পহেলা বৈশাখ মিশে আছে ,বাঙালিদের প্রাণে।
রমজান এবং করোনাভাইরাসের কারনে হচ্ছে না উৎসব।
মো: রেজাউল করিম মৃধা।
বাঙালিদের প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ।জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকল বয়সে সকলেই মেতে উঠে বৈশাখী আনন্দে।হোক সেটা গ্রামে, শহরে, দেশে কিম্বা প্রবাসে যেখানেই আছেন বাঙালী সেখানেই উৎসব।স্থান কাল পাত্র ভেদে ব্যাপকতার তারতম্য হলেও বৈশাখের আনন্দের যেনো কমতি নেই।বৈশাখ এলে নতুন করে ফিরে পাই পুরাতন স্মৃতি।
ফাগুনে গাছে গাছে আসে কুড়ি ফুটে ফুল – ফাগুনের রঙীন আভা শেষ হতে না হতেই আসে প্রচন্ড খড়তা নিয়ে চৈত্র। ঝাঁঝাল রৌদ্র সকল কে আকুল ব্যাকুল করে তোলে একটু ছায়ার অন্যেশায় , একটু বৃস্টির প্রত্যাশায় তীর্থের কাকের মত সকলের অপেক্ষা শেষ হতে না হতেই নববারতা নিয়ে চলে আসে বৈশাখ । নববারতার আগমনে আমরা উজ্জিবিত হই নতুন ভাবে।
শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা বৈশাখ কে সাজায় নতুন করে। হাজার বছরের সম্বৃদ্ধ শালী বাংলা সংস্কৃতি আমাদের ঐতিয্য।
আর তাই কবি বলেন,
প্রতাশায় সংকুচিত পাপড়ি
প্রস্ফুটিত হোক সমগ্র সৌন্দযে
সুরভিত হোক বৈশাখের প্রথম হাওয়া
দৃঢ হোক সম্পর্কের বন্ধন। শুভ বাংলা নববর্ষ ।
ষড় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ । ঋতু পরিবর্তনে সে নিজেকে সাজিয়ে নেয় আপন আংগিকে।গ্রীস্মে অম্রকাননে ফুল ফুটে।জাতীয় কাঁঠাল ধরে গাছে গাছে। বৈশাখ জৌস্ঠে বাবা মা নায়র নিয়ে আসে মেয়ে জামাইকে। খৈ চিডা মুড়ির ধুম পরে যায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
উত্তরে গাড় পাহাড় , দক্ষিনে বজ্ঞপো সাগর,পূর্বে আসাম ও ত্রিপুরা,পশ্চিমে নমেম্সল্যান্ড ভারত এমনই একটি ভৌগলিক সীমা রেখায় আমাদের মানচিত্র । লাল সবুজের সমারোহ আমাদের পতাকা দক্ষিন মলয় তার পত পত শব্দ আর সুর ছন্দের মত ধ্বনিত হতে থাকে।
বাংলা সন প্রবর্তিত হয়েছে সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫) আমলে। সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহনের বছর ৯৬৩ হিজরী (১৫৫৬ ঈসায়ী) সনকে শুরুর বছর ধরে ফসলী সন নামে যে সব প্রবর্তন করা হয় কালে তাই বাংলাদেশে বাংলা সন নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মূলত জমির খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে এ সন প্রবর্তন করা হয়। এর আগে এদেশের দেশীয় সন হিসেবে শকাব্দের প্রচলন থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজরী সন চালু ছিল গোটা ভারতবর্ষে।
হিজরী সনকে ভিত্তি বছর ধরে এ বাংলা সনেরও প্রবর্তন করা হয়। এভাবে দেখা যায় সনটি প্রবর্তনে এখানকার প্রধান দু’টি ধর্ম অর্থাৎ হিন্দু এবং মুসলমান উভয় ধর্মের একটি প্রভাব সনটির ওপর পড়েছে। বাংলা সনের ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিমের এ মিলিত স্রোত সনটিকে একটি অসাম্প্রদায়িক অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে যা উদার ইসলামী সংস্কৃতির পাশাপাশি বাংলাদেশী সংস্কৃতির সাথেও পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল।
বৈশাখের উদ্পত্তি সেই সম্রাট আকবরের আমল।হিজরী সনের ৯৬৩ সালে সম্রাট আকবর বাংলার খাজনা আদায়ের জন্য আমীর ফতেহউল্লাহ সিরাজী কে দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন।তিনি যে দিন থেকে খাজনা আদায় শুরু করেন সে দিনটি ছিল ১লা বৈশাখ আর সেই দিন থেকে শুরু হলো বাংলা সন গননা।
তখনকার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। খাজনা আদায় , হাল খাতা। সেই দৃশ্য ভেসে উঠলে এখনো শিউরে উঠে বাংলার কৃষকেরা। সারা বছর শস্য উৎপাদন করে নিজের গোলায় না তুলে খাজনা হিসেবে সবটুকুই নিয়ে যেতে হয় মহাজন অথবা জমিদারের গোলায়। তার পরও রক্ষানেই ঋনের বোঝা যেনো বাড়তেই থাকে। শেষ সম্বল ভিটে মাটি টুকু বিভিন্ন কৌশলে জমিদার দখল করে নিয়ে যায়।অসহায় সম্বলহীন কৃষক হাত জোরকরে আগামীতে বেঁচে থাকার জন্য ঋন নিয়ে আসে আর জমিদার আনন্দে মেতে উঠে। কৃষকদের শোষন করার অন্যতম হাতিয়ার ছিল হাল খাতা। চক্রবৃদ্ধি হারে ঋনের বোঝা রেখে যায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
আজ সেই দিন আর নেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে জমিদারী প্রথা। বৈশাখ এখন হয়ে উঠেছে বাঙালিদের মহা উৎসবে।বাংলা সংস্কৃতি লালন করে ক্ষনিকের জন্য হয়ে উঠে বাঙালী। ফিরে পেতে চায় ছোট্ট বেলার স্মৃতি।পুরাতন বছরের সব গ্লানী মুছে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।
বৈশাখ শুধু আনন্দ নিয়ে আসে তা নয়। কাল বৈশাখী ঝড়ে ধংস হয়ে ঘরবাড়িসহ গাছপালা। নস্ট হয় ফসলের মাঠ গ্রাম থেকে গ্রাম।এ ধংস মেনে নেওয়া চিরাচরিত অভ্যাস।
চৈত্রের প্রখর রৌদ্রে চৌচির হওয়া এক পসলা বৃস্টি আনন্দের বন্যা বয়ে দেয় আর তখন মনে হয় এ বুঝি বৈশাখ এলো।বৈশাখী মেলায় শত কস্ট দু:ক্ষু দুরে ফেলে নিয়ে আসে মহা আনন্দ।গ্রামে গ্রামে বসে বৈশাখী মেলা। কখনো হাটখোলা কখনো বটতলায়।
গ্রাম থেকে শহরের সর্বত্র। ঢাকা শহরে রমনার বটমূলে বসে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলা।
দেশ ছেড়ে প্রবাসেও যেখানে আছে বাঙালী সেখানেই মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে বৈশাখী উৎসব।লন্ডনের ঐভার্স ফিল্ড পার্কে আয়োজন করা হয় দেশের বাইরে সর্ব বৃহৎ বৈশাখী মেলা। সেদিন সবাই হয়ে উঠে বাঙালী।সাজানো হয় বর্নিল আয়োজনে । পান্তা ইলিশ থেকে শুরুকরে থাকে বাঙালীয়ানা সকল খাবার।থাকে মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।হয়ে উঠে বঙালীদের মিলন মেলা।
এছাড়া ছোট বড় বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করে বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখী উৎসব।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরেই আয়োজিত হয় সমান তালে বৈশাখীর অনুষ্ঠান। এটাই বা কম কিসের।প্রবাসে যে যেখানেই থাকুক না কেনো বৈশাখ এলে প্রানের নতুনের দোলা লাগে।
নতুন সূর্য ,নতুন আলো, নতুন দিন , নতুন মাস,নতুন বছর । নতুন একটি বছর শুরু হলো ।সবাই কে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ।
পবিত্র মাহে রমজান এবং করোনাভাইরস এর কারনে যদিও এ বছর বৈশাখী মেলা ও উৎসব এবং বৃহৎ আকারে দেশে এবং প্রবাসে বৈশাখ উৎযাপন করা হচ্ছে না। তাতেও দু:ক্ষু বা আফসোস করার কিছু নেই। অনেকে ঘরে বসেই পালন করছেন , এবারের বৈশাখ।
বৈশাখ মিশে আছে , প্রতিটি বাঙ্গালী প্রাণে।
শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৮।