করোনার সংগে যুদ্ধ করে,
মৃত্যু নিশ্চিত হয়েও কোমা থেকে
ফিরে এলেন,সিলেটের খালেদ আহম্মেদ।

মো: রেজাউল করিম মৃধা ।
করোনা মহামারি থেকে দীর্ঘ তিন মাস কোমা থেকে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে মৃত্যুর কাছ থেকে নতুন জীবন ফিরে পেলেন।
গত ১৬ই মার্চ ২০২০ করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুইন এলিজাবেথ হাসপাতাল ভর্তি হন। এর পর আর কোন খবরই তিনি জানেন না । তার স্ত্রী নাসিমা আহমেদ শুধু মাত্র ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু অবস্থা যখন আরো খারাপ তখন স্বামীর সাথে শেষ দেখার জন্য হাসপাতাল থেকে ফোন করে শুধু মাত্র স্ত্রীকে একদিন শুধু মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য দেখার সুযোগ দিয়েছিলেন। সেই তাদের সাথে শেষ দেখা। অনেক স্ত্রী ভয় পেয়ে করোনা রুগী দেখতে না গেলেও নাসিমা তার ব্যাতিক্রম। স্বামী বিপদের মূহুর্তে স্বামীর পাশে থেকেছেন।
কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে রোগীর অবস্থা বেশী খারাপ হচ্ছে দিনের পর দিন। এক দিকে করোনার শ্বাস কস্টের অসহ্য যন্ত্রনায়, হাঁড় কাঁপানো জ্বরের কস্ট সহ্য করতে না পেরে খালেদ আহমেদ ডাক্তার কে নিজেই বলেছিলেন।”আমাকে ইন্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলেন , এত কস্ট আর সহ্য করতে পারছি না”। স্বাক্ষাত কারের সময় কথা গুলি বলার সময় চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পরছিলো। একে বুঝা যায় করোনা আক্রান্ত রোগীর কত কস্ট।
কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে ১০ দিনেও যখন খালেদ আহমেদের কোন উন্নতি হচ্ছেনা তখন ডাক্তার রা তাকে হাসপাতাল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবারকে শুধু মাত্র ফোনে জানিয়ে দিলো তাকে নেওয়া হলো টুটিন কিং জর্জ হাসপাতাল। কিন্তু কোন দেখা নেই পরিবার , পরিজন , আত্বীয় স্বজন কেই না। মাঝে মধ্যে হাসপাতাল থেকে স্ত্রীকে ফোনে জানানো হয় রোগীর আবডেড কিন্তু পরিবার এতে সন্তুষ্ট নয়।
কিম জর্জ হাসপাতালে শ্বাস কস্ট এতোটাই বেড়ে যায় তার পক্ষে দম নেওয়া সম্ভব হয় না তখন শ্বাস নালি অপারেশন করে রাখা হয় আই সি ইউ নিবির পর্যোবেক্ষনে।তার আর জ্ঞান ফিরে আসেনা।হাসপাতাল থেকে অনেকটা মৃত্যু ঘোষনার মত পরিবারকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। তখন পরিবার এবং আত্বীয় স্বজন বুঝে নিয়েছে তিনি আর ফিরে আসবে না। পরিবারের মধ্যে কান্নার রোল পরে যায়। সেই থেকে দীর্ঘ দিন হাসপাতালের কোমাতে পরে আছে খালেদ আহমেদ।
পরিবার ও আত্বীয় সবার ধারনা খালেদ আহমেদ আর নেই।আর কোন দিনই ফিরে আসবে না। খাওয়া দেওয়াতো দূরের কথা ভেন্টিলেটর ছাড়া দম নিতে পারে না । স্যালাইন ও যন্ত্র পাতির উপর কোন মতে আছে।
কিন্তু মেয়ে খুশি । মেয়ের নাম রেখেছেন খুশি। সব সময় হাসি খুশি থাকলেও সেদিন ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখে কান্না এবং উচ্চ স্বরে চিৎকার করতে থাকেন। আদরের মেয়ে খুশির চিৎকারে জ্ঞান ফিরে আসে খালেদ আহমেদের। হাসপাতাল অনেক অনুরোধের পর ভিডিও কলের অনুমতি দেয়। খুসির বুক ফাঁটা চিৎকারে অচেতন থেকে চেতন হন । ভিডিও ফোন তার কানের কাছে নিয়ে খুশির চিৎকারে বাবা বাবা ডাক শুনে প্রথমে মিট মিট করে চোখ খুলে। ডাক্তার , নার্সরা আশার আলো খুঁজে পায়। পরিবারের সবাই এ দৃশ্য ভিডিওর মাধ্যমে দেখার সেই অনুভুতি সত্যি বর্ননা অতিত।
ঐ পাশ থেকে ডাক্তাররা বলছেন। চিৎকার করুন আরো জোরে । জোরে জোরে চিৎকারের ফলে তার জ্ঞান ফিরতে শুরু করে।এক দিকে ডাক্তার, নার্স অন্য দিকে পরিবারের চিৎকার এভাবেই ফিরে পায় তার জ্ঞান। তবে এখনও কার পূর্ন স্মৃতি ফিরে আসে নাই।তবে
আস্তে আস্তে স্মৃতি ফিরে আসতে শুরু করেছে।
আলহামদুলিল্লাহ
গত তিন মাসের মধ্যে দুই মাস কোমাতে ছিলেন।ধীর্ধ অপেক্ষা !অবশেষে খালেদের ভেন্টিলেটর খুলে ফেলা হলো ।
সে সবার সাথে কথা বলেছে ডাক্তার জানিয়েছে দুই একদিন পর থাকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা
হয় খালেদ আহমেদ করোনা ভাইরাসে মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হয়ে
মৃত্যু পথও যাত্রী ছিলো ! মহান আল্লাহর দয়ায় এবং দেশে ও বিদেশের
সবার দোয়াতে ফিরে পেলো নতুন জীবন।
দীর্ঘ দিন হাসপাতালে থাকার পর অনেকটা সুস্থ্য হওয়ার পর গত ১৮ই মে ২০২০ হাসপাতাল থেকে বাসায় দিয়ে যায়।
তিন ছেলে ১ মেয়ে ও স্ত্রী নাসিমা আহমেদ দেশের বাডী,
সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার, খাদিম নগর হাউজিং স্টেটে। লন্ডনের পাশে ব্রেক্সলি টাউনে স্বপরিবার বসবাস করছেন।