করোনা যুদ্ধে জয়ী দিলোয়ার হোসেন : ১৭০ দিন পর হাসপাতাল ছাড়লেন

dilwar

করোনাভাইরাস এক মহামারির নাম। বিশ্ব জুড়ে এক মহা আতংক। এই আতংক থেকে জীবন বাঁচার সংগ্রামে আমরা সবাই মহা ব্যাস্ত। এরই মধ্য এই মহামারিতে সারা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩০ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ। সুস্থ্য হয়েছেন ২০ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ। অনেকে সুস্থ্য হলেও এই মহামারিতে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষের। আর যারা বেঁচে আছেন তারা হয়তো সুস্থ্য স্বাভাবিকভাবে আগের অবস্থানে আসতে পারবেন কিনা সেটা শুধু সেই ভক্তভোগীই জানেন।

ব্রিটেনে প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত করোনাভাইরস আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার এবং মৃত্যু বরণ করেছেন ৪১ হাজার ৭৩২ জন। যারা করোনাভাইরাস মহামারি থেকে সুস্থ্য হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন ভাগ্যবান ব্যাক্তি হলেন দিলোয়ার হোসেন। মৃত্যুর একেবার কাছে থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। দি রয়েল লন্ডন হাসপাতালের সবচেয়ে বেশীদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এজন্য তার ছাড়পত্র বা বিদায়টা ছিলো আবেগ আপ্লুত, আনুষ্ঠানিকতা যা শুধু দিলোয়ার হোসেনের জন্যই হয়েছে। প্রতিদিন কত রোগী আসে আর কত যায় কে কার খবর রাখে? তবে করোনা যুদ্ধে বিজয়ী দিলোয়ার হয়ে রইলেন ইতিহাসের স্বাক্ষী।

এই করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে যারা বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ৫৯ বয়সী দিলোয়ার হোসেন। ইস্ট লন্ডনের স্টেপনী গ্রীনে স্ত্রী, ৩ কন্যা ও ১ পুত্র নিয়ে সুখের সংসার তার। বাংলাদেশের সিলেটে তার আদিনিবাস। সুস্থ্য স্বাভাবিক এক জন কর্মক্ষম মানুষ কিন্তু হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৭০ দিন হাসপাতালে ছিলেন তার মধ্যে ১১৫ দিনই অজ্ঞান অবস্থায় নিবির পর্যবেক্ষন ইন্টেনসিভ কেয়ারে ছিলেন দি রয়েল লন্ডন হাসপাতালে।

মিনিক্যাব টেক্সী ড্রাইভার দিলোয়ার হোসেন করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতেই এপ্রিল মাসে প্রচন্ড বমি এবং শ্বাস কস্ট নিয়ে দি রয়েল লন্ডন হাসপাতালে ভর্তি হন।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি এ বছরের প্রথম দিকে করোনায় আক্রান্তের কিছু দিন পূর্বে উমরাহ করে এসেছি। এছাড়া আমি একজন মিনিক্যাব টেক্সী ড্রাইভার। লক ডাউনে খুব বেশী কাজ করি নাই। তবে কিভাবে আক্রান্ত হলাম বলতে পারছিনা। তারপরও এভাবে আক্রান্ত হবো চিন্তা করি নাই। বাসায় বেশ কয়েকবার বমি হয়েছে জ্বর অনুভব করছি। বমিই আমাকে বেশী অস্থির করে ছিলো । যখন কস্ট আর সহ্য হচ্ছিলো না তখন আমাকে দি রয়েল লন্ডন হাসপাতালে নিয়ে আসে সেই থেকে প্রায় ৫ মাস ২০ দিন আছি এই হাসপাতালে”।

১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার অনেকটা সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেন ৫৯ বয়সী করোনা যুদ্ধে জয়ী দিলোয়ার হোসেন।
তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। এ হাসির জন্য তিনি এনএইচএস এবং দি রয়েল লন্ডন হাসপাতালের ডাক্তার , নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি ধন্যবাদ জানান পরিবার ও আত্বীয় স্বজন সহ দেশ বিদেশে সবার কাছে।

তিনি বলেন,”আমার বেঁচে থাকা হবে কিনা। আবার যে সুস্থ্য হবো এটা কখনো বিশ্বাস করতে পারি নাই। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এবং হাসপাতালের সবার আন্তরিক সেবায় আমি আমার জীবন ফিরে পেয়েছি,”। তবে পূর্ন সুস্থ্য কখন হবো তা আল্লাহ জানেন। এখনো ভালোভাবে শক্ত কিছু খেতে পারিনা। শুধু তরল খাদ্য খেতে হয়। তবে ডাক্তার বলেছেন, “ ধীরে ধীরে সেরে উঠবে। সময় লাগবে সুস্থ্য হতে। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে গলার ব্যাথা। মুখ দিয়ে খেতে পারতাম না বলে গলার খাদ্যনালি কেঁটে পাইপ দিয়ে তরল খাবার দিয়েছে। এখনো সেই ভাবেই খেয়ে যাচ্ছি,”।

মৃত্যুর একেবারে কাছাকাছি থেকে ফিরে আসা দিলোয়ার হোসেন। হাসপাতালের ডাক্তার নার্সদের প্রতি যেমন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তেমনি ডাক্তার নার্সরাও দিলেয়ারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস মহামারির সময় সবচেয়ে বেশী সময় ধরে হাসপাতালে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস ২০ দিন হাসপাতালে থাকতে থাকতে হাসপাতালের সবাই তার বন্ধু বা প্রিয়জন হয়েছিলেন।

দীর্ঘ দিন পর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা সুস্থ্য হয়ে শুক্রবার দিলোয়ার হোসেনের ছাড়পত্র বা বিদায়ী সংবর্ধনা ছিলো এক ঐতিহাসিক মূহুর্ত। বিদায়ের পূর্ব মূহুর্তে চ্যানেল এস এর এক একান্ত স্বাক্ষাৎকার এবং তার বিদায়ী অনুস্ঠানটি ছিলো ভিন্ন।

পুশিং চেয়ার থেকে হাতের লাঠি ছাড়াই একা উঠে দাঁড়িয়ে কড়িডোর দিয়ে হেটে হেটে গেইট পর্যন্ত যান। এসময় হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স , কর্মকর্তা কর্মচারী সহ সবই আনন্দ উল্লাসে হাততালির মাধ্যমে দিলোয়ার হোসেনকে বিদায় জানায়।

দিলোয়ার হোসেনের মেয়ে এ সময়ে উপস্থিত হয়ে আবেগ আপ্লুতো হয়ে পরেন। তিনি বলেন, “ বাবাকে সুস্থ্য ভাবে বাসায় নিতে পারছি এটাই আমাদের সবচেয়ে আনন্দ,”।

হাসপাতালের ডাক্তার বলেন, “দিলোয়ার আমাদের কাছে এক মিরাকল। আমরা আমাদের মত করে সেবা করেছি। এ পর্যন্ত কত জনকেইতো সেবা দিয়েছি কিন্তু অনেককেই বাঁচাতে পারিনি। দিলোয়ার কে পেরেছি এটাই আমাদের আনন্দ,”। তিনি আরো বলেন, কভিড এখনো শেষ হয় নাই। এ রোগ নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়,”।

সেই সাথে সরকারি নিয়মাবলি বা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখুন, নিয়মিত হাত পরিস্কার করুন, মুখে মাক্স ব্যাবহার করুন। নিজে সুস্থ্য থাকুন অন্যকে সুস্থ্য থাকতে সহযোগিতা করুন।

ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এথনিক বা প্রবাসীরাই বেশী মারা গেছেন এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীরা সবার শীর্ষে।


Similar Posts