ফেলে আসা ইতালী,স্মৃতির পাতায় রংগীন দিন। ( পর্ব-৮)
সেই সময় রোমে একটি কাজ পাওয়া ছিলো স্বপ্ন।কাজ বলতে যেটা বুঝায় অফিস আদালত অফিসার হয়ে কাজ করা। কিন্তু না সেটা তো মোটেই সম্ভব নয়। সেই সময় রেস্টুরেন্ট , হোটেল, বার কিম্বা সুপার মার্কেট কিম্বা শপে। না যে সব বাংলাদেশীরা পূর্বে থেকে ছিলেন। কাজ করতেন মাত্র হাতে গুনা কয়েক জন বেশীর ভাগ মানুষ। হকার্স বা ফুটপাতে ব্যাবসা করতেন। অথবা খোলা বাজারের সামনে পুটলা করে রসুন বিক্রি করতেন।
অবাগ হচ্ছেন ?ভাবছেন আমি বেশী বলছি ? রুপ কথার গল্প বলছি? মোটেই না। তখন কার বাস্তব চিত্র তুলে ধরার সামান্য চেস্টা করছি।হয়তো সন তারিখ এদিক সেদিক হতে পারে তবে এক বর্ন বাড়িয়ে লিখছিনা। ১৯৯০ সালে কাগজ পাওয়ার পর থাকার জায়গা যেমন সমস্যা ছিলো কাজ পাওয়া ছিলে আরো সমস্যা মহা সমস্যা। কাজ না পেয়ে রাস্তার সিগনালে দাঁড়িয়ে গাড়ীর কাঁচ পরিস্কার করা শুরু হয় । সিগনালের লাইট পরার সাথে সাথে দাঁড়ানো গাড়ীর কাঁচ পরিস্কার করে হাত পেতে রাখা হতো কেউ হয়তো পয়সা দিতেন। আবার কেউ না দিয়েই চলে যেতেন। এক দুজন নয়। এমন হাজার হাজার বাংলাদেশের সিগনালে গাড়ীর কাঁচ পরিস্কার করেছেন। সহজ ভাষায় বলা হতো ডান্ডা মারা। অবশ্য এই ডান্ডা মেরে অনেকেই মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতেন। মিলালিরা ইতালীয়ান মূদ্রার নাম ছিলো । এটার চালান কম লাভ বেশী ।
অনেকেই বলতেন “ কম দামে ব্যাবসা করতে চান? একটি বালতি, এক বোতল সাবান আর একটি ডান্ডা কিনে সিগনালে দাড়িয়ে যান। তবে শারীর পরিশ্রম ছিল অনেক । সারা দিন রাস্তায় রোদ্র বৃস্টি মাথায় নিয়েই কাজ করতে হতো। শুধু বাংলাদেশীরা তা নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকেরাও এই ভাবে ডান্ডা মারতো। অবশ্য ভালো সিগনাল পেতেও অনেক কস্ট সাধ্য ছিলো। দেখা যেতো সব সিগনালেই লোক আছেন। যিনি আগে শুরু করেছেন তারই এই সিগনাল। বাহ কি সুন্দর নিয়ম। অবশ্য মাঝে মধ্যে সে নিয়মের ও ব্যাতিক্রম হতো। যার শরীরে শক্তি বেশী ছিলো তিনি জোর করেই দখল করতেন। এ নিয়ে অনেক সময় মারামারি হতো। তারপরও সংগ্রাম করেই সিগনাল গুলিতে টিকে থাকতে হতো। খুব ভোরে উঠেই অনেকেই ছুটে যেতেই সেই সব সিগনালে ম্যাচ লাইট ও টি সু বিক্রি করতে। ইতালীয়ান ভাষায় বলা হতো আসন্দিনী ও ফাসেলতিএখানে অবশ্য বেশ চালান বা পুঁজি খাটাতে হতো। মাল পত্র কিন্তে হতো চুরি করে কেননা দোকান থেকে কিনে বিক্রি করলে তেমন লাভ হতো না তাই ভয়া কাসেলিনায় একটি মরেক্কীর বাসায় পাইকারী বিক্রি করতো তবে দিনে নয় পুলিশের ভয়ে সন্ধ্যার পর বিক্রি করতো বাংলাদেশীরা এক এক জন করে দূরে দাড়িয়ে থাকতো কত টাকার কিন্বেন সেই মিলা লিরা নিয়ে যেত এবং কিছুক্ষন পর সেই পরিমান আসন্দিনী ফাসেলতি নিয়ে আসতো। সারা দিন সিগনালে সিগনালে বিক্রি করে লাভ রেখে আবার সন্ধার পর মাল কেনার জন্য মরোক্কীর বাসার সামনে চুপি চুপি দাড়িয়ে থেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাল এনে আবার রোদ বৃস্টিতে ভিজে সিগনালে মাল বিক্রি করা। সে এক কঠিন কঠোর জীবন।
রসুন পাওয়া কিছুটা সহজ হলেও বিক্রি করাটা ছিলো বেশী কস্টের। রসুন বেশীর ভাগ সময় বয়স্কা মহিলারা কিন্তেন। খোলা বাজারে বাজার করতে আসা মহিলাদের বার বার অনুরোধ করে বিক্রি করতে হতো। শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে হয় অনেকটা বাহায়য়ার মত। একবার না করেছেন কিন্তু বারবার অনুরোধ করতে করতে অনেক সময় বিরক্ত হয়ে বুড়িরা এক পুটলা এক মিলা লিরা কিম্বা দুই মিলা লিরা দিতো। অনেকে ব্যাবসা করার জন্য বুড়িদের দেখলেই। মা মা বলে জান দিয়ে দিতেন।ফামে ফামে বলে অর্থাৎ না খেয়ে আছি অভিনয় করতে হতো। সেই দিনের সেই রসুন ব্যাবসায়ী আজকে অনেকই প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী হয়েছেন। সুপার মার্কেটের সামনে ট্রলি ঠেলেও আজ অনেকে হয়েছেন সমাজের মধ্য মনি। সুপার মার্কেটের সামনে দাডিয়ে থেকে অপেক্ষা করতো কখন আসবে ট্রলি সহ ।বাজার শেষে বের হয়ে । ট্রলি সহ বের বয়ে এলে ট্রলির মান পত্র গুলি স্বযত্নে গাড়িতে তুলে দিতো বিনিময়ে ট্রলিতে থাকা পন্চাশ পয়াসা অনেক সময় কাস্টমাররা সন্তুষ্ট হয়ে কিছু ভাংতি পয়সা বকসিস করতো।
সে ভাংতি পয়সা পেলে খুসিতে চোখে মুখে আনন্দের ছাঁপ ভেসে উঠতো। সুপার মার্কেটের কারপার্কিং এ গাড়ী পরিস্কার করেও অনেকে , অনেক টাকা রোজগার করতেন। এখানে অবশ্য পুলিশের ভয় কাজ করতো। পুলিশের গাড়ী দেখলেই কাজ ফেলে দিয়ে ভদ্র মানুষের মত দাডিয়ে থাকতো অথবা হেঁটে হেঁটে অন্যদিকে চলে যেতেন। অনেক সময় পুলিশে ধরে জরিমানা করেছেন। থানায় বা কস্তুরায় নিয়ে ফিন্গার পিন্ট রেখে ছেড়ে দিয়েছেন।এই সব কার পার্কিং এ কাজ করা নিয়ে বাংলাদেশীদের মধ্যে বেশী ঝগড়া হতো সবাই যেন তৈরী কাজ টি , তৈরী জায়গাটি পেতে চায়। এক দিকে পুলিশের ভয় অপর দিকে দখলের ভয় এবং না পাওয়ার ভয় । সব ভয়কে জয় করেই জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। হকার্স বা বিজুটেরিয়া ব্যাবসা। বাংলাদেশীদের মধ্যে একটু ভদ্র ব্যাবসা ছিল এই ফুটপাতের হকার্স ব্যাবসা। আজ যত বড় বড় ব্যাবসায়ী দেখছেন এদের বেশীর ভাগ এই বিজুটেরিয়ার ব্যাবসা দিয়ে শুরু।সেই ছোট ব্যাবসা থেকে আজ অনেকেই হয়েছেন সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়ী। পরিবর্তন করেছেন জীবনের গতিকে।অনেকেই হয়েছেন সামাজিক, রাজনৈতিক , আন্চলিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা। প্রতিষ্ঠিত সমাজ সেবক।