করোনা এবং আমার যাপিত জীবন। (পর্ব-৪)

Corona Diary

করোনা আমাদের জীবনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে তবে এর কতটুকু আমরা গ্রহন করবো সেটা আমাদের ব্যাপার। তবে এ থেকে ভালো কিছু শিক্ষা যদি গ্রহন করতে পারি তবে সেটা হবে আমাদের জন্য মংগল জনক আর যদি লক ডাউনের সাথে সাথে ফিরে যাই সেই আগের জায়গায় তবে সেটা হবে দু:ক্ষ জনক।
একজন সুনামধন্য ডাক্তার মৃত্যু কে একেবার কাছে থেকে দেখেছেন। বাঁচা সম্ভবনা ক্ষিনো হওয়াতে মৃত্যুর আগমুহুর্তে জীবনের শেষ ইচ্ছা পূর্ন করে যেতে চেয়েছেন। যখন চিন্তা করেছেন আর হয়তো জীবন ফিরে পাবো না তখন ডাক্তার এ আজিজ তার স্থাবর এবং অস্থাবর সকল সম্পত্তি ওয়ারিসদের মধ্যে সুস্ঠ ভাবে বন্টনের ব্যাবস্থা করেন।যেহেতু লক ডাউন এবং তিনি হাসপাতালে না থেকে বাসাতেই মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ছেন। তাই ফোনের মাধ্যমে উকিল কে সব বলে দেন। কিভাবে জমি জমা বন্টন হবে। একজন মানুষ কখন এ সিদ্ধান্তে পৌছান তখন কার মনের অবস্থা কি সেটা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। তবে তিনি এবং কার পরিবার আত্বীয় স্বজন সবাই নিশিত ছিলেন তিনি হয়তো আর বাচঁবেন না । কেননা অনেক ডাক্তার ই এ মহান পেশায় এই করোনাতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন।
মৃত্যু কাছ থেকে ফিরে আসা তাদেরই একজন
ডাক্তার এ আজিজ।থাকেন লন্ডনের রেড ব্রিজের আলিশান নিজের বাড়ীতে স্বপরিবারে বসবাস করেন।রমফোর্ড এলাকার ক্লিনিকে দীর্ঘ দিন যাবত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। হাতে যার বেশ যশ। প্যাশেন্ট দের সাথে খুবই আন্তরিক। এক নামে সবাই ডাক্তার এ আজিজ কে চিনেন।
এই করোনাভাইরসের সময়ও এক মূহুর্তের জন্যও দায়িত্ব থেকে পিছু পা হননি। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন। সেবা দিতে দিতে তিনি নিজেই আক্রান্ত হয়েছেন,করোনাভাইরসে। শুধু নিজেই আক্রান্ত হননি আক্রান্ত করছেন পুরো পরিবারকে। এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সুন্দর ছোট্ট সংসার । ছেলে আইটি ইন্জিনিয়র আর মেয়ে ও এম বি বি এস ডাক্তার । শুধু মেয়ে নয় মেয়ের স্বামী ও ডাক্তার। আছে ছোট্ট একটি নাতনী।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় পরে অবস্থা খারাপ হওয়াতে হাসপাতালে । কেউ কাউকে দেখতে পারছেন না। এ যে কি কস্ট যখন তার স্ত্রী বললেন। সত্যি বেদনা দায়ক। এ রোগী একজন আক্রান্ত হলে অন্যরা আক্রান্ত হয়। তবে সে বিষয়ে কারো দু:ক্ষ নেই। দায়িত্ব পালনের জন্য হয়েছে। মানব সেবা করতে যেয়ে হয়েছে। এটা তাদের পুরো পরিবারের জন্য গর্বের। তবে ছোট্ট নাতনীটির জন্য বেশী বেশী চিন্তিত ছিলেন। বাবা আক্রান্ত হওয়াতে মেয়ে তার শশুড় বাড়ীতেই ছিলেন কিন্তু সেখানেও শেষ রক্ষা হয়নাই। তারাও আক্রান্ত হন।
তবে দু:ক্ষের বিষয় হলো যখন বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন , তখন মেয়ে এবং মেয়ের জামাই বাসায় না প্রবেশ করে বাড়ি দরজার সামনে খাবার রেখে চলে যেতো এবং মেয়ে এবং মেয়ের জামাই করোনায় আক্রান্ত সেই সময় ও ডাক্তার খাবার নিয়ে গেটের বাইরে রেখে দূর থেকে হাত নেড়ে বিদায় নিতে হয় । ছোট্ট নাতনীটিকেও আদর করতে পারেনা। এটা যে কতবড় কস্ট। সেই কস্ট কে সহ্য করা শিক্ষিয়ে দিলো করোনাভাইরস ।
ডাক্তার এ আজিজ রমফোর্ড কুইন্স হাসপাতালের পাশে আউট অফ আওয়ার্স ক্লিনিকে দীর্ঘ দি ধরে কাজ করছেন। তিনি বলেন।”গত ২৩/২৪ মার্চ ২০২০ তে রোগীদের প্রচন্ড ভীর ছিলো। দুদিনে প্রায় ৪০/৫০ জন রোগী দেখেছি কিন্তু কোন পি পি আই ছিলো না। তিনি বার বার বললেন “পি পি আই থাকলে হয়তো করোনাভাইরসে আক্রান্ত হতাম না”।রোগীদের থেকেই আমি রোগে আক্রান্ত হয়ে বাসায় ফিরি।২৫ থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত প্রচন্ড জ্বর, কাঁশী,শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা । ১লা এপ্রিল থেকে অবস্থা আরো অবনতির দিকে বাধ্য হয়ে টেলিফোনে করে ৫ই এপ্রিল লসফোর্ডের হাসপাতালে যায়। টেস্ট করে কিন্তু তারে ইমার্জেন্ন্সী না দিয়ে সাধারন ওয়ার্ড দিলে তিনি হাসপাতালে না থেকে বাসায় চলে আসেন। পরের দিন ৬ই এপ্রিল অবস্থা বেশী খারাপ হওয়াতে ০২ আরেনা তে নিয় যায়। সেখানে ও অনেক পরিক্ষা করা হয়। সেখানেও সাধারন ওয়ার্ড দিলে বাসায় চলে আসেন। অবস্থা আরো খারাপ পরের দিন এম্বুলেন্স করে কিং জর্জ হাসপাতালে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। কিন্তু বিশেষ সুবিধা না পেয়ে বাসায় চলে আসে অবস্থা যতই খারাপ হোক একজন ডাক্তার হিসাবেও কোনরকম সুবিধা না পেয়ে আবার ও বাসায় চলে আসেন।
বাসায় প্যাসিটামল গরম পানি সহ অন্যান্য ভেজষ চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠেন ডাক্তার এ আজিজ। সবাই বাসাতেই আইশোলেশনে ছিলেন। এখন ও সবাই বাসাতেই আছেন। স্ত্রী নাসরিন আজিজ ডলি আরো বলেন “আমরা দুইজন আলাদা আলাদা রুমে থাকলে ও সব সময় দূরুত্ব বজায় রেখেই ওর সব দেখ ভাল করেছি”। আমাদের কখনোই মনে হয় নাই আমরা বাঁচবো”।
সবাই উচ্চ শিক্ষিত । তাই আইশোলেশনে তারা নিজেরাই বুঝেন। বুঝেন সামাজিক দূরত্ব ।সে বললেন দুই জন দুই রুমে থাকলেও “আমি বার বার তার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম, দেখতাম শ্বাস প্রশ্বাস ঠিকক মত নিচ্ছে কিনা।” খাবার তৈরী করে দিতাম আর দূর থেকে পর্যবেক্ষন করতাম। আর আমিও যখন করোনায় আক্রান্ত হই তখন ছিল আমাদের এক কঠিন বাস্তবতা। আল্লাহ আমাদের সেই বাস্তবতার সমাধান দিয়েছেন। আল্লার কাছে অনেক শুকরিয়া”।
বর্তমানে সবাই সুস্থ্য হয়ে উঠছেন। একটি কথাই বারবার বলেছেন। “আমরা নতুন জীবন পেয়েছি। সকলের নিকট দোওয়া চাই”।
ডাক্তার এ আজিজ ১৯৮৪ সালে লন্ডনে উচ্চ শিক্ষার জন্য আসেন।২০০৩ সাল থেকে হাসপাতালে জি পি হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সেবা মূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন ইউকের ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করছেন।
ডাক্তার এ আজিজ সুস্থ্য হয়েই ৭ই মে আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। সাবাস ডাক্তার এ আজিজ। আপনাকে হার না মানা একজন আপনি।নিজের জীবনের চেয়ে রোগীদের সেবা দিতে সদা প্রস্তুত।
মহান ডাক্তারী পেশাকে করেছেন আরো উজ্জ্বল।


Similar Posts