করোনা এবং আমার যাপিত জীবন। (পর্ব-৮)

Corona Diary

রমজান মাস আমার জন্য এক ধর্য ও পরিশ্রমের
করেনাভাইরাসের মাঝেই শুরু হলো রমজান মাস।রমজান মাসের পূর্বেই কিছু পরিকল্পনা নিয়েছিলাম।
যেমন : কোরআন শরীফ খতম,
: লেখা লেখি করা,
: ঘরে ইফতার করা,
: দানের পরিমান বৃদ্ধি করা,
: আত্বীয় স্বজন দের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো,
: এবং সাবধানের সাথে দায়িত্ব পালন করা।
আসলে রমজান মাস এতো যে বরকত, রহমত অন্য কোন মাসে নেই। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। সকাল থেকে রাত অবধি বিরামহীন কাজ একের পর এক চলছে। এ হয়তো অন্য কোন মাসে মোটেই সম্ভব নয়। একটি মিনিটের জন্য আমি পিছুপা হইনাই। আর আল্লাহ আমার সব গুলি কাজ কে সুন্দর এবং স্বার্থক ভাবে করার জন্য তৌফিক দিয়েছেন।
দিনের শুরুটাও আমি এই ভাবে করেছি।
১/সেহেরী খেতে উঠেই হাতমুখ ধোওয়ার সাথে অজু করে নিয়েছি। খেতে বসার আগেই চট করে দুই অথবা চার রাকাত তাহাজ্জ্বত নামাজ পড়ে নিয়েছি।
২/ সেহেরী খাওয়া শেষে , সুরা ইয়াসিন ও সুরা আর রহমান তেলোওয়াত করতে করতে ফজরের নামাজের সময় হলে , ফজর নামাজ পড়েই বেডে গিয়ে ঘুম। কোন দিন সকাল সারে আটটা কি নয়টায় ঘুম ভেজ্ঞে গেলে অজু করে কোরআন তেলোয়াত শুরু এক টানা সারে বারোটা বা জহুরের নামাজের আগ পর্যন্ত।
৩/ জহুরের নামাজের পর ডিউটি শুরু । কোন দিন জুবায়ের ভাই, কোন দিন তানভির ভাই, একদিন ফারহান ভাইর সাথে । এর মাঝে আবার আহাদ ভাইকে অফিসে দিয়ে আসতে হবে।
৪/ বিকেলে শাকিল ভাইকে অথবা তানজিনা ভাবিকে তাদের বাসা থেকে নিতে হবে নিউজ শেষ হলে আবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে , ইফতারের বাসায় এসে পরিবারের সবার সাথে ইফতার করা।
৫/ এদের অফিসে নামিয়ে দিয়ে গাড়িতে বসে বসে লেখা লেখি করা। অথবা দিনের যখনই সময় পেতাম কোন আড্ডা বা গল্প না করে লেখা লেখি করা। অনেকেই দেখে মনে করতো আমি বুঝি ফেইসবুক নিয়ে বসে আছি। কিন্তু না আমি রামজান মাসটিকে অন্য ভাবে সাজিয়েছি।
৬/ কাজের ফাঁকেই অথবা সকালে কোরআন শরীফ এক ঘন্টা কম পড়ে বাজার সদাই করেছি। যেহেতু সাপ্তাহিক কোন ছুটি নেই, তাই সব কিছুই সময় মেনেজ করেই করতে হয়েছে।
৭/ ছেলে ও দুই মেয়ের অন লাইন লেখা পড়ার ব্যাবস্থা এমন কি ছোট মেয়ের অন লাইনে আরবী পড়ার ব্যাবস্থা করতে হয়েছে।
৮/ ঘরে বসেই ফোনের মাধ্যমে দেশে জাকাত ফাতরার টাকা পাঠাতে হয়েছে।
৯/ কাপড়ের দোকান গুলি বন্ধ থাকায় এবার ঈদের পোষাকের জন্য বাড়তি খরচও নেই । পুরাতন কাপড দিয়েই এবারের ঈদ উৎযাপন। এক ভিন্ন রকমের আনন্দ।
১০/ প্রতিদিন সন্ধায় ইফতার শেষে মাগরেব জামাতেআদায় আমিই ইমাম সেই সাথে নিজে নিজে তারাবিহ নামাআদায় করছি পুরোপুরি পুরো রমজান মাস জুরে।
১১/ ঘরেই পরিবারের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করলাম। এই প্রথম ঈদের নামাজে ইমামের দায়িত্ব পালন করলাম । এই ঈদ স্বর্নীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
প্রথম প্রথম ভেবে ছিলাম কোরআন শরীফ খতম দেওয়া হয়তো কস্ট হবে। হয়তো বা শেষ করতে পারবোনা। আমার স্ত্রী সবসময় পিছনের কথা আগে ভাবেন এবং পিছনের কথা ধরার জন্য পটু। দুই একবার বলেছে ,”তোমার পড়া পুরোপুরি শুদ্ধ হচ্ছেনা”।
আমি বলেছি ,”আল্লাহ মাফ করবেন”। আল্লাহ উপর ভরসা রেখেই কোরআন শরীফ পড়া শুরু। মাঝে মধ্যে আমার ছেলে এহসানুল এর সহযোগিতা নিয়েছি । কেননা সেই ছোট বেলায় কায়দা, ছিপারা পড়েছিলাম দীর্ঘ দিন পড়া হয়নাই । শুধু মাত্র নামাজের সুরা গুলিই পড়ে নামাজ পড়া হতো। এবা রমজানে কোরআন শরীফ করার সাহস আল্লাহই দিয়েছেন এবং ২৬ রোজায় খতম করেছি । ভুলত্রুটি আল্লাহই মাফ করে কবুল করে নিবেন।আমিন।
৩০টি রোজা রাখার শক্তি ও সমর্থ আল্লাহ দিয়েছেন, তাই শত ব্যাস্ততার মাঝেও রোজা রেখে নামাজ গুলি পড়ার তৌফিক আল্লাহ দিয়েছেন। রোজার মধ্যেই বাসার পিছনের ছোট্ট গার্ডেনেও কাজ করতে হয়েছে। গার্ডেন পরিস্কার করা, মাটি এনে , গাছের চারা এনে গাছ লাগানো । সব গাছের চারা বাঁচলেও কদু গাছের চারা নিয়ে এক মহা বিপাকে আছি। প্রথমে এনে লাগালাম একটু বড় হলো কিন্তু এক রাতেই সামুকে খেঁয়ে ফেললো , আবার এনে লাগালাম এক সাথে ৬টি এর মাঝ থেকেও একটিকে সামুক খেয়ে ফলছে। সামুক মারার ঔষধ দিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি এর পর পাশের দোকানদার বললেন, “গাছের একটু দূর দিয়ে লবন দিতে তাতেও তেমন কাজ হয়নি। এর মাঝে ও একটি চারা খেয়ে ফেলেছে। যত খাওয়া যত অত্যাচার শুধুই লাউ গাছের উপর দুএক দিন আগে হয়তো শিয়াল ডুকেছিল গার্ডেনে সমস্ত গাছ গুলিকে এলো পাথারি করে গেছে। তারপরও যে গুলি আছে , সে গাছ গুলির যত্ন নেওয়া হচ্ছে।
আশায় আশায় বুক বেঁধে আছি।
নিজের হাতে লাগানো গাছের
সব্জি , টমেটো, পুইঁ শাক, কাঁচা মরিচ,
মিস্টি কুমড়া ।
আর যদি ধরে লাউ, তবে যেন শান্তির শেষ নেই।
সে হবে মহা আনন্দের।লাউ দিয়ে ভাত খাওয়া এবং সাথে হব তৃপ্তির ঢেঁকুর ।


Similar Posts