ফিরে দেখা ইতালী,স্মৃতির পাতায় রংগীন দিন।(পর্ব-৪)


“নিজের নামে শাহাজাদা”। আল্লাহ যা করেন মানুষের মঙ্গলের জন্য করেন।আমাদের বুঝতে দেড়ী হয়। আমরা যদি পরিপূর্ন ভাবে আল্লাহ কে বিশ্বাস করি তবে দেখা যায়। আল্লাহ বিপদ দেন, দু:ক্ষ দেন কিন্তু এর পরে রয়েছে সুখবর। সুখ এবং শান্তি। আল্লাহ যাকে ভালো বাসেন তারেই দু:ক্ষ কস্ট বেশী দেন। সে দিন কস্ট পেলেও সারা জীবন শান্তি পাচ্ছি।অনেকেই সামান্য ক্স্ট নাকরে অন্যের নামে কাগজ করেছেন। আল্লাহ আমারে ভালো বেসেছেন তাই একটু কস্ট করার পর নিজের নামে কাগজ করেছি। লেখা পড়ার সার্টিফিকেট প্রবাসে কাজে না লাগলেও মনের তৃপ্তি আছে কিন্তু যারা অন্য নামে কাগজ করেছেন । পরবর্তিতে অনেক অনেক সমস্যায় পরেছেন। ঘাটে ঘাটে ঝামেলায় পরেছেন। পুলিশ ভেরিফিকেশনে এলাকার কেউ চিনেনা। ডাক্তারি কার্ড বা লাইনে দাঁড়ালেও নতুন নাম মুখস্ত না থাকায় অনেকেই বিরম্বনার স্বীকার হয়েছেন। নাম ছিল ইয়াকুব আলী এখন নাসির উদ্দিন। পুলিশে উদ্দিন করে খুজঁছেন কিন্তু উদ্দিন কে পাওয়া যাচ্ছে না যখন মনে পরেছে লাফ দিয়ে উঠেছেন। বলে আমিই উদ্দিন। মনকে স্থির করে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের নামে কাগজ করবো। যে চিন্তা সেই কাজ। কিভাবে পাসপোর্ট করা যায় । লাগবে একটি লস রিপোর্ট । অথবা বাংলাদেশ সমিতির আইডি কার্ড। বাংলাদেশ সমিতি ইতালীর কার্ড পেতে অনেক দিন সময় লেগে যাবে। যে লাইন দেখিতো প্রতিদিন তাদের ব্যাসতা। সোজা চলে গেলাম স্টেশনে টেরমিনির সাথেই পুলিশ স্টেশনে।এত দিন ঘুরে ঘুরে কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক কিছুই বুঝতে পেরেছি কি করলে কি হবে? প্রথম ধাঁপ লস রিপোর্ট । এমনিতেই মন খারাপ দুই রাত কস্ট করেও কাগজ জমা দিতে পারলাম না । পুলিশ স্টেশনে যেয়ে বললাম “ তুত্তা রুব্বাতো” পুলিশ বিশ্বাস করলো একটা ফর্ম দিলো । ফর্ম পূর্ন করলাম।তখন স্টেশনের আশেপাশে ঝিন্গারীদের চরম উৎপাত এটা পুলিশের জানা তাই বলা মাত্রই বিশ্বাস করলো আমার ফর্ম জমা দেওয়ার পর তারা লস রিপোর্ট দিয়ে দিলো। টেরমিনির নিচে এসে অটো মেশিন থেকে ছয় কপি ফোটো তুললাম। এর পর ৫২ নং বাসে উঠে বাংলাদেশ এম্বাসিতে গিয়ে দেখি দীর্ঘ লাইন । টোকেন নাম্বার নিয়ে । অপেক্ষা করলাম। দুপুরের খাবারের বিরতির মাঝে ও এম্বাসির কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রথম এম্বাসীতে আসা অবশ্য আর একবার বাসে করে এসে চিনে গিয়ে ছিলাম। এই সময় চেনার সমস্যা নেই এদিকের যে কয়েকটি বাস আসে তার প্রতিটিতেই বাংলাদেশীদের পাবেনই। দুপুরের খাবারের বিরতির পূর্ব মূহুর্তে আমার ডাক পরলো এম্বাসির ফর্ম পূর্ন করে ফোটো সহ জমা দিলাম। আর্জেন্ট সাত দিন পর দিবে। এই সাত দিন ও অনেক লম্বা সময় মনে হচ্ছে। রোমের বিখ্যাত নদী টেসতেভেরের পাশে সাহায্য কারী সংস্থা কারিকাসের সদস্য হলাম। সদস্য হওয়ার সাথে সাথেই কারিকাসের একটি কার্ড পেলাম এই কার্ড অনেক দামী। এরপর ভর্তি হলাম ইতালীয়ান ভাষা শিখার জন্য। আমি মনে করলাম অ দেশে থাকতে হলে ভাষা জরুরী । যেহেতু হাতে সময় আছে তাই ভাষা শিক্ষাকরার জন্য চেস্টা করা। সপ্তাহে দুদিন ক্লাস । আরো অনেকেই আমার দেখা দেখি কারিকাসে ক্লাস করার জন্য। সাইফুল আমিন ভাই এখানকার খবর দিলেন। তিনি এখানে ক্লাস করেন সাথে এখান থেকে মাঝে মধ্যে খাওয়া দাওয়া করেন। আমি শুধু ক্লাস করে চলে যেতাম।আসলে ভাষা আয়ত্ব করতে সময়ের ব্যাপার। তবে ক্লাস করলে ইতালীয়ান ভাষা তাড়াতাড়ি আয়ত্বে আসবে । এমনিতেই অনেক বিটখুটে মনে হয়। তারপর যেহেতু এই দেশে থাকতে হবে। ভাষা অবশ্যই জানতে হবে। না হলে অন্যের সহযোগিতা নিতে হবে। এবার ভাষার প্রতি বেশী মনোযোগ দিচ্ছি।সাথে কাগজ করার চিন্তাতো আছেই। এরই মাঝে বেড়িয়েছ নানা পথ। সহজে কাগজ পাওয়ার পথ।বাবুল ভাই বললেন ক্যানেডি হোটেলে একজন আছেন তিনি তারিখ পরিবর্তন করে দেন। নাম বললেন না আমার নাম শুনে কাম নাই কাজ দরকার। আরো অনেকেই এই পথ অবলম্বন করে কাগজ করেছেন। আমি তার কথা মত আমার কারিতাসের কার্ড দিলাম তিনি সাথে মাত্র £৫০ মিলা লিরা ব্যাস সব সমস্যার সমাধান। শুধু তারিখ পরিবর্তন । নিখুঁত ভাবে ১৯৯০ থেকে ১৯৮৯ করে দিয়েছে। খালি চোখে বুঝার উপায় নেই।৭ দিন পর পাসপোর্ট এনে কারিতাসের কার্ড নিয়ে যথারীতি ভোররাতে কস্তুরায় গেলাম অতি সহজে কাগজ জমা নিয়ে রিছিপট দিয়ে দিলো। নিজের নামে কাগজ করলাম। মনে হলো নিজের নামে শাহাজাদা ।


Similar Posts