাম্মা পের কাসো,

”১৯৯৮ “উন পস্তো আল সোলে

“১৯৯৮ “ডোসিয়ার ,”।

পূরনো দৈর্ঘ ইতালীয়ন সিনেমা “লা ফামে লা সেতে”১৯৯৮ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর ইতালীর সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিদের সাথে “বইপত্র”বিশেষ স্বাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।বাংলাদেশ সমিতি ইতালী এই প্রথম বারের মত ইতালীর টেলিভিশন রাই ত্রে তে সব দেশের সাথে কৌতুক, ধাঁ ধাঁ এবং কুইজ প্রগ্রামে অংশ গ্রহন করি। আমার সাথে অনুস্টান ছিলেন । রোমে সবার পরিচিত সংবাদিক লুৎফর রহমান। এছাড়া অতিথি হিসেবে ছিলেন , বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর সভাপতি জি এম কিবরিয়া, আর একজন । দু:ক্ষু জনক হলেও সত্য আমরা সেমিফাইনালে উঠলে ও বিজয়ী হতে পারিনি। তবে ইতালীর মিডিয়া জগতে বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের ব্যাপক পরিচিতি লাভ হয়। ইতালীর মিডিয় জগতে এক পরিচিত নাম হয়ে উঠলাম। অভিনয়ের জন্য ইতালীর বিভিন্ন শহরে যেতে হয়েছে । বড় বড় নাম করা অভিনেতা অভিনেত্রীদের সাথে অভিনয় করতে হয়েছে।

মনে পরে রোমের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে ছোট ছোট অভিনয় করেছি।অভিনয়ের জন্য ন্যাপলী গিয়েছি, ক্লাবরিয়া , সিসিলিয়া গিয়েছি। যাতায়াত ভাড়া সহ হোটেল থাকা, খাওয়া দাওয়া সব দিলেও ছোট খাটো অভিনয়ে পয়সা তেমন নেই।তবে অভিজ্ঞতা হয় অনেক।নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। দেখা হয় বিভিন্ন শহর এবং শুটিংয়ের স্পট। মনে পরে “লা ফামে লা সেতে “ ফিল্মে অভিনয় করার জন্য সিসিলি গেলাম। সেদিন সত্যি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়েছিলো।আল ইতালীয়া এয়ার লাইন্সের টিকে ট। রোম ফিউ মিসিনু এয়ারপোর্ট নিয়ে এসে নামিয়ে দিলেন কাজের মালিক এন রিকো। তখন আমি একটি বাংকারেল্লায় কাজ করি। মালিক ও ইতালীর থিয়েটারে অভিনয় করেন। এজন্য আমাকে অনেক সহযোগিতা করেন। এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে চলে এলেন। আমি ইমিগ্রেশন পার হয়ে ভিতরে গেলাম এক অন্য ধরনের অনুভুতি।

এই প্রথম আল ইতালীয়া এয়ার লাইন্সে উঠলাম । রোম থেকে কাতালোনিয়া এয়ারপোর্ট মাত্র ঘন্টা খানেকের মত সময়। সাগরের পাড়ে চমৎকার এয়ারপোর্ট ।ছোট এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পার হতে বেশী সময় নাগে নাই তবে ইমিগ্রেশন পার হতেই তাজ্জব ব্যাপার আমার জন্য খুব দামী এক গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা রয়েছেন হোটেলের ড্রাইভার । ইমিগ্রেশন পার হতেই আমার কারিম নাম লেখা নিয়ে দাঁড়িয় আছেন । তার সাথে সাথে গাড়ীতে যেয়ে উঠলাম। পাহাড়ের পাশ দিয়ে সমুদ্রের পাড় দিয়ে অপরুপ দৃশ্য দেখতে দেখতে যেতে লাগলাম। শুটিংয় স্পটের কাছে।

বিশাল বিলাস বহুল হোটেল। আগে কখনো এমন দামী হোটেলে আমি থাকিনি। একা এক রুম বিশাল ব্যাপার। হোটেল রুমে যেয়ে ফ্রেশ হলাম কিছুক্ষনের মধ্যে ফোন এলো । ফোন করলেন, লা ফামে লা সেতের অভিনেতা ও পরিচালক। আন্তোনিও আলবানেজে। তিনি হচ্ছেন ইতালীর অন্যতম নামী একজন অভিনেতা। আন্তোনিও আলবানেজ কে এই প্রথম দেখলাম। নিচে এলাম খাবারের বিশাল ডাইনিং রুম । আরো বেশ কয়েকজন অভিনেতা অভিনেত্রী রয়েছেন । খাওয়া দাওয়া হলে আমি অনেকটা সংকোচিত কেননা সবাই ইতালীয়ান এক মাত্র বিদেশী আমি। মাংস খেতে যেয়েও থেমে গেলাম। কিসের মাংস? তাই সব্জি সহ অন্যান্য খাবার খেলাম। তখন সন্ধ্যা গরিয়ে রাত। রাতের খাবার খেয়ে গাড়ী রেডী এবার যাওয়া হলো ঘুরে বেড়ানোর জন্য ।

এক পাশে কাতালনীয়া অপর পাশে সিসিলি। মাঝখানে সমুদ্র সত্যি চমৎকার সেই দৃশ্য কোন দিনই ভোলার নয়।রাতে হোটেলে এসে জানালা দিয়েও আবার সেই অপরুপ দৃশ্য দেখার স্বাধ মিটছেনা। পরের দিন ভোর হতে না হতেই রুমে ফোন বেঁজে উঠলো। বলা হলো তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে ব্যাগ সহ নেমে এলাম নাস্তার টেবিলে সবাই অপেক্ষমান নাস্তা সেরে সবাইকে নিয়ে এক এক করে গাড়ী উঠে এবার ছুটে চলা আসল গন্তব্যে । পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল গীর্জা এবং সেই গীর্জায় শুটিং । স্পটে যাওয়ার সাথে সাথে এসিসটেন্ট ডিরেক্টর সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছেন। তার নির্দেশে কস্টিউম ডিরেক্টর কাছে গেলাম আমাকে নির্দিষ্ট পোষাক দিলেন । পোষাক পরে অপেক্ষায় আছি। কখন পরবে সেই ডাক। এর মাঝে চলছে হাল্কা খাওয়া দাওয়া।


Similar Posts