ফেলে আসা ইতালী, স্মৃতির পাতায়, রংগীন দিন। (পর্ব-১৩)।

মোল্লা ভাইর বাসায় সব সময় লোক জনের আনাগোনা।বাসায় পরিচিত অপরিচিত অনেকেই আসেন এবং যান। একদিন বাসায় টাকা চুরি হয়েছে কথাটা শুনে বেশ খারাপ লাগলো। ঐ মানুষটি ও বেশ কয়েক দিন ধরেই এই বাসায় থাকেন। জামাই কালাম বেশ চিন্তিত । কেননা তার পাশের সিটেই এই লোক থাকতেন। বাসার সবারই মন খারাপ হঠাৎ করে এমন একটি ঘটনা। কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
মোল্লা ভাই বাসার সবাইকে বার বার সতর্ক করছেন। কে টাকা নিয়েছেন। যে টাকা নিয়েছেন তাকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কঠোর হুসিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছ না । আমাদের সবার ব্যাগেই কিন্তু কম বেশী টাকা পয়সা আছে।যে যার মত করে টাকা রাখেন। কেউ মানিব্যাগে কেউবা নিজস্ব ডয়ারে যে যার মত করে সেইফে টাকা রেখেছেন। বাসায় এ চুরির পর সবাই আরো সতর্ক হয়েছিলেন।ব্যাংক কিম্বা পোস্ট অফিসে একাউন্ট করে টাকা জমা রাখা শুরু হলো। তবে যারাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে অথবা যারা সরাসরি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। সবার পকেটেই কমবেশী টাকা পয়সা আছে।দিনের বেলায় বেশীর ভাগ লোক কাজে বাইরে থাকেন। এই সুযোগেই কোন এক জন টাকা চুরি করেছেন। এক দিন রাতে কাজে থেকে ফিরছি। দেখি বাসায় প্রায় সব সদস্য উপস্থিত। মেহমান হিসেবে আছেন প্যারিস থেকে এসেছেন আব্দুল বারেক ভাই। বেশ উঁচু লম্বা লোক বাংলাদেশের গফুর গাঁও বাডী।
মোল্লা ভাইর বন্ধু এর আগেই একবার এসেছিলেন। প্যারিসে বেশ পরিচিত কারন তার ছোট ভাই আব্দল মালেক তখন কার সময় ফ্রান্স বি এন পির সভাপতি। বাসায় প্রবেশের পর সবার মুখে কস্টের ছাপ পরিস্কার ফুটে উঠছে। রুমে ডুকতেই মোল্লা ভাই বললেন, বাসায় চুরি হয়েছে শুনেছো? আমি বললাম, শুনেছি।মোল্লা ভাই বললেন , “আজ আমরা বিচার করেছি।”আমি বললাম, “ভালো করেছেন”।মোল্লা ভাই বললেন, চোর ধরতে পারি নাই তাই সবাইকে টাকা ভাগ করে দিয়েছি।তখন আমার মাথায় রক্ত উঠেগেছে। আমি বললাম, আপনাদের এ বিচার আমি মানিনা।এই কথার সাথে সাথে বারেক ভাই , রেগে আমার সামনে এসে বললেন, সবাই বিচার মানে আর তুমি মানো না।আমি বললাম আপনারাতো বিচার করেন নাই। অবিচার করছেন।তিনি আরো রেগে গেলেন।বললেন, তোমার কাছে বিচার শিখতে হবে?তুমি ছোট মানুষ। কথা কম বলো।আমি বললাম , আমি আপনাদের এই বিচার মানিনা।তিনিতো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।উত্তেজনা বেড়ে গেল।তখন মোল্লা ভাই এসে বললেন, ভাই না ভালো তুমি শান্ত হও। তোমাকে এই টাকা দিতে হবে না।আমি বললাম আমি দেব না কেউ দেবে না। জরিমানা দিতে হলে আপনে দিবেন।
মোল্লা ভাই দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লেন। বাসার সবাই এখন আমার পাশে এসে দাঁড়তে শুরু করলেন। আমি একের পর এক যুক্তি দিতে লাগলাম। বারেক ভাই ও দেখলেন আমি নাড়ছ বান্দা। মানুষ ছোট হলে কি হবে কথায় যুক্তি ঠি ক আছে।মোল্লা ভাই বারেক ভাইকে বসতে বললেন। মোল্লা ভাই সবাইকে আস্তে কথা বলার জন্য বললেন। কেননা তখন অনেক রাত আশেপাশের বাসার মানুষ ঘুমাচ্ছেন। এমনিতেও এ বাসার নামে অনেক কমপ্লেইন আছে। পোরতেয়ার বারবার বলেও কোন লাভ করতে পারেন নাই। লোক কমে না বরং বাড়ে।
প্রতিদিন নতুন নতুন লোক আসেন। আমি বললাম, আপনারা কোন কথার উপর? কোন এভিডেন্সের উপর বিশ্বাস করে বিচারের রায় দিলেন? এখন তো বিচারকরা একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি শুরু করছেন।আমি বললাম, “আমরা বেশ কয়েক মাস ধরেই এ বাসায় আছি। মোল্লা ভাই বললেন হ্যাঁ ।তখনতো চুরি হয় নাই।মোল্লা ভাই বললেন না।এক জন বললেন তার তিন হাজার ডলার চুরি হয়েছে। আপনারা বিশ্বাস করলেন এবং একবারও জিজ্ঞাসা করলেন না। তোমার কাছে এত ডলার আছে । কিভাবে অন্যরা জানলো? বারেক ভাই কথার উত্তর দিতে চাইলেও মোল্লা ভাই থামিয়ে দেন।আমি বললাম, আপনাদের প্রথম উচিত চোর ধরা। কে চুরি করেছে তাকে ফাইন্ডআউট করুন।বাসার সবাই চোর না। আমরা চুরি করার জন্য বিদেশে আসিনাই। আমি চোর না এবং বাসার সবাই চোর না। এবার বিচারক দের মুখ কালো হয়ে গেলো।মোল্লা ভাই কথার সুর পালটে গেলো বললেন, কে টাকা চুরি করেছো সকাল হওয়ার সাথে সাথে টাকা বের করে টেবিলের উপর রেখে দিও। চোর কিন্তু ধরা পরেছিল।
কিন্তু আমরা কেউ সরাসরি বলি নাই তাকে লজ্জ্বা দেওয়ার জন্য। অবশ্য সেই রাতে বাসার সবাই আমাকে বাহবা দিয়ে ছিলো। একজন বললেন রেজাউল ভাই , “আপনি আমাদের সম্মান বাঁচিয়েছেন না হলে আমাদের সবাই চোর হয়ে যেতাম, মিথ্যা চোরের অপবাদ নিয়ে চলতে হতো,”। পরিস্কার মনে আছে আর এক রুমমেট বললেন, যদি আগের বিচার রায় মেনে নিলে মাঝে মধ্যেই চুরির কাহিনী হতো। পর দিন কাজে থেকে বাসায় এসে শুনি বাথরুমের ছোট্ট সেল্ফে £১৪ শত ডলার পাওয়া গেছে। বাসার সবাই খুঁসি। যিনি টাকা চুরি করেছিলেন তিনিও নিজে অন্য বাসায় চলে গিয়ে ছিলেন।এর পর রোম শহরের ছোট খাটো অনেক বিচারেই আমাকে যেতে হয়েছে।