করোনা এবং আমার যাপিত জীবন।(পর্ব-১)

করোনাভাইরস এক আতংকের নাম।যার ভয়ে সারা বিশ্ব কম্পিত। ঘর বন্দি হয়েও শেষ রক্ষা হয় নাই জীবন দিতে হয়েছে দুই লাখের ও বেশী মানুষের।
গত ডিসেম্বর চীনের উহান থেকে উৎপত্তি হয়ে ছড়িয়ে পরে সারা বিশ্বে। জীবন বাঁচাতে এক এক করে বিছিন্ন হতে থাকে প্রতিটি দেশ। প্রথম সকল ফ্লাইট বন্দ করে এর পর প্রতিটি দেশ তাদের মত করে লক ডাউন দিতে থাকে। মানুষ কে বাধ্য হয়ে গৃহ বন্ধি হতে হয়।
বন্ধ হয় স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিস্টান, অফিস আদালত। শুধু মাত্র হাসপাতাল আর নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের দোকান।
ব্রিটেন ও সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সরাসরি লক ডাউন না বলে স্টে হোম বলে ঘোষনা দেন ২০২০ এ বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি।
সেই সাথে ব্রিটেনের প্রায় সবাই গৃহ বন্ধি হলেও শুধু মাত্র কী ওয়ারকার রা কাজে করে যাচ্ছেন তাদেরই মধ্যে আমরা ও পরে গেলাম। এক জন সংবাদ কর্মী হিসেবে।এক জন কী ওয়ার্কার হিসেবে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অফিসে চলছে আলোচনা সমালোচনা। ম্যানেজমেন্ট মিটিং করছেন একের পর এক। কি হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত, আমরা সবাই সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এর মধ্যে দুই একজন অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়ে নিজ ঘরে আইসোলেশনে চলে গেলেন। যারা নিজ ইচ্ছাতেই ঘরে গেলেন তারা এখন পর্যন্ত আর অফিসে আসেন নাই। অবশ্য ঘরে বসেই অনেকে নিউজে বা চ্যারিটিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
কিন্তু আমরা যারা সাহস করে অফিসে এসে কাজ করতে চাই। তাদের কে কিভাবে কাজ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত গুলি অফিস ম্যানেজমেন্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে ।কেউ কেউ পার্টটাইম, আবার কেউ কেউ ফুল টাইম। অনেক কে আবার চ্যানেল এস অফিসের উপরের তলায় থাকার ব্যাবস্থা করা হলো।
আমাদের নিউজ সাথে যারা করি মোটামুটি সবাই পার্টটাইমে চলে গেল।নিউজকে একেবারে বন্ধ করার মতো অবস্থা কোন রকম নিউজ চলবে। ইন হাউজ কোন প্যাকেজ নাই। নিউজ ডেস্ক চলে গেল যার যার বাসায়। দুদিন নিউজ প্রেজেন্টার ও নেই ঘরে বসেই নিউজ পড়লেন অনেকটা রেডিওর মত।
করোনাভাইরস ভয় আমাদের সবার মাঝে।তবে আমরা দুএকজন সামনে থেকেই কাজ করতে চাই।
সেই দু এক জন সাহসীদের মধ্যে আমিও রয়ে গেলাম। প্রতি দিনই নতুন পরিস্থিতি করোনার নতুন আপডেট তেমনি আমাদের অফিসেও প্রতি দিন আপডেট হচ্ছে। করোনায় সরকারী ঘোষনার আগে থেকেই ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কে বাসা থেকে কাজ করবেন? কে পার্টটাইম? কে ফুল টাইম? কে অফিসে থাকবেন? কে থাকবেন না?এ সিদ্ধান্ত গুলি মুটামুটি চুরান্ত করে ফেলেছেন। এর পর অপেক্ষা সরকারী ঘোষনা।
সরকারী ঘোষনার আগেই সিদ্ধান্ত গুলি নেওয়া হচ্ছে , তবে কারো কথা কেউ বলেন না। সবাই যেন নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত। কারোতো কিছু বলার নেই অফিসের সিদ্ধান্তই চুরান্ত।আমরা বুঝতে পারলেও কেউ মুখ খলতে রাজি না। তবে অফিসের একটা সিদ্ধান্ত যে কম লোক দিয়ে কাজ করতে হবে। বেশী লোক আসা যাওয়া করাটা চলবে না।
সবাই সাবধানে চলাফেরা করা শুরু করলেন।
আমরা যারা কাজ করি আমাদের কে ম্যানেজমেন্ট থেকে সরাসরি, চ্যানেল এস এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাজ চৌধুরী বলেন না। আমাদের সিদ্ধান্ত গুলি প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান কে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের নিউজ ডিপার্টমেন্টের হেড অফ নিউজ কামাল মেহেদী ভাই বাসায় আইসোলেশনে চলে গেছেন। তাই আমাদের সিদ্ধন্ত গুলিও জানিয়ে দিচ্ছেন। হেড অফ প্রোগ্রাম ফারহান মাসুদ খাঁন।
যে যার মত ।সবাই সবাইকে নিয়ে চিন্তিত। আমি এ এর ব্যাতিক্র নই। চিন্তা দু:স্চিন্তা দুটোই আছে। অফিসে সব সময় একটা থমথমে ভাব।নিউজ যেহেতু নাই তাই আমাকেও বাসায় থাকতে হবে। এটা মনে মনে স্থির করে ফেলেছি। তবে হতাশ নই।এই মহামারি , মহা দূর্যোগে হতাশ হতে নেই। মনে সাহস রাখতে হয়।
অবশ্য সবার সিদ্ধান্তই জানানো হয়েছে। ফারহান ভাই কি বলবেন? সেটার অপেক্ষা আছি।প্রায় প্রতি দিন অফিসে আসি যাই কিন্তু কিছুই বলেন না আমি জিগ্গাসা করি না। অফিসে আসছি কাজ করেছি প্রতি দিন। এর মধ্যে সবার সিদ্ধান্ত সবাই জেনে গেছেন।
আমাকে নিয়ে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে ? সেটা ফারহান ভাই বলছেন না। সরকারী স্টে হোম ঘোষনার আগের দিন ফারহান ভাইর রুমে ডেকে নিলেন। সমগ্র পরিকল্পনা বললেন। পরিস্থিতি তো আমি ও কমবেশী জানি। সরাসরি না বলে একটু ব্যাখ্যা দিয়েই কথা বলেন ফারহান ভাই।
তিনি বললেন,” এখন নিউজ আপাতত কাজ কম হবে। তবে আপনাকে প্রতি দিনই কাজ করতে হবে”।সবার যেখানে কাজ কমে যাচ্ছে আমার বেলায় হলো উলটো। আমি বললাম ,” একটু সময় দিন , আমার স্ত্রী থেকে অনুমতি নিয়ে নেই”। বাসায় ফোন করে বললাম । “এখন আমাকে প্রতি দিনই কাজ করতে হবে”। আমার স্ত্রী ফোন পেয়ে থমকে গেলেন মনে হলো ।একটু দম নিয়েই অনুমতি দিলেন।
লক ডাউনে সবাই যেখানে ঘরে বন্ধি সেখানে আমার কাজ বেরে গেল। কেননা ড্রাইভিং করি। যে কোন সময় নিউজের যে কাউকে আনা নেওয়া করতে হতে পারে। এর মাঝে দু একদিন ঘরে বসে নিউজ করে করা হলো, সেই সাথে ঘরে বসে নিউজ প্রজেন্টার নিউজ পড়েন কিন্তু কারোই মনোপ্রতো হয় নাই।টিভি স্কিনে ফেইজ না থাকলে কি আর মানায়?
সেই চিরাচরিত উক্তি
“ বনের রাজা সিংহ বনে সুন্দর,
শিশু মায়ের কোলে”।
করোনারভাইরাসের ভয়ে , অফিসে আমাদের অনেকের অফিসে আসা যাওয়া ছেড়ে দিলেন।
সেই সাথে রিপোর্টার এবং নিউজ প্রজেন্টাররা।চিফ রিপোর্টার মোহাম্মদ জোবাইর ভাই চ্যারিটি রিলেটেট নিউজ শুরু করলেন । ফরেন এফিয়ার্স এডিটর তানভির আহম্মেদ ভাই করোনাভাইরসের আক্রান্ত দের নিয়ে নিউজ শুরু করলেন। ফিরে পেতে লাগলো নিউজের প্রাণ।
যে সব নিউজ প্রেজেন্টারের গাড়ী আছে তিনি এসে নিউজ পড়তে শুরু করলেন। তার মধ্যে রুপি আমিন আপা তার নির্ধারিত দিন মংগলবার নিয়মিত নিউজ পড়তে শুরু করলেন। জাকিয়া রেজোয়ানা আনোয়ার জাকি আপা মাঝে মধ্যে আসেন আবার আসেন না । তানজিনা নুরী সিদ্দীকি তানজিনা ভাবী নিয়মিত আসা শুরু করলেন, হিমিকা আজাদ ভয় পেয়ে প্রথম দিকে না আসলেও যখন দেখেন মোটামুটি সবাই আসেন তখন সে ও আসা শুরু করলেন। যে দিন কেউ আসবেন না সে দিনের জন্য সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার তৌহিদ শাকিল ভাই আসেন।
এই করোনাভাইরস মহামারিতে চ্যানেল এস এর বেশী নিউজ পড়েছেন। শাকিল ভাই। শাকিল ভাই এবং তানজিনা ভাবাকে অফিসে নেওয়া আনার বাড়তি দায়িত্বটা পড়লো আমার উপর করোনার কারনে কেউ পাবলিক ট্রান্পোর্ট ব্যাবহার করবেন না। আগেই বলেছি আমার সাপ্তাহিক ছুটি নেই। এর মাঝে ও প্রোগ্রাম প্রডিউসার আহাদ আহমেদ ভাইকে শুধু অফিসে নামিয়ে দেওয়া এবং মাঝে মধ্যে কল সেন্টারের লোক কে অফিসে আনা। চলছে বিরামহীন ভাবে করোনাভাইরস মহামারিতে চলছে আমার দায়িত্ব পালন।