| | |

ক্যামব্রিজ ইকো মসজিদ দেখার প্রহর গুনছেন।৮০০০ ভিজিটর।


মো: রেজাউল করিম মৃধা।

গত মংগলবার ঘরে এলাম বিশ্বের প্রথম ইকো মসজিদ । ক্যামব্রিজ সেন্ট্রাল মসজিদ। মসজিদটি দেখার জন্য অপেক্ষায় আছেন ৮ হাজারের ও বেশী পর্যটক। করোনাভাইরস মহামারির কারনে এ অপেক্ষার পাল্লা ভারী হচ্ছে।

চ্যানেল এস নিউজের জন্য ছুটে বেড়াতে হয় ব্রিটেনের এক প্রান্ত থেকে প্রান্তে। আর লন্ডনের আনাচে কানাচে। যেখানে নিউজ হোক সুখে, আনন্দের বা দু:ক্ষ বা বেদনা এমনকি শোকের।সমাজের অসংগতি তো সবার আগে হাজির চ্যানেল এস নিউজ টিম।বিশেষ গুরুত্ব পূর্ন নিউজের জন্য সমগ্র ব্রিটেন ঘুরে বেড়াতে হয়। যদি ও ব্রিটেনের প্রতিটি শহরেই রয়েছে চ্যানেল এস এর নির্ধারিত বা নিয়োগ প্রাপ্ত প্রতিনিধি ।

তারপরও বিশেষ গুরুত্ব পূর্ন নিউজে বা স্পেশাল ইন্টারভিউর জন্য লন্ডন থেকে আমাদের যেতে হয় ভিন্ন শহর কিম্বা ভিন্ন দেশে। বিশেষ করে আমাকে যেতেই হয় সাথে থাকেন চ্যানেল এস সেই দিন রিপোর্টার হিসেবে যার দায়িত্ব থাকে। এর মধ্যে হেড অফ নিউজ কামাল মেহেদী, চীফ রিপোর্টার মোহাম্মদ জুবায়ের, কারেন্ট এফিয়ার এডিটর তানভির আহমেদ এবং সিনিয়র রিপোর্টার ইব্রাহিম খলিল ভাই।

ক্যামব্রিজ সেন্টাল মসজিদ উদ্ভোধনের দিন যাওয়ার সব পরিকল্পনা থাকলেও শেষ মূহুর্তে লন্ডনে আরো একটি গুরুত্ব পূর্ন নিউজ থাকায় যাওয়া হয় নাই তবে চ্যানেল এস এর ক্যামব্রিজ প্রতিনিধি মামুনুর রশীদ নিউজ টি করেছেন। গত সামারে আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো কোন কারনে হয়ে উঠে নাই।

মংগলবার ২রা ফেব্রুয়ারি একটি স্পেশাল নিউজের জন্য ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে আমাদের যেতে হলো। ক্যামব্রিজ যাবো আর ক্যামব্রিজ মসজিদ দেখা হবে না তা কি হয়?

ছিলাম আমি এবং জুবায়ের ভাই। ইচ্ছা মসজিদ দেখবো ।আগে কাজ, পরে সখ। ঠিক তাই। আমাদের যেতে যেতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো । অনেকটা অন্ধ্যকারে নিউজের ইন্টারভিউ শেষ করলাম। দিনের বেলা হলে আরো চমৎকার হতো । করোনাভাইরস মহামারির কারনে এখন কারো বাড়িতে যাওয়া আইনগত ভাবেই নিষিদ্ধ । তাই যার ইন্টারভিউ করা হবে কার বাসায় না গিয়ে ইউনিভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে ইন্টারভিউ শেষ করে সোজা ক্যামব্রিজ সেন্টাল মসজিদের উদ্দ্যোশ্যে রওয়ানা হলাম।

কভিড-১৯ কারনে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করা হয় না তবে মসজিদ খোলা থাকে কেউ গেলে প্রথম রিছিপশন রুমে দুই মিটার পর পর নির্দিষ্ট স্থানে নিজের পারসোনাল জায়নামাজে নামাজ আদায় করতে হয়। কেউ যদি নিজে জায়নামাজ না নেন তবে মসজিদের পক্ষ থেকে জায়নামাজ দেওয়া হয়।প্রবেশের সাথে সাথে ম্যাশিনে তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং হ্যান্ড সেনিটাইজার তারপর ভিতরে প্রবেশ করা। মাগরিবের নামাজ একটি পরেই আদায় করলাম।

আমাদের সুবিধা হলো নিউজের যার ইন্টারভিউ করতে গিয়েছি তার আত্বীয় এই মসজিদ কমিটির সদস্য এবং ট্রাস্টি । ইউনিভার্সিটি থেকে বেশী দূরে নয় মসজিদটি তবুও তার গাড়ী ফলো করে চলে গেলাম। নতুন জায়গা ফলো করতেই হবে।কিছুটা দূর থেকে ময়নাভিরাম মসজিদ বাহির দেখেই মন জুড়িয়ে গেল।

মসজিদের আন্ডার গ্রাউন্ডে বিশাল কার পার্কিং । গাড়ী পার্কিং করে হেঁটে হেঁটে উপরে উঠছি আর মসজিদটির বিভিন্ন কার্যক্রম দেখছি। মসজিদের সামনে দিয়ে শহরের অন্যতম বড় এবং ব্যাস্ত রাস্তা । ঠিক সামনেই বাস স্টপ যাতে মসজিদের মুসুল্লিরা সুন্দর ভাবে যাতায়াত করতে পারেন।

মসজিদের সামনের রাস্তা থেকে মসজিদের মেইন প্রেয়ার রুম পর্যন্ত বেশ কিছু পরিকল্পনা যা নিজ চোখে না দেখলে বুঝিয়ে বলা মুসকিল। রাস্তা থেকে মসজিদের ওয়ালের আগে বেশ কিছু জায়গা ফাঁকা সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ পরিকল্পিত ভাবে লাগানো। ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ পর্যটকরা প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ফুলের সন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রথমে থমকে দাঁড়ায়। এরপর মসজিদের সৌন্দর্য দেখে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি চায় । অনুমতি পেলে মসজিদ ঘুরে দেখে ।

বিশ্বের একমাত্র ইকো মসজিদ এর রয়েছে আলাদা সব বৈশিস্ট । এই মসজিদ আর্কিটেক্ট হলেন ব্রিটেনের স্বনামধন্য এবং সুপরিচিত আর্কিটেক্ট -মার্স বারফিল্ড । তিনি ব্রিটেনের আধুনিক শ্যারন টাওয়ার সহ বহু স্থাপনার আর্কিটেক্ট। তার হাতের ডিজাইন অবশ্যই ভালো হবে। মসজিদের সামনে এত বিশাল জায়গা ফাঁকা রেখে মসজিদ করাতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ কিছুটা মনোক্ষন্ন হলেও এখনই তার ফল উপভোগ করতে শুরু করেছেন।

মসজিদটি প্রধানত টিম্বার বা কাঠ , ব্রিক এবং টাইল্স দিয়ে নির্মিত। তবে এর প্রতিটি মেটারিয়ালের রয়েছে ভিন্নতা। যা অন্য কোন মসজিদে নেই।

মসজিদটি প্রধানত নামাজের জন্য হলেও এর রয়েছে বিভিন্ন রকম কার্যক্রম। যা শুধু ইসলামী শিক্ষাই নয় নন মুসলিম দের ইসলাম সম্পর্কে সুন্দর ধারনা ও বন্ধুত্বের সৃস্টি করে।

২০১৯ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুস্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। উদ্বোধনী অনুস্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তুর্কির প্রেসিডেন্ট তায়েব এরদোগান । মসজিদের প্রেট্রন ইউসুফ ইসলাম বলেন, তাদের এতদিনের আশা শ্রম স্বার্থক হয়েছে। মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এবং ডোনারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান,।প্রায় ৪০০ আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে বিশ্বের প্রথম ইকো মসজিদটি উদ্ধোধন করা হয়।

মসজিদটি ১০০০ মুসুল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে বর্তমানে করোনাভাইরস মহামারির সরকারি বাঁধানিষেধ বা নিয়মের কারনে মসজিদ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও জামাতে নামাজ আদায় হয় না কিন্তু স্বল্প পরিসরে মৃত্যু ব্যাক্তির জানাজা সহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আমরা দুই জন ঘুড়ে ঘুড় মসজিদটি যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। বাহিরের সন্দর্যের চেয়ে ভিতরের সন্দর্য আরো মনোমুগ্ধকর। শব্দ বিহীন এক মন্থর পরিবেশ। নিজ্বস্ব সোলার বিদুৎ এছাড়া ভিতরের ডিজাই বা ডেকোরেশন সত্যই ভিন্ন পৃথিবীর অন্য কোন মসজিদে এই সন্দর্য বিদ্যমান নেই। এক কথায় অপূর্ব।

আপনার সময় এবং সুযোগ হলে ঘুরে আসুন ক্যামব্রিজ ইকো মসজিদ।


Similar Posts