| |

মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের চেতনায়।(পর্ব-১)


মো: রেজাউল করিম মৃধা।

মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালী জাতীর সবচেয়ে বড় চেতনা,গর্বও অহংকার। এগর্বপ্রতিটি বাঙালীর এ স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের। আজ আমাদের চেতনা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবস এক দিনে আসে নাই, এর জন্য অনেক আন্দলন সংগ্রাম হয়েছে,রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলা ভাষা।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতীক তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক একটি দেশের জন্ম হয় , পূ্র্ব ও পশ্চিম দুটি প্রদেশ নিয়ে, দুপ্রদেশের আচার ব্যবহার , পোষাক পরিচ্ছদ,খাওয়া দাওয়া এমনকি সংস্কৃতি সবই ছিলো ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন ছিলই । ওদের ভাষা ছিল উর্ধ আর আমাদের বাংলা।আমরা ছিলাম সংখ্যা গরিষ্ঠ তার পর ও পশ্চিমা শাসক গোস্ঠী আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়।উর্ধকে রাস্ট্র ভাষা ঘোষনা দেয় , বাংলার দামাল ছেলেরা কিছুতেই এ দাবী মেনে নিতে পারে নাই।নিজেদের দাবী আদায়ের জন্য আন্দোলন, মিছিল মিটিং শুরু করে।

১৮ শতকের মধ্য ভাগ থেকেই বাংলাভাষা পেতে থাকে সর্বজনীন রুপ।লেখা হয় বাংলা ভাষায় কবিতা,গল্প,নাটক,গদ্য। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর , বজ্ঞিম চন্দ্র ,মাইকেল মধুসুদন দত্ত, কালি প্রসন্ন সিংহ, মোদন মোহন সহ ব্যয় করেছেন তাদের মেধা শক্তিকে।যত বার বাঁধা এসেছে ততবারই বাংলার কবি সাহিত্যিকের কলম গর্জে উঠেছে। এদের সাথে যোগ দিয়েছেন দেশের বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক,ছাত্র , শ্রমিকও সধারন জনতা।

১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি করাচীতে জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনে উর্ধকে পাকিস্তানের একমাত্র রাস্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব হয়। সাথে সাথে কুমিল্লা থেকে গন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন। তিনি বলেন”উর্ধর সাথে বাংলা ও হবে রাস্ট্র ভাষা “।কিন্তু লিয়াকত আলী খান, খাজা নিজামউদ্দিন বিরোধিতা করেন।

২রা মার্চ পাকিস্তান মুসলিমলীগ সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ফজলুল হক হলে এক সভার আহ্বান করে কমরুদ্দীনের সভাপতিত্বে রাস্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সর্বদলীয় পরিষদ গঠিত হয়। শুরু হয় আন্দোলন।

১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় কায়দা আজম মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঘোষনা করেন উর্ধই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাস্ট্রভাষা। এঘোষনার সাথে সাথে ছাত্র জনতা না না না ধ্বনি উচ্চরিত করতে থাকে।প্রচন্ড ক্ষেপে ফেটে পরে রাস্ট্রভাষা পরিষদ প্রদেশ ব্যাপী সাধারন ধর্মঘট কর্মসূচী গ্রহন করে।

পাকিস্থান সরকার ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী একমাস ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভজ্ঞ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক বিশাল মিছিল বের করে রাস্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগান দিয়ে গেইট অতিক্রম করে ১৪৪ ধারা ভাজ্ঞতে থাকে । এ সময় পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষহয় । ছাত্রদের শ্লোগানের মুখে পুলিশ বাহিনী গুলি ছুঁড়ে এতে শহীদ হন, রফিক, সফিক,সালাম,বরকত,জব্বার সহ অনেকে।ছাত্র জনতার কাছে পরাজিত হয় পাকিস্তানী শ্বাসক।

ভাষার জন্য বাঙালীর রক্তে লাল হয়ে যাওয়া রাজপথে নেমে আসে জনতার ঢল। চিহ্ন রাখেন ১৪৪ ধারার ১৯৫২র ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদদের রক্তের মাধ্যমে রাজনৈতিক আন্দোলন একাত্ব হয়ে উঠে।

ভাষা আন্দোলনের চেতনা থেকে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক চেতনার উম্মক্ত ঘটে।

বছর ঘুরে প্রকৃতির ধারায় ২১শে ফেব্রুয়ারি আসে আমাদের মাঝে,শোকে দু:খে ,

বেদনায় হাহাকার করে উঠে মন,

ফুটন্তরক্তে রাঙানো পলাশের লাল আভায়

ঝির ঝির বাতাসে ঝড় ঝড় পাতার

মড় মড় শব্দে ধ্বনিত হতে থাকে

সেই অমর একুশের গান।

যতদিন কবে বাঙালী জাতি গড়াব্ পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, মধুমতি, কংস গড়াই ধ্বলেশ্বরী সুরমা ততদিন বেঁচে থাকবে পৃথিবীর বুকে অ, আ, ক, খ বর্নমালা।

ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এক মাত্র বাঙালী জাতি । রক্তের বিনিময়ে আমাদের এ মাতৃভাষা।আমরা বীরের জাতি, সংগ্রামী ও স্বধীন জাতি। শ্রদ্ধার স্মরন করি সেই সব বীর শহীদদের ।তাদের আত্ত্বত্যাগ আমাদের প্রেরনা যোগায়।চেতনায় হই উদ্বুদ্ধ।

আমাদের চেতনায় হোক ২১শে ফেব্রুয়ারি ।

(চলবে)।


Similar Posts