ইউরো কাপ ২০২০,চ্যাম্পিয়ন ইতালী।
৫৩ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ইউরো শিরোপা বিজয়।

মো: রেজাউল করিম মৃধা।
খেলায় জয় পরাজয় থাকবে। সেই জয় পরাজয় কখনো কখনো মেনে নিতে কস্ট হয়। নিজেদের মাঠে যদি হয় শেষ পরাজয় সেটা আরো কস্টের। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর জিতে যাওয়া শিরোপা শেষ পর্যন্ত হাত ছাড় এ কস্ট নেমে নিতে পারাটা সত্যিই কস্টের এবং বেদনার।স্বাগতিক দর্শকদের শেষে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতে হলো।
রোববার রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ৬০ হাজার দর্শকের সামনে ইউরোর ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইউরোপিয়ান ফুটবলের দুই পরাশক্তি। রোমাঞ্চকর এই ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও যোগ করা সময়ের খেলা ১-১ গোলে সমতা বিরাজ করায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও সমতা থেকে যায়। ফলে খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয় টাইব্রেকারে।
যেখানে ৩-২ গোলে জিতে শিরোপা জিতে নেয় ইতালি। পেনাল্টি শুটআউটে ইতালির নায়ক গোলরক্ষক দোনারুমা। ২টি শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পেনাল্টি শুট-আউটে প্রথমে গোল করেন ইতালির বেরারদি। এরপর গোল করেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন। কিন্তু বেলোত্তির শট বাঁচিয়ে দেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিকফোর্ড।
এরপর গোল করে ইংল্যান্ডের হ্যারি ম্যাগুইর। ইতালির বোনুচ্চিও পান জালের দেখা। কিন্তু ইংল্যান্ডের রাশফোর্ডের শট পোস্টে প্রতিহত হয়। এরপর গোল করেন ইতালির বার্নারদেসচি। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাঞ্চোর শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান দোনারুমা। অন্যদিকে ইতালির জর্জিনহোর শটও ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। এরপর সাকার শট ঠেকিয়ে ইতালির জয় নিশ্চিত করেন দোনারুমা।
ইতালি এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইউরোর শিরোপা ঘরে তুললো। এর আগে ১৯৬৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
অন্যদিকে ইংল্যান্ড এবারই প্রথম ইউরোপ সেরার লড়াইয়ের ফাইনালে উঠেছে। আর সেজন্য খেলা শুরুর আগেই ওয়েম্বলিকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়ে তুমুল উত্তেজনা।
টিকিট ছাড়াই মাঠে ঢুকে পড়েন অসংখ্য ইংলিশ সমর্থক। এমনকি স্টেডিয়ামের বাইরে ইংল্যান্ড সমর্থকদের তাণ্ডব চালাতে এবং বিয়ারের বোতল ছুঁড়ে আস্ফালন করতেও দেখা গেছে। ইংল্যান্ড সমর্থকদের উন্মত্ততায় লন্ডনের রাস্তা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক সিগন্যালের উপর উঠেও তাণ্ডব চালায় অনেক মানুষ। এর আগে ডেনমার্ক ম্যাচের পরেও ইংল্যান্ড সমর্থকদের এমন উন্মত্ত ছবি দেখা গিয়েছিল। এমনকি ড্যানিশ সমর্থকদের মারধোর করার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াইয়ের আগে ইতালির জায়গা ছিল না ফেবারিট তালিকায়। ফুটবল বিশ্লেষকদের সব হিসেব উল্টে দিয়ে ইউরো ২০২০ এর চ্যাম্পিয়ন হলো ইতালি। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ১-১ সমতার পর টাইব্রেবকারে ইংল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শেষ হাসি হাসলো চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটি।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরো কাপের টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শুরুতেই এগিয়ে যায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ম্যাচের মাত্র ২ মিনি গোল করে ইউরোর রেকর্ডবুকে নাম লেখান ইংলিশ ডিফেন্ডার লিউক শ।
৬৭ম মিনিটে লিওনার্দো বোনুচ্চির গোলে সমতায় ফেরে ইতালি। অতিরিক্ত সময়েও ফল না আসায় ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় পেনাল্টি শ্যূটআউটে।
আজ্জুরি শিবিরের হয়ে পেনাল্টি মিস করেন আন্দ্রেয়া বেলোত্তি ও জর্গিনহো। কিন্তু ইংলিশদের হয়ে পেনাল্টি শ্যূটআউটে ব্যর্থ হন মার্কাশ রাশফোর্ড, জ্যাডন সানচো ও বুকায়ো সাকা।
৫৩ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর শিরোপা নিজেদের করে নিল ইতালি। হাজার হাজার ইংল্যান্ড সমর্থকের চিৎকার আর গর্জনে শুরু থেকেই ইতালিয়ানদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। কিন্তু স্বাগতিক দর্শকদের শেষে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতে হলো।
১৯৬৮ সালের পর থেকে কোনো ইউরো কাপে জয়ী হতে পারেনি ইতালি। কিন্তু ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে অন্তত ৩৩টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে ইতালী আর এখন পর্যন্ত কোনো বড় প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড তাদের হারাতে পারেনি।
বড় টুর্নামেন্টের ১০ ফাইনালে খেলছে তারা। এর মধ্যে ছয়টি বিশ্বকাপ ও চারটি ইউরোর চূড়ান্ত পর্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে দলটির। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে তাদের চেয়ে কেবল এগিয়ে আছে জার্মানি, ১৪টি ফাইনাল খেলেছে দলটি।
বিপরীতে ইউরোর ফাইনালে এই প্রথম দেখা গেল ইংল্যান্ডকে। ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পরে বড় কোনো টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত ম্যাচে তাদের দেখা যায়নি। অর্থাৎ ৫৫ বছর পর বিশ্বকাপ কিংবা ইউরোর মতো বড় প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড।