ফেলে আসা ইতালী,স্মৃতির পাতায়, রংগীন দিন। (পর্ব-২২)

Italy Diary

নতুন কার্যকরি পরিষদের , নতুন অফিস, নতুন নতুন কার্যকর্ম সবার মুখে আনন্দের হাঁসি। তখন আমরা সবাই জন সেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিনই নতুন নতুন লোক আসছে।নতুন দের বাংলাদেশ সমিতি রোম , ইতালীর সদস্য কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ড নেওয়ার জন্য প্রতিদিনই নতুন নতুন লোক আসে। নতুন অফিসের চাবি কিবরিয়া ভাইর কাছে এবং এক কপি চাবি শাহ আলম ভাইর কাছে। শাহ আলম ভাই হচ্ছেন নতুন কমিটির মনোনিত সম্মানীত সদস্য তিনি অফিস খোলেন এবং বন্ধ করেন।অফিস সেক্রেটারী হিসেবে অল্প দিনের মধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করলেন। কিবরিয়া ভাইর খুব বিশ্বস্ত আমারও বন্ধু মানুষ। যদিও সম্মানীত সদস্য নিয়োগের সময় অনেক আলোচনা সমালোচনা এবং কে কোন প্যানেলের সমর্থক এসব নিয়েও অনেক বিশ্লেষন হয়েছে। কিবরিয়া ভাইর প্যানেলে যেহেতু লোক বেশী তাদের প্রাধান্য বেশী থাকবে এটাই স্বাভাবিক তার পরও অনেক যুক্তিতর্ক করেই দুই প্যানেল সমঝতার মাধ্যমেই নেওয়া হয়েছে। তবে যে প্যানেলেরই হোক সবাই আমার পরিচিত বন্ধু । আমি কাজের মানুষ কাজ করতে ভালোবাসি সবাই আমাকে আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করেছেন। এমন কি উপদেস্টা পরিষদ সহ সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন এ জন্য সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

পাসপোর্ট যারা বানাতে আসেন অর্থাৎ সমিতির মেম্বারশীপ কার্ড যারা নিতে আসেন তাদের সবার সাথে সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিদিন ঝগড়া হতো ।

বলবেন কেন?কারন বয়স নিয়ে।সবাই বয়স কমাতে চায়।মজার ব্যাপার হলো।বয়স কমাতেই হবে। কমপক্ষে ১০ বছর।এমন ও দেখা গেছে বাবা এবং ছেলে অনেক কস্ট করে বহু দেশ পাড়ি দিয়ে ইতালী এসেছেন।সমিতির কার্ড করতে এসে বয়স কমাতে কমাতে ছেলের চেয়ে বাবার বয়স এক বছর কম।এখন বলেন আমরা কোথায় এসে দাড়িয়েছি।যে যেভাবে পারে বয়স কমাতে হবে। এই বয়স কমাতে যেয়ে অনেকে মহাবিপদে আছেন।অনেকে ১০ থেকে ১৫/২০ বছর পর্যন্ত কমিয়ে পাসপোর্ট করেছেন। সমস্যা হয়েছে তখন যখন কাগজ পাওয়ার পর স্ত্রী বা পরিবার আনতে গেছেন তখন পরেছেন মহাবিপদে। কাবিনের সাথে মিল নেই স্কুল সার্টিফিকেটের সাথে মিল নেই। বিভিন্ন অফিস আদালতে ঘুরতে ঘুরতে জান শেষ।আরো বড় সমস্যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে। কোন ঔষধ ই কাজ করে না। কেননা বয়সের সাথে কোন মিল নেই। আজীবন এই সমস্যা নিয়ে চলতে হবে।শেষ সমস্যা পেনশনের সময় আর আসে না। বয়স হয়েছে। পার হয়েছে বহু বছর কিন্তু হয় না সেই পেনশনের সময়। ভিতরে ভিতরে অনুশোচনায় হলেও সেই দিন আমাদের কথা না শোনার কারনে সারা জীবনই ফসতাতে হবে।

এক মজার ঘটনা বলি। আমি তখন ফিরেন্স থাকি। আমার খুব কাছের বন্ধু নাম নাই বললাম। তিনি নতুন ড্রাইভার নতুন গাড়ী নিয়ে ফিরেন্স থেকে পিচ্চা শহরে বেড়াতে গেছেন। রাউন্ড এবাউড বা চক্কর ঘুরতেই পুলিশের গাড়ীর সাথে এ্যাকসিডেন্ট করেন। পুলিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে , পাসপোর্ট নিয়ে চেক করে কিন্তু কিছুকেই বিশ্বাস করে নাই তার বয়স এত কম। শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে নিয়ে দাঁত পরীক্ষা করেছে তখন তার আসল বয়স বের করে তার সত্যিকারের বয়স বের করেছে। এখন সেই পুলিশের দেওয়া নতুন জন্ম তারিখে বয়স বেড়ে গেলো বার বছর । এখন তিনি পেনশনে যাচ্ছেন মহা আনন্দে।কিন্তু এই বয়স এতটা কমানো কতটা যে লজ্জার সেটা কে কারে বুঝাবে? সেই সময় বাংলাদেশ সমিতির একজন সদস্য হিসেবে সবাই গর্ববোধ করতো। রাস্তা ঘাটে কোথাও বিপদে পরলে সমিতির কার্ড দেখানোর সাথে সাথে পুলিশ ছেড়ে দিতো। কিন্তু এখন সমিতি কার্ড তো দূরের কথা পাসপোর্ট সহ ইতালীর বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি এ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য কত যে সমস্যা এটা শুধু ভুক্তভোগীরাই বুঝেন।


Similar Posts