আমার মেঝ বোনের দেওয়া সেরা উপহার।
মোঃ রেজাউল করিম মৃধা
উপহার সব সময়ই আনন্দের।যে কোন উপহারই মানুষকে আরো কাছে টেনে নেয়। ভাই বোনের দেওয়া উপহার যেন সব চেয়ে বেশী আনন্দের। হোক সেটা অতি সামান্য কিম্বা মহা মূল্যবান। উপহার দেওয়া নেওয়ার মাঝে একে অপরের সাথে সম্পর্কটা আরো গভীর থেকে গভীর হয়।
ভাই বোনের ভালোবাসা দাম কোন কিছুর বিনিময় হয় না কিন্তু কিছু কিছু সময়ে সেই সামান্য উপহারটি স্মৃতির পাতায় গেঁথে থাকে। যার কোন তুলনা হয় না। সেই ভালোলাগা কিম্বা ভালোবাসার মূহুর্ত গুলি।
এবার লন্ডন থেকে দেশে এসে উপহার দেওয়ার চেয়ে পেয়েছি অনেক বেশী। প্রবাস থেকে চকলেট, সাবান, সেম্পু কিম্বা ক্রিম, শিশুদের পোষাক উপহার হিসেবে প্রাধান্য পায়। ভাই বোন বা আত্বীয় স্বজনের জন্য একটি দুটি করে হিসাব করে কিনে আন্তে গেলেও লাগেজের ওজন বেড়ে যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত চার্চ দিয়ে আন্তে হয়। তারপরও আমার মতো সবাই চান প্রিয় মানুষটি বা সেই পরিবারের ছোট্ট শিশুটির হাতে কম করে হলেও একটি চকলেটের প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিতে।
এবার যেখানেই বেড়াতে গিয়েছি। অর্থাৎ দেখা করতে গিয়েছি যা সামান্য নিয়েছি। অথচ আসার সময় উপহার দিয়ে দিয়েছেন অনেক বেশী।
এরই মধ্যে আমার বড মামা শশুড় সাবেক অধ্যাপক আব্দুল হাই মজ্নু আমরা সবাই মজনু মামা বলেই ডাকি। তিনি উমরাহ করে এসেছেন কয়েক মাস পূর্বে আর আমার জন্য নিয়ে এসেছেন আতর।হাতে তুলে দিলেন মক্কা থেকে আনা একটি আতরের বোতল। আমার ভাগ্নী জামাই বিশিস্ট শিল্পপতি ও ব্যাবসায়ী জাভেদুর রহমান তুলে দিলেন আমার স্ত্রীর জন্য কয়েক সেট কাপড়। ফুফা শশুর হাজি রুমাল উপহার দিয়েছেন।
বড় ভাইয়ের কাছে এখনো সেই ছোটই রয়ে গেছি। মিয়া ভাই (বড় ভাইকে মিয়া ভাই বলে ডাকি) মিয়া আর্মীর অফিসার ছিলেন। তিনি যখন ঈদে কিম্বা ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে যেতেন আমাকে সাথে করে গোসল করিয়ে দিতেন, বাজারে নিয়ে যেতেন। সাথে বসিয়ে খাওয়াতেন। মা মিয়া ভাইকে মাছ তুলে দিতেন। মিয়া ভাই আমার প্লেটে তুলে দিতেন এজন্য মিয়া ভাইয়ের সাথে বসে খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো অন্যরকম আনন্দ।মিয়া ভাই সহ বাড়ীর সবাই আমাকে অন্যরকম আদর করতেন এখনো করেন।এখন মা নেই তবে সেই স্মৃতি মনে পরে। এখন ও দেশে গেলে মিয়া কাছে বসিয়ে খাওয়ান। ভাবীকে বলবেন খাবার তুলে নিতে। এখন তিনি পেনশনে আছেন বয়সের ভারে দূর্বল গেছেন বেশী হাঁটতে পারেন না তবে আমাকে পেলে যেন ফিরে আসে তার তারণ্য। বিদায়ের সময় হাতে তুলে দিবেন পকেট খরচের জন্য কিছু টাকা। নিতে না চাইলেও দিবেন। এইটা হলো ভাইয়ের প্রতি ভালেবাসা।
বড় বোন ও একই রকম দেশে গেলে কি খাওয়াবেন এ জন্য ব্যাস্ত থাকেন। আসার সময় আমার জন্য না হলেও আমার সন্তানদের জন্য কিছু উপহার থাকবেই।
আমার বড় ভাতিজী মনি এবার দিলো ইসলামী একটি বই সেই সাথে ওর মেয়ের স্কুলের একটি ম্যাগাজিন সেই ম্যাগাজিনে ওর মেয়ে অর্থাৎ আমার নাতনী খুব ভালো ফলাফল করেছে তার ছবি সব ম্যাগাজিন। ছোট ভাতিজা এহসানুল আলম মৃধা মিঠু ইস্ট্যার্ন ব্যাংক লিমিটেড এর গুলশানের একটি শাখার ম্যানেজারের দায়িত্বে আছে। ও তুলে দিলো ব্যাংকের চাবির রিং, মানিব্যাগ সহ পুরো একটি সেট।
এছাড়া বড় ভাতিজা জাহাংগীর আলম মৃধা আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টস এর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ওর গাড়ী করে গ্রামের বাড়ী যাওয়া ও ঘুরে বেড়ানো। আমার নানা বাডী । নানা নানী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। মামা মামী ও মারা গেছেন। আছে দুই মামাতো ভাই তারা দুই জনই কুয়েত থাকেন অনেক বছর ধরে তবে আমি দেশে গেলে নানা নানী, মামা মামীর স্মৃতি বিজরিত বাড়ীটি দেখে আসি।মামাতো দুই ভাইয়ের বউ এবং তাদের ঘরের ছেলে মেয়েরাও আমাকে যথেস্ট আদর করেন। দেশে এলে তাদের সাথেও দেখা করি এবারও দেখা করেছি।এখনো আসার সময় গাছের ফল যখন যে ফল থাকে দিবেন। রাস্তায় এগিয়ে দিবেন।এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
সেই মেঝ ভাই এখন উমরাহ তে আছেন ছুটির কারনে তার সাথে দেখা হচ্ছে না তবে আমি নিশ্চিত আমার জন্য প্রাণ ভরে দোওয়া করবেন।
শাশুডী আছেন, দুই শালা আছে অর্থাৎ আমার স্ত্রীর ছোট দুই ভাই মেহবুবুর রহমান প্রিন্স ও ঝিল্লুর রহমান পরাগ দেখা যাবে বিদায়ের আগ মূহুর্তে তাদের গিফ্ট দিচ্ছেন।
তবে মেঝ বোন আমার মাথায় যখন উমরাহ হজ্জ্ব থেকে আনা টুপিটি মাথায় পরিয়ে দিলেন তখন মনে হলো আমার শ্রেস্ঠ উপহার। আমার মাথার তাজ। সম্প্রতি আমার মেঝ বোন, দুলাভাই, সাবেক শিক্ষক ইসহাক খান, ভাগিনা আবু সায়েম খান, ভাগিনা বউ ও সামেয়ের ছেলে মেয়ে একসাথে উমরাহ করে এসেছে। যখন উমরাহ গিয়েছিল তখন আমার সাথে ফোনে কথা হয়েছে কিন্তু আমার জন্য শ্রেস্ঠ উপহার আনবে সেটা জানতাম না। জমজমের পবিত্র পানি, আজওয়াজা খেজুর খাওয়ার পর যখন মেঝ বোন নিজ হাতে আমার মাথায় টুপিটি পরিয়ে দিলেন মনে হলো পৃথিবীর সব চেয়ে সেরা উপহারটি আজ আমি পেলাম। মনের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো। ভাইয়ের প্রতি বোনের এইটাই সেরা উপহার।
আমি আর আমার মেঝ বোন ২/৩ বছরের ছোটবড় হবো। ও ৪ নম্বার আর আমি ৫ নম্বার আমাদের পরিবারের। আমারা দুইজন ছোট বেলা থেকে বেশী সময় এক সাথে থেকেছি স্কুলে গিয়েছি। আম পেড়েছি। ছোট খাটো খুনটুসি তো ছিলোই। আমি সেক্রিফাইস করতাম এখনও করি। এই জন্য কখনো বড ঝগড়া হয় নাই। আমাদের ভাই বোনের মধ্যে আমরা কখনোই ঝগড়া দেখতে চাই না। সম্পদ নিয়ে মনোমালিন্য হলেও নিজেরাই বসে সমাধান করি বাইরের কাউকে নয়।অনেক স্মৃতি আছে। ওর বিয়ের পর আমি হয়তো বেশী কেঁদে ছিলাম। ও ভালো আছে ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক ভালো আছে।
আমার ছোট বোন নার্গিস গত কভিড-১৯ এ মারা গেছে। ওর স্বামী মিরপুরের বিশিস্ট ব্যাবসায় আব্দুল বারেক কিনি ও সম্প্রতি মারা গেছেন। দুই ভাগিনা আছে নাসির এবং শান্ত।ওদের সাথে আমি বেশী যোগাযোগ রাখি। আমার বোন না থাকলেও ভাগিনারা তো আছে। ওঁরাও বিয়ে করেছে ওদের ও সন্তান রয়েছে।ওরা ফলো আছে এই টাই সব চেয়ে বড় ।
আরো কয়েকটি দাওয়াৎ ছিলে কিন্তু অবরোধের কারনে যেতে পারছি না বলে দূঃক্ষিত। যে কয়েকটি কাজের উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এসেছিলাম তার ৮০% কাজ করতে পেরেছি এজন্য আল্লার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। ২/১ দিনের মধ্যেই আবার ফিরে যাচ্ছি কর্মস্থল লন্ডনে।
আমরা ৬ ভাইবোনের মধ্যে ৫ জন এখনো জীবিত আছি। আমরা প্রত্যেকেই সুপ্রতিস্ঠিত। আমাদের ভাইবোনের সম্পর্ক এখনো অটুট রয়েছে। যতদিন আছি ইন্সা আল্লাহ অটুট থাকবে।আপনারা দোওয়া করবেন যাতে আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ্য রাখেন। আমিন।