প্রবাসী মুক্তিযাদ্ধা হিসেবে ব্রিটেনের ১২ জনের নাম গ্রেজেটে প্রকাশ।তবে প্রবাসীদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মো: রেজাউল করিম মৃধা।
বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামে বাংলাদেশের বাইরে ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকা ছিলো অনন্য অবদান।বিশ্ব জনমত গঠন, ফান্ড সংগ্রহ করা, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ জমা দেওয়া সব মিছিল মিটিং করে বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশের তৎকালীন অবস্থান তুলে ধরতে বিশাল ভূমিকা রেখেছেন।
সেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসে বিশ্ব জনমত গঠনে ভূমিকা রাখায় দেশের বিশিষ্ট ১২ ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিগ্রই তাদের নামে গেজেট জারি করা হবে। গেজেট জারির পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকার নির্ধারিত প্রাপ্য সম্মানী ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পাবেন।
এদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চললেও দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে ভূমিকা পালনকারীদের এখনও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বিশিষ্টজন বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসে কাজ করা ব্যক্তিদের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ভূমিকা পালনকারীদেরও স্বীকৃতির আওতায় আনতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য ২০১৮ সালে যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে দেশের অভ্যন্তরে সংগঠকের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়।
গত ৩১ মে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) এক সভার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এতে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করায় ওই ১২ জনকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।
প্রবাসী মুক্তিযাদ্ধা হিসেবে তালিকা:-
১/বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি বরিশাল সদরের সুলতান মাহমুদ শরীফ,
২/ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সন্তান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক,
৩/ আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক,
৪/ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক,
৫/ দৈনিক মানবকণ্ঠের সাবেক সম্পাদক সদ্য প্রয়াত জাকারিয়া চৌধুরী,
৬/ সাবেক রাষ্ট্রদূত রাজিউল হাসান,
৭/ বিশিষ্ট গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ চৌধুরী,
৮/ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের অন্যতম সহসভাপতি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সন্তান সৈয়দ মোজাম্মেল আলী,
৯/ পাট ও পাটজাত দ্রব্য ব্যবসায়ী আবুল খায়ের নজরুল ইসলাম,
১০/ যুক্তরাজ্যের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট সিলেটের অম্বরখানার সন্তান মাহমুদ আব্দুর রউফ,
১১/ সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী (কায়সার) ও
১২/ হবিগঞ্জ জেলা আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর আফরাজ আফগান চৌধুরী।
সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং পাকিস্তানি গণহত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তারা তৎকালীন যুক্তরাজ্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদেরও সদস্য ছিলেন।
তবে এই তালিকায় প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ব্রিটেন প্রবাসীদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।অনেকেই মনে করেন এই ১২ জন ছাড়াও আরো অনেক প্রবাসী মুক্তিযাদ্ধা আছেন তাদের কে অন্তরভূক্ত করা হয় নাই। অনেকেই মনে করেন প্রবাসী মুক্তিযাদ্ধা তালিকা করার পূর্বে ব্যাপক প্রচার করা হয় নাই।এ জন্য অনেকেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অনেকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকা সত্বেও প্রবাসী মুক্তিযাদ্ধা হিসেবে তালিকা ভুক্ত হতে পারেননি।
সরকারের কাছে প্রবীসদের আবেদন হলো ১৯৭১ সালে ব্রিটেনে ৩৩টি অ্যাকশন কমিটি ছিল এবং প্রত্যেক কমিটিতে ৭ থেকে ২১জনকরে কার্যকরি সদস্য ছিলেন। প্রবাসী সবাইকে না দিলেও বরং এই ৩৩টি অ্যাকশন কমিটির কর্মকর্তাদের যদি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করা হয় তা হলেই সকল প্রবাসীর প্রতি যেমন সুবিচার করা হবে, সম্মান জানানো হবে, তেমনি এ নিয়ে বিভ্রান্তিরও অবসান হবে।