ফেলে আসা ইতালী,স্মৃতির পাতায়, রংগীন দিন। ( পর্ব-১৯)।


১৯৯৮ সালের বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর নির্বাচন ছিলো সব চেয়ে বৃহৎ এবং জাঁকজমক পূর্ন নির্বাচন। টেস্তেভেরে নদীর ধারের কমিউনিটি সেন্টার বাংলাদেশীদের পদচারনায় ছিলো মুখরিত। হাজার হাজার ভোটারের উপস্থিতি। শুধু রোমের তা নয় এসেছেন বিভিন্ন শহর, বন্দর ও নগর থেকে কেউ এসেছেন ট্রেন বা বাসে আবার অনেকে দূর শহর থেকে এসেছেন বাস ভাড়া করে পিকনিক করার মত আনন্দ করতে করতে।

সবার উদ্দেশ্য একটি ভোটের মাধ্যমে নতুন যোগ্য নেতার হাতে বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর দায়িত্ব দেওয়া। যাদের মাধ্যমে উপকৃত হবে পুরো বাংলাদেশী কমিউনিটি । অবশ্য দুই প্যানেলেই রয়েছেন যোগ্য প্রার্থী কেউ কারো চেয়ে কম নয়। তার পরও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে রয়েছে আলাদা ধরনের শান্তি। জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। যে কোন কাজেই যেনো যেনো তাদের দায়িত্বভার বেশী। যারা যারা বাস ভাড়া করে আনকোনা, পালেরমো, প্রাতো, বলোনিয়া , ভিসেন্সা, মেস্ত্রে ভেনিস সহ বিভিন্ন শহর থেকে বাংলাদেশ সমিতির ইতীলীর ভেটার রা বাসে বাসে আনন্দ করতে করতে রোমে এসেছিলেন বাসে বাসেই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন কে কাকে ভোট দিবেন। এ জন্য দেখা গেছে রোমের বাহিরের ভোটের সব চেয়ে বেশী দাম। আবার অনেকে বাস থেকে নামার পর যাদের আপ্যায়ন পেয়েছেন তখনও ভোটারে মন পরিবর্তন করেছেন। সেই নির্বাচন সত্যিই ছিলে আনন্দময়।

আমি মানিকগন্জের ছেলে আমার ভোটার সর্বমোট ২৭ জন এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ২৫ জন। একজন ছিলেন বাংলাদেশে অপরজন রোমের বাহিরে । তখন এক একটি ভোটের দাম অনেক সেটা টাকার সাথে পরিমাপ করা যায় না। মানিকগন্জের আব্দুল মোতালেব মোল্লা ভাই, নাসির উদ্দিন ভাই, এরশাদ ভাই, মতিয়ার ভাই, মফিজ ভাই ,আক্তার ভাই , টুপি ভাই, মোক্তার ভাই,শরীফ ভাই নুরুল ইসলাম মোল্লা ভাই সহ সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। নাসির উদ্দিন ভাইর কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ তিনি আমার পুলিং এজেন্ট ছিলেন, তিন দিনে তিনি একবারও বাসায় যাননি। রাতদিন ভোট কেন্দ্র ছিলেন। সেই সাথে দুই প্যানেলের ৩০ জন এবং সতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন তিন জন সর্বমোট ৩৩ জন পুলিং এজেন্ট, প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনারের লোক সহ সব সময় একটি আনন্দ ঘন পরিবেশ ছিলো কেউ কেউ বাসায় যেয়ে আবার ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে আবার এসেছেন কিন্তু নাসির উদ্দিন ভাই একবারও বাসায় যান নাই। মাঝে মধ্যে বাইরে এসে খাবার নিয়ে যেতেন এবং খবর দিয়ে যেতেন। সেই খবরের অপেক্ষায় টি টি পাখির মত সব প্রার্থী এবং ঘোর সাপোর্টাররা অপেক্ষা করতো। নুরুল ইসলাম মোল্লা ভাইর ভিক্টরিয়ায় ব্যাবসা করার ফলে আমার জন্য অনেক প্রচার করেছেন। এছাড়া গাড়ী করে রাতে বহু বাসায় গিয়েছি। তখন আমার গাড়ী ছিলোনা তাই মোল্লা ভাইর সেই সহযোগিতা আমার জীবনে স্মরনীয় হয়ে আছে।মানিকগন্জের সন্তান হওয়াতে এবং আমি প্রার্থী হওয়ার পূর্বেই মানিকগন্জ জেলা সমিতির থেকে মিটিং এর মাধ্যমে অনুমতি নিয়েছিলাম। সংখ্যায় কম হলেও সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।

মানিকগন্জের ভোটার কম হলেও বৃহত্তর ঢাকা সমিতি আমাকে অনেক এবং অনেক সহযোগিতা করেছেন।হাবীব চৌধুরী ভাই এত সহযোগিতা করেছেন বলে শেষ করা যাবে না। হাবীব ভাইর হাতের লেখা খুব সুন্দর প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আমার এক টি ছবি দিয়ে নিজ হাতে লিখে পোস্টার করলেন। দসেই পোস্টার এক সুন্দর হয়েছিল আমার মনে আছে পোস্টার দেখেই সবাই বলতেন “তুমি পাশ,”। এছাড়া সিরাজ দেওয়ান ভাই, প্রিন্স ভাই, সোয়েব ভাই, বৃহত্তর ঢাকা সমিতির সভাপতি সেলিম ভাই, নুরুজ্জামান লাকী ভাই , হেন্ডী দি কস্তা ভাই, বাচ্চু ভাই এবং হাসান ইকবাল ভাই। এছাড়া প্যানেলের কারনে শরিয়ত পুর ও বৃহত্তর ফরিদ পুর লোকমান ভাইর বাড়ী একারনে সে সব ভোটাররা ও আমাদের সাপোর্ট করেছেন।আপনারা জানেন প্যানেলের কারনে যে সব এলাকার বা জেলার প্রার্থী নেওয়া হয় সে সব জেলার ভোট সাধারন নিয়মেই নিজেদের ধরে নিতে হয়।প্রতিটি প্যানেল ছিলে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই । দু প্যানেলই সামনে সমান। এর মধ্য থেকে যে সামান্য ভোট বেশী পাবেন তিনিই হবেন বিজয়ী। আর এই সামান্য ভোটের জন্যই দিনরাত পরিশ্রম। সর্বপূরি বাসার সবাই আমাকে মনেপ্রাণে সাপোর্ট করতেন সহযোগিতা করতেন। ভাগিনা জহির, টি পু ভাই , বিদ্যুৎ তো বিদ্যুৎতের গতিতে কাজে সহযোগিতা করতে মনে হতো এ কাজ তাদের কাজ। যে কোন অনুস্ঠানে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য সদাপ্রস্তুত মাঝে মধ্যে শহিদুল্লাহ ভাই, আজাদ ভাই মনির ভাই সহযোগিতা করতেন।

এছাড়া অনেকেই আমাকে সহযোগিতা করতেন সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রবাস নাট্য দলের কাছে অনুমতি নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছি। তাই আমার সহকর্মী সবাই আমার জন্য কাজ করেছেন। অবশ্য কিবরিয়া ভাইর প্যানেল থেকে এস এম সেলিম সহ সভাপতি পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হতে পারেন নাই কিন্তু রোকেয়া ভাবী মহিলা সম্পাদিকা পদে বিজয়ী হন। এক সংগঠন থেকে দুই প্যানেলে প্রার্থী হয়েছিলাম। এজন্য কিছুটা বিভ্রান্তি হলেও আমি যেহেতু মিটিং এর মাধ্যমে অনুমতি নিয়েছিলাম তাই সবাই আমাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।বাংলাদেশ সমিতির ইতালীর সব ভোটাররাই অনেক বুদ্ধিমান এবং বিবেক বান ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সুবুদ্ধিতার পরিচয় পাওয়া গেছে। বৃহত্তর ঢাকার সবাই এতটা সাপোর্ট করেছেন, শ্রম দিয়েছেন, ভোট দিয়েছেন এবং ভোট দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। তাদের কাছেও আমি চির কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর প্রতিটি সদস্য এবং ভোটারের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। তাদের ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছি বলে আজও আমি গর্বিত। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তাদের সামান্য হলে সেবা করতে পেরেছিলাম।সেই সময়ের স্মৃতি গুলি হয়ে আছে এবং থাকবে চিরকাল।


Similar Posts